প্রচ্ছদ

প্রবাসীর চোখেঃ প্রিয় সিলেট-এক

  |  ০১:২৯, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
www.adarshabarta.com

 

হাসনাত মুহ. আনোয়ার


সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ল্যান্ডমার্ক বা প্রতীক হলো তিনটি। প্রথমটি হলো-হযরত শাহজালাল (রহ.)র মাজার যা সিলেটে এক শব্দে দরগাহ বলেই পরিচিত। দ্বিতীয় প্রতীকটি হচ্ছে- ক্বীন ব্রিজ। সিলেটে এটি চাঁদনী ঘাটের পুল বলেই পরিচিত।তৃতীয়টি হলো- সুরমা নদীর পারে ক্বীন ব্রীজের পাশে অবস্থিত ঘড়িঘর বা আলী আমজদের ঘড়ি। এই তিনটিই সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। অবশ্য সিলেটের আরও একটি জনপ্রিয় প্রতীক বা ল্যান্ডমার্ক রয়েছে, তা হলো- দুটি পাতা, একটি কুঁড়ি। এ তিন বা চারটি প্রতীকের সূত্র ধরে সিলেটকে আরও বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গীদের সম্মানে- সিলেট তিন শ ষাট আউলিয়ার দেশ নামে পরিচিতি পেয়েছে।প্রধানতঃ এ অর্থেই সিলেটকে বলা হয় বাংলার আধ্যাত্মিক রাজধানী। সিলেট দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ বলেও পরিচিত। ক্যামেলিয়া ফুলের কথা আমরা অনেকেই জানি। সেই ক্যামেলিয়া প্রজাতির একটি গোত্রের নাম হলো ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস। ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস গাছের কচি পাতা সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা আমাদের কাছে চা পাতা হিসেবে পরিচিত। কচি পাতা সংগ্রহ কালে গাছের ডাল থেকে সবচেয়ে কচি দুটি পাতা এবং এর সাথে থাকা কুঁড়িটি বেছে নেয়া হয়। সেজন্য সিলেটকে চায়ের দেশ বুঝাতে বলা হয়- দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ।
বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সিলেটে প্রবাসী সম্পৃক্ত একটি ল্যান্ডমার্ক বা মনুমেন্ট থাকার কথা। কিন্তু কাজটি আমরা করতে পারিনি। উপযুক্ত সৎ নেতৃত্ব, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবই এজন্য দায়ী। আমার প্রিয় সিলেটের চিন্তাশীল সুধী সমাজের কাছে এ নিয়ে ভেবে দেখার সবিনয় অনুরুধ রাখছি।
সিলেট মায়ের এক নগন্য সন্তান এবং একজন প্রবাসী ও ভ্রমন পিয়াসী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত শহর ঘুরে দেখার সুযোগ পাই। মনমুগ্ধকর স্থাপনা, ততোধিক সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সে সুবাদে মনের গহীনে স্বপ্ন জাগে- আহা, আমার জন্মভূমি সিলেটও যদি এ রকম দৃষ্টি নন্দন হতো! অতঃপর যখন সিলেট সফর করি এবং নানা অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই মর্মাহত হই। সিলেট নিয়ে আমাদের গর্ব সীমাহীন। একই সাথে স্বপ্ন দেখারও শেষ নেই। তাই বলে অবাস্তব, আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখলে তো চলবেনা। স্বপ্নটা হতে হবে বাস্তবানুগ এবং আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থানের নিরিখে। সিলেটের উন্নয়নে সাম্প্রতিককালে প্রচুর কাজ হয়েছে। বিশেষ করে সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষে যা করা হয়েছে, সেজন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই এর শেষ নেই। এছাড়া সৌন্দর্যবর্ধন বা বিউটিফিকেশন বিষয়টি জনগোষ্ঠির রুচী এবং সঙ্গতির উপরও বহুলাংশে নির্ভরশীল। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সিলেটের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষে সুনির্দিষ্ট কিছু ধারনা(আইডিয়া) তুলে ধরতে চাই। রচনার দীর্ঘায়তন সুধী পাঠক মহলে বিরক্তির কারণ হতে পারে বলে ‘প্রবাসীর চোখেঃ প্রিয় সিলেট’- এক/ দুই/… এভাবে সময় সুযোগে ধারাবাহিকভাবে তোলে ধরবো। আজকের পর্ব এক- এ সিলেট শহরের বিখ্যাত দুটি কবরস্থান নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
সিলেট শহরের দুটি বিখ্যাত কবরস্থান হলো হযরত শাহজালাল(রহ.)র মাজার সংলগ্ন কবরস্থান এবং শাহী ঈদগাহ কবরস্থান। এ কবরস্থান দুটিতে শুয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সর্বজনমান্য অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। কবরস্থান গুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্বও বটে। উত্তরসুরি হিসেবে পুর্বসুরিদের প্রতি আমাদের এ দায়িত্বে অবহেলা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এ কবরগুলো নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা,ভাব গাম্ভীর্য বজায় রেখে সৌন্দর্যবর্ধনের ব্যবস্থা করা অগ্রসর সমাজ চেতনার আওতায় পড়ে। এছাড়া দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের কবরগুলো জিয়ারত তথা পরিদর্শন করে সম্মান জানানোর সুবিধার্থে প্রচার প্রচারণা, তথ্যাদির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা গেলে স্থানীয় এবং বহিরাগত পর্যটক আকৃষ্ট করা সম্ভব। এর ফলে যেমন আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হতে পারি, একই সাথে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের লালনও হতে পারে। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি-মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, বঙ্গবীর জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গনী ওসমানীর কবরটি রয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে (ছবি দেখুন)। এ কবর ছাড়াও দেশবরেণ্য আরও অনেক ব্যক্তিবর্গের কবর রয়েছে সেখানে। এ তথ্যটুকু আমার জানা ছিল। বিশাল এ কবরগাহের কোন অংশে কবরটি রয়েছে তা জানা না থাকায় এটি খোঁজে পেতে সম্প্রতি আমাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। অনেক খোঁজ করে খুবই অবহেলিত অবস্থায় কবরটি দেখে মর্মাহত হয়েছি। জাতির শ্রেষ্ঠতম এই বীর সেনানায়কের কবরের এ হাল আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। জেনারেল ওসমানীকে অবহেলিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লালন কোনমতেই সম্ভব নয়।শুধু জেনারেল ওসমানীই নন, এখানেই শুয়ে আছেন জাতির আরও অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তান। এ মহান ব্যক্তিবর্গের কবরগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং দর্শনার্থীদের জন্য সহজে পরিদর্শনের সুযোগ করে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং দরগাহ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কবরগুলো সংস্কার এবং বিলবোর্ডের মতো করে এক বা একাধিক স্থানে কবরস্থানের ম্যাপ অঙ্কন করে বিশেষ ব্যক্তিত্বগনের কবরের অবস্থান চিহ্নিত করে দিলেই সহজে কবরগুলো খোঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। এজন্য ছোট আকারের বুকলেট প্রকাশ করা যেতে পারে যেখানে এই কবরস্থানে সমাহিত বিশেষ ব্যক্তিগনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং কবরের অবস্থান নির্দেশক মানচিত্র স্থান পাবে। সহযোগি হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে রক্ষণাবেক্ষন এবং প্রচারণার কাজটি করা যেতে পারে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন, দরগাহ কর্তৃপক্ষ, পর্যটন বিভাগ এবং সিলেটের সুধীমহলের প্রতি বিনীত নিবেদন, বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন। পুর্বসুরিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রচারের স্বার্থেই তা করা প্রয়োজন। এভাবেই আমরা সিলেটের ঐতিহ্যের লালন করতে পারি।এ পথ ধরেই ধাপে ধাপে আমরা প্রিয় সিলেটকে বাংলাদেশের সেরা শহরে পরিনত করতে পারি।

-হাসনাত মুহ. আনোয়ার, ইউ.কে