প্রচ্ছদ

বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্প

  |  ১৭:০২, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২
www.adarshabarta.com
কে এম আবুতাহের চৌধুরী:
রিকগনাইজড বাংলাদেশ ‘ ব্যাজ বিক্রি করে মুক্তিযুদ্ধের ফাণ্ডে ৭৫০ পাউণ্ড প্রদান
সম্প্রতি আমার বাসায় এসেছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের শেডওয়েলের চ্যাপম্যান স্ট্রিটের বাসিন্দা আলতাবুর রহমান ।তিনি আমাকে ১৯৭১ সালে বিলেতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গল্প বলেন ।তিনি আমাকে জানান – ২১নং ব্রিকলেনে তাদের নিজস্ব একটি ব্যবসা ছিল ।নাম ছিলো ,জালালাবাদ স্টোর ।তাঁর পিতা মরহুম ইসমাইল আলী বৃটেনে আসেন ১৯৬২সালে ।তিনি এ ব্যবসা পরিচালনা করতেন ।আলতাবুর রহমানের আম্মা মিসেস তৈমুছা বেগম (৮২) ব্যবসার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক কাজ করেছেন ।মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মিসেস ফেরদৌসি রহমানের সাথে তিনি সপ্তাহে দুইদিন হাইড পার্কে সভা ও মিছিলে যোগ দিতেন ।জগন্নাথপুর উপজেলার রউয়াল গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় নেতা জনাব ময়না মিয়া তাদের দোকানে বিক্রির জন্য ‘রিকগনাইজড বাংলাদেশ ‘ ব্যাজ দিয়ে যান ।এ ব্যাজ তারা ৫ শিলিং বা ১০ শিলিং এ বিক্রি করতেন ।এ ব্যাজ বিক্রি করে তারা ৭৫০পাউণ্ড পান ।এসব অর্থ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ত্যাগী নেতা আলহাজ্ব তৈয়বুর রহমানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ফাণ্ডে জমা দেওয়া হয় ।
আলতাবুর রহমান মায়ের সাথে বৃটেনে আসেন ১৯৬৯ সালে ।তিনি ক্যানন বার্নেট ও রবার্ট মন্টিফিউরি সেকেণ্ডারী স্কুলে পড়াশুনা করেছেন ।তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলন চলাকালে একদিন মন্টিফিউরি স্কুলে ‘রিকগনাইজড বাংলাদেশ ‘ ব্যাজ শার্টের উপরে লাগিয়ে স্কুলে যান ।তখন স্কুলের হেড টিচার ছিলেন মিস ম্যাকডোনাল্ড ।পাকিস্তানী দু’টি ছাত্র মনোহর খান ও জিয়া বাট ,আলতাবুর রহমানকে বুকে কি ও কেন এ ব্যাজ লাগানো হয়েছে তা জানতে চায় ।তিনি উত্তর দেওয়ার সাথে সাথেই তারা নাকে মুখে ঘুষি মারতে থাকে ।তার নাক থেকে রক্ত ঝরার পর তিনি মাটিতে পড়ে যান ।তখন তার চিৎকারে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন -টুনু মিয়া (দশঘর,বিশ্বনাথ ),কয়ছর আহমদ ( ছিরামিশি ,জগন্নাথপুর )।তিনি স্কুলে কোন বিচার পাননি ।কারন হিসাবে হেড টিচার বলেন ,স্কুলে কেন তিনি রাজনৈতিক ব্যাজ লাগিয়ে এসেছেন ? বরং তাকে আরো তিরস্কার করা হয় ।
তিনি আরো বলেন -তখন বৃটেনে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন আইয়ুব আলী মাষ্টার ।তিনি ব্রিকলেনের স্পেলম্যান হাউসে থাকতেন ।তিনি বাঙালিদের অনেক সাহায্য করেছেন ।তিনি তাদের পরিবারের বৃটিশ পাসপোর্ট করে দিয়েছেন ।১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামে তৎপর ছিলেন হাজী তৈয়বুর রহমান ,মসলন্দর আলী খান ,গৌছ খান ,মিসেস ফেরদৌস রহমান ,ময়না মিয়া প্রমুখ ।বৃটেনের বাংলাদেশীরা মুক্তিযুদ্ধের ফাণ্ডে হাজার হাজার পাউণ্ড দান করেছেন ।
জনাব আলতাবুর রহমান তাঁর মা মিসেস তৈমুছা বেগমের অবদানের স্বীকৃতি চান ।পুরুষদের পাশাপাশি শত শত প্রবাসী বাঙালী মহিলা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন ।তাদের সবাইকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানান ।
এখানে উল্লেখ্য -আলতাবুর রহমানের বাড়ি হচ্ছে বিশ্বনাথ উপজেলার ইলামের গাঁও।বাবা ইসমাইল আলী মারা যান ২০০২ সালে ও মা মিসেস তৈমুছা বেগম এখনো জীবিত আছেন ।মা এই বৃদ্ধ বয়সেও মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের সংগ্রাম ও ত্যাগ নিয়ে কথা বলেন ।