প্রচ্ছদ

তিনজন কিংবদন্তি সমাজ সংস্কারকের মৃত্যু : সমাজের অপূরনীয় ক্ষতি !!

  |  ০৩:২৯, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
www.adarshabarta.com

মো. ইকবাল হোসেন:

মরহুম আলহাজ্ব শেখ মখন মিয়া চেয়ারম্যান,মরহুম আব্দুল মালিক চেয়ারম্যান ও মরহুম হাবিব হোসেন চেয়ারম্যান মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে দুনিয়া থেকে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে রাজনীতি,শিক্ষা,সামাজিক ও ব্যবসা- বানিজ্যের ক্ষেত্রে সফলতার মাধ্যমে নিজেদেরকে তুলে ধরেছেন। তাঁদের কর্মের স্বাক্ষর সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তুলে ধরার ধারাবাহিক প্রয়াস ছিল অভাবনীয়! যার ফলে সমাজ তাঁদের কর্মময় জীবন থেকে পাওয়া সুফলগুলো অনন্তকাল মনে রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

মরহুম শেখ মখন মিয়া ছিলেন মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান,ছিলেন ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের অবিসংবাদিত নেতা,সমাজে শান্তি- শৃংঙ্খলা বজায়ে রেখেছেন অনবদ্য অবদান।
সমাজের মানুষের যেকোন সমস্যায় দ্রুত ছুটে গিয়েছেন;করেছেন বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান। এক্ষেত্রে বিষয়টি হোক বড় অথবা ছোট। তাঁর মতো লোক সেখানে পৌঁছে গেলেই সমাধান আসা করাই যেত।

মরহুম আব্দুল মালিক ছিলেন সিলাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ,শিক্ষানুরাগী,ব্যবসায়ী ও একজন দক্ষ শালিসী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। অত্যন্ত চৌকশ ও দূরদর্শী একজন শালিস বিচারক হিসেবে সিলেট জুড়ে তাঁর পরিচিতি ছিল। শুধু তাই নয় চেয়ারম্যান আব্দুল মালিকের পিতা মরহুম নছির মিয়া ছিলেন সিলাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। যিনি প্রায় ২৫ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পরিচালনা করেছেন।একজন ন্যায় বিচারক,দক্ষ শালিসী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গোটা সিলেট জুড়ে তাঁর সুনাম সু-খ্যাতি ছিল।
তাঁরই সুযোগ্য ছেলে চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক শিক্ষার প্রসারে ও এলাকার শান্তি শৃংঙ্খলা বজায়ে রেখেছেন যুগান্তকারী অবদান।
যেখানেই সমস্যার সৃষ্টি হতো সেখানেই খবর পেয়ে মালিক মিয়া ছুটে যেতেন। মালিক চেয়ারম্যান এবং মখন চেয়ারম্যান যেকোন সৃষ্ট বিরোধে কোনভাবেই উপস্থিত হলে মানুষ তাঁদের উপস্থিতির দোহাই দিয়ে ঝগড়ারত উভয় পক্ষকে খুব সহজেই নিভৃত করতেন। এরপর তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতা নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দিতেন।

মরহুম হাবিব হোসেন ছিলেন বরইকান্দি ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান,শিক্ষানুরাগী,একজন সফল ব্যবসায়ী এবং ছিলেন একজন শালিস বিচারক।
তাঁর বড় ভাই মরহুম আকলম হোসেন এবং গোলাম হোসেন। তাঁরা দুজনই বেশির ভাগ সময় সমাজে বিশৃংঙ্খলা নিরসনে মখন মিয়া চেয়ারম্যান ও মালিক চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে যেকোন সৃষ্ট বিরোধ মিমাংসায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন। হাবিব হোসেনের কাছে গেলে তিনি তাঁর বড় ভাইদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাঁদের ভূমিকাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতেন বলে ভাইদেরকে অনুরোধ করে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তিতে পাঠাতেন। তাছাড়া তাঁদেরকে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের পাশে ছায়ার মতো থেকে সাহস যোগাতেন।

যদিও এই তিনজন সমাজ হিতৈষীর বর্নাঢ্য জীবনের কথা অল্প লিখায় তুলে ধরা সম্ভব নয় তবুও স্মৃতির পাতা থেকে কিঞ্চিত চেষ্টা করেছি মাত্র। সমাজ সংস্কারে তাঁদের বহুমাত্রিক অবদানের কথা যদি বিস্তর আলোচনা করা যায় তাহলে আজকের নিবন্ধটি ৪/৫ পাতায়ও শেষ হবেনা।

প্রবাস জীবনে খুব বেশি অবসর সময় পাওয়া যায়না। তারপরও নিজের আবেগ-অনুভূতি,দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের জায়গা থেকে যেটুকুই লিখেছি তা কর্মস্থলে যাওয়া আসার সময় বাসে কিংবা ট্রেনে বসে।

যাইহোক,বর্তমান প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ সহ সকলের কাছে আমার একটি অনুরোধ,এই তিনজন কর্মবীরের দীর্ঘদিনের কাজের কথা মাথায় রেখে সমাজের মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি সহ যেকোন সামাজিক অসংগতি মোকাবিলায় যদি যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমতো ভূমিকা পালন করে বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান করে দেন এবং নিঃস্বার্থভাবে সমাজে শান্তি শৃংঙ্খলা বজায়ে কাজ করেন তবেই তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

একজন কনিষ্ঠতম জনপ্রতিনিধি হয়ে সিলাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁদের সাথে সহকর্মী হয়ে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভা সহ নানা পর্যায়ে কাজ করার এবং একত্রে বসার সুযোগ হয়েছিল। তাই তাঁদের তিনজনকেই খুব কাছে থেকে জানার এবং দেখার সুযোগ হয়েছিল। তাঁরা তিনজনই নিজ নিজ কর্মগুণে আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন অনেক অনেক দিন।

মাত্র অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দুনিয়া ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়া আমাদের সমাজে যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়! আমি মনে করি সমাজে ভালো কাজ করলে ভবিষ্যতে আপনাকে/আমাকে কেউনা কেউ মনে রাখবে। আপনি/আমি মারা যাওয়ার পর আমাদের জন্য মহান রবের দরবারে মানুষ দোয়া করবে। ভালো কাজগুলোর জন্য মানুষের মুখে মুখে আপনার নাম জাগ্রত থাকবে।পরবর্তী প্রজন্ম আপনার/আমার রেখে যাওয়া কর্মের জন্য গর্ববোধ করবে।সমাজে ভাল কাজের মাধ্যমে গুণিজনের জন্ম হয়।গুণিজন মরে গিয়েও বেচেঁ থাকেন মানুষের হৃদয় গহীনে।
তাই আসুন আমরা সকলে সমাজের জন্য কাজ করি। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াই,সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। যে সমস্যাই হোক, নিঃস্বার্থভাবে সমাধান করে দেই।এভাবে সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে কাজ করি।
তবেই আপনার আমার আশেপাশের মানুষ,সমাজ এবং দেশ উপকৃত হবে।
আজ উল্লেখিত গুণী ব্যক্তিগন এবং সমাজ হিতৈষী যে সকল ব্যক্তিবর্গ সমাজের কাজ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আমি বিশ্বাস করি সময়ের ব্যবধানে কেউ না কেউ তাঁদের জায়গাগুলো পূরণ করবেন এবং সমাজের মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে নিজেদের আরো বেশি করে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবেন।

পরিশেষে দয়াময় আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি,হে রাব্বুল আল আমিন সকলের পক্ষ থেকে আজ আমার একটাই আবেদন মাবুদ! এই তিনজন কিংবদন্তি সমাজ সংস্কারক ও গুণী ব্যক্তিদের জীবনের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন এবং দুনিয়ার জীবনের মতো পরকালেও তাঁদেরকে সম্মানিত করুন-আমিন।

স্মৃতিচারণে…

মো ইকবাল হোসেন

সাবেক চেয়ারম্যান, ৫নং সিলাম ইউনিয়ন পরিষদ, দক্ষিণ সুরমা,সিলেট।
বর্তমান কানাডা প্রবাসী।