প্রচ্ছদ

রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক শাহ নেছার আলীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

  |  ০৮:১০, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
www.adarshabarta.com
তাজ উদ্দিন আহমদ:
আজ ৩রা ফেব্রুয়ারি আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক শাহ নেছারআলী স্যারের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে আদর্শ এই শিক্ষক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন —)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
হযরত শাহজালাল(রঃ) ও শাহপরান (রঃ) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি ধন্য পূণ্যভূমি খ্যাত সিলেটের আলোকিত জনপদ, বিশ্বনাথ উপজেলার ধর্মদা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পীর বাড়ীতে ১৯৪০ সালের ১২ই জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন জনাব শাহ নেছার আলী। তাঁর পিতা ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সুফি-সাধক মরহুম শাহ মবশ্বির আলী এবং মাতার নাম ছিল জনাবা জয়তুন নেছা খাতুন। জনাব নেছার আলী নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ধর্মদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করে ১৯৫৩ সালে স্থানীয় রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে মেট্রিক পাশ করেন।
পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৩ সালে বি এ পাশ করেন। অতপর জনাব শাহ নেছার আলী কর্ম জীবন শুরু করেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথমে বালাগঞ্জ উপজেলার কুরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
দুই বছর সেখানে শিক্ষকতা করার পর ১৯৬৬ সালে তিনি তাঁর নিজ বিদ্যাপীঠ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু তিনি তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সহিত পালন করেন। স্কুলে তিনি সাধারণত বাংলা ও ইতিহাস বিষয়ে পাঠ দান করতেন, কিন্তু মাঝেমধ্যে এ দু’টি বিষয় ছাড়াও ইংরেজী সহ অন্যান্য বিষয়ের উপরও ক্লাস নিতেন।
জাতি ও সভ্যতার সেরা কারিগর হলেন শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষক একজন ক্লান্ত সৈনিক ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী যিনি সমাজের সবচেয়ে বড় নির্মাতা। অনেক শিক্ষক হাজার কষ্টের মধ্যেও হাসি মুখে শ্রম দেন শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে কিংবা স্বপ্ন পূরণে অনুপ্রেরণা জোগাতে। একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভিতরের নিভু নিভু বাতিকে জ্বালিয়ে দেন, স্বপ্ন দেখতে শেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ বাতলে দেন,সত্যকে সত্য ও মিথ্যা কে মিথ্যা বলতে শেখান, দিবা নিশির পার্থক্য বুঝাতে শেখান। একজন আদর্শ শিক্ষক জ্ঞান সাধনায় মশগুল একজন সাধক, যিনি অর্থ সম্পদ ও প্রাচুর্যতার মোহে স্বার্থপর হন না, যিনি নীতি ও বোধের ধারক ও বাহক, যিনি সূর্য হয়ে আলো দেন, বট বৃক্ষ হয়ে ছায়া দেন ,যার এক চোখ শাসন আর অপর চোখ স্নেহের ছবি আঁকে। আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন শাহ নেছার আলী স্যার ছিলেন ঠিক তেমনই সর্ব গুণে গুণান্বিত একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ মানুষ। স্যার চলাফেরা করতেন তাঁর নিজস্ব ধ্যান ধারণায়। তিনি কাউকে অনুকরণ কিংবা অনুসরণ করতেন না। আর এটিই ছিল স্যারের বিশেষত্ব।
তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী কিন্তু অত্যন্ত রসিক, চলাফেরায় ছিল ধীর গতি, কারো সাথে শত্রুতা নয় সভার সাথে বন্ধুত্ব ভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, তাঁর কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, চলাফেরা সবই ছিল সত্যিকারের একজন পীরের মত।
তাঁর পোশাকে- আশাকে ও কোন বৈচিত্র ছিল না। অত্যন্ত সাদাসিদে ভাবে তিনি চলা ফেরা করতেন। কখনও হারাম তাঁকে স্পষ্ট করতে পারেনি এবং কোন অবস্থাতেই তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হওয়ার সুবাদে পাঁচ বছর স্যারের মত একজন সাদামনের মানুষকে সরাসরি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। স্কুল থেকে পাশ করে বের হবার পরও ছাত্রের অধিকারে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্যারের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। যখনই স্যারের সান্নিধ্য লাভ করতাম তখনই স্যার কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর স্যারের ছাত্রদের কারো কোন সুসংবাদ শোনলে অত্যন্ত খুঁশি হতেন আবার কারো কোন দুঃসংবাদে তিনি অত্যধিক মর্মাহত হতেন। ছাত্রদের নিয়ে স্যারের খুব গর্ববোধ ছিল। কোন ছাত্র ,শিক্ষক এমনকি এলাকার কোন মানুষ সম্পর্কে স্যারের মুখ থেকে কোন খারাপ মন্তব্য কোনদিন শুনিনি। স্যার ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, একজন ন্যায় বিচারক। দীর্ঘদিন তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিকে লালন করতেন কিন্তু অত্যন্ত খোদা ভীরু ছিলেন এবং সর্বাবস্থায় ধর্মীয় অনুভূতিকে সবার উপরে স্থান দিতেন। একজন সত্যিকারের মুসলিম কিংবা একজন আদর্শ মানুষের যে গুণাবলী থাকা দরকার আমার বিশ্বাস স্যারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তার সবগুলোই ছিল।
আজকের এই দিনে স্যারের ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী তে আমি রাব্বে করিম, পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের কাছে তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। হে গাফফার এই সজ্জন, নিরহংকার, পরহেজগার মানুষটিকে মাফ করে দিন। হে মহান আল্লাহ, রাহমানুর রাহিম এই কর্মবীর ও ভাল মানুষটিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন, ইয়া রাব্বাল আ’লামিন!