প্রচ্ছদ

জীবন বড় বৈচিত্রময়, পর্ব-৯

  |  ১১:৪৭, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual2 Ad Code

:: মিজানুর রহমান মিজান ::

Manual1 Ad Code

১৯৭৯ সালে এতো সুবিধা-অসুবিধার মধ্যেও পাশ করলাম এইচ.এস.সি। লেখাপড়া নিয়মিত কতটুকু করতে পারলাম, সময় দিয়ে মনোযোগ সহকারে তা পাঠক আপনারা অতি সহজেই বুঝতে পারছেন। আপনাদের কষ্ট হবার কথা নয় বুঝতে বা অনুমান করতে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণী ও দয়াতে উত্তীর্ণ হলাম। এখানে বলে রাখা ভাল- মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আদায় করি। আমি শিশুকাল থেকেই কোন কিছু একবার পাঠ করলে মুখস্তের মতো হয়ে যেত। কোন কোন ক্ষেত্রে মুখস্ত ছুটে গেলে তা বানিয়ে লেখার আমার একটা ক্ষমতা ছিল।সুতরাং আজো আমার মধ্যে এ অভ্যাস বা ক্ষমতা রয়েছে অটুট। আমি বেশিক্ষণ লেখাপড়া কোন দিনই করিনি। পড়ায় বসে মনোযোগ সহকারে একবার রিডিং পড়লেই পৃথক একটি বোধ বা ধারণা শক্তি আয়ত্ব হয়ে যেত। সে ক্ষমতায় আমি আজো লেখালেখি করতে পারঙ্গম।ছিল স্মরণ শক্তি প্রচুর।

মাত্র দু’মাস কলেজে যাত্রা নিয়মিত। মন প্রাণ ঢেলে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ। আবার ইঞ্জিন বিকল। চলার গতি গেল থমকে।মেরামত প্রয়োজন। চলে গেলাম একদিন কলেজে এক বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের মানসে।। কলেজ দেখে ও বন্ধুদের ক্লাস করতে দেখে মনে আগুন জ্বলে উঠল, পরিবর্তন হয়ে গেল মনের এবং ভাবনা এসে গেল ভর্তি হবার।ভর্তি হলাম ডিগ্রিতে মদন মোহন কলেজে চুডান্ত শেষ মুহুর্তে।১৯৮০ সালেই উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ছাদ উদ্দিন খান আমার চাকুরীস্থল সিলেট সাবরেজিষ্টারী অফিসে গিয়ে হাজির। মাসটি ছিল মার্চ মাস। তিনি প্রস্তাব করেন আমি উত্তর বিশ্বনাথ স্কুলে শিক্ষক রুপে যোগদান করতে। আমি হতভম্ব, হতবিহব্বল। এ কি করে সম্ভব? যেহেতু আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকবৃন্দ তখনও ঐ স্কুলে কর্মরত।আমি তাঁদের সম্মুখে কি ভাবে চেয়ারে বসব, শিক্ষক রুপে অবস্থান করব। আমি তাৎক্ষণিক না বলে দেই। কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি নন। তিনি জানালেন, অদ্য মাসের ৯ তারিখ হলেও এ মাসের প্রথম তারিখ থেকে বেতন ধরা থাকবে।আর এ অফিসের কাজকর্ম ছেড়ে মাসের ১৫ তারিখ আমাকে কাজে যোগ দিতে হবে।উকিল সাহেব ঐদিন থেকে শুরু করলেন প্রতিদিন আমার অফিসে গিয়ে তাগাদা আমি চাকুরী ছেড়ে দিতে।আমি নিরুপায় হয়ে জনাব আব্দুল ওয়াহিদ (খিজির) ও লালার গাঁও নিবাসী বাবু স্বপন কুমার দাসের স্মরনাপন্ন হই। বাবু স্বপন কুমার দাস তখন জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুপে ছিলেন কর্মরত।যদিও উনারা আমার শিক্ষক নন, তথাপি আমার শিক্ষকদের সমবয়সী এবং এক সাথে চলাফেরা করতেন বলে আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সমীহ করে চলতাম। আমি উভয় ব্যক্তিকে গোপনে বলি যে, আপনারা আমাকে এ যাত্রা রক্ষা করুন।সম্ভব হলে আমার কোন বদনাম বা দোষ বলেও আমাকে এখান থেকে রক্ষা করুন। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদ্বয় তিন দিন পর জানালেন আমরা অক্ষম। উকিল সাহেব তোমাকে স্কুলে নিতে উদগ্রীব।হয়ে পড়লাম দিশেহারা। আমার সহকর্মীদের উকিল সাহেব বলে যাচ্ছেন, মিজান ১৫ তারিখ থেকে উত্তর বিশ্বনাথ স্কুলে শিক্ষকতায় চলে যাবে। কি করা আমি অফিসের কাজ ছেড়ে দেবার মন মানসিকতায় হই অগ্রসর। তিনিও আমার সাথে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু পনের তারিখ আমি ভলিউম জমা দিয়ে অফিস থেকে পরিচিত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উকিল সাহেবের সম্মুখে হই হাজির।আমি কোন কিছু বলার পূর্বেই উকিল সাহেব শুধালেন, মিজান তুমি ছ’মাস পর যোগদান কর।পাঠক আপনারা একটি বার চিন্তা করুন, এমতাবস্তায় আপনার কেমন লাগবে বা আপনার মন কি করবে। কথা শুনে আমি মাথা নীচু করে কোন কথা না বলেই উকিল সাহেবের সম্মুখ থেকে সরে আসি।(এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই) যেহেতু আমি তিনিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সমীহ করে চলি বা কথা বলি।আমার চোখ দিয়ে তপ্ত অশ্রু বের হচিছল। তা হাত দিয়ে মুছে ফেলি।তারপর আর আমি অনেকটা প্রলাপের মত বুলি আউডাতে থাকি? মহান আল্লাহর কাছে শুধু আরজ করি, হে আল্লাহ এ কি তুমি করলে। আমার চাকুরী নিলা কেড়ে, আশা দিয়ে ভাঙ্গলে গো বাসা কিবা কারনে।এখন আমার উপায় হবে কি? মনে পড়ে আমার বাবার একটি গানের দু’টি কলি,“ভাবিয়া হই আকুল,নিদয়া হইয়াছরে বন্ধু শিখাইয়া পিরিতের মুল”।এক নম্বর উকিল বার থেকে বেরিয়ে সোজা চলি সুরমা মার্কেটের দিকে উদ্দেশ্যবিহীন।রাস্তাটি অতিক্রম করতে নাকি আমি মধ্য রাস্তায় দাড়িয়েছিলাম কতক্ষণ। তখন একজন মুরব্বিগোছের লোক আমাকে ধরে নিয়ে যান রাস্তার ওধারে। অজানা,অচেনা ঐ ব্যক্তি আমাকে হোটেল থেকে এক গ্লাস পানি এনে কিছু অংশ পান করান এবং বাকিটুকু আমার মাথায় দিতে থাকেন।এ সময় তিনি অনেক প্রশ্ন আমাকে করেছেন, পরিচিতির একটা সারমর্ম উদ্ধারের নিমিত্তে।কিন্তু আমি তিনির সব কথা বুঝতে পারলেও কোন উত্তর মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না।কোন জবাব না পেয়ে তিনি এক সময় আমাকে রেখে চলে যান তিনির কর্ম ব্যস্ততায়। তিনি চলে গেলে আমি আরো কিছু সময় পর উটে দাড়াই।বোধগম্য হয় দারুন পিপাসার। চলে যাই একটি হোটেলে। পান করি এক গ্লাস পানি। এক কাপ চা পান করি বসে।বিচার প্রার্থী হই মহান আল্লাহর দরবারে।তারপর সিদ্ধান্ত নেই সিনেমা দেখার। এর পূর্বে কখনও আমি সিনেমা দেখিনি। প্রথম চলে যাই দিলশাদে ৩-৬টা পর্যন্ত এবং ৬-৯টা পর্যন্ত লাল কুঠিতে ছবি দেখে ধীরে ধীরে চলি সিলেট রেলষ্টেশন অভিমুখে। উদ্দেশ্য দশটার ট্রেনে বাড়ি আসা।

সিলেট রেলষ্টেশনে এসে সাক্ষাৎ লাভ ঘটে কবির আহমদ কুব্বার ভাইয়ের সাথে। আমাকে দেখেই তিনি জানালেন, মিজান তোমাকে খুজছেন মাওলানা অলিউর রহমান সাহেব। মাওলানা অলিউর রহমান সাহেব আমার পাশের গ্রামের লোক। তিনির নাম শুনেছি, কিন্তু আমি সম্পূর্ণ অপরিচিত।স্বশরীরে বা বাস্তবতায় কখনও পরিচিত হইনি।পড়ে গেলাম আবার বিরাট ভাবনায়। মাওলানা অলিউর রহমানের মতো শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আমাকে অনুসন্ধান করার কারন কি থাকতে পারে?মনে মনে কল্পনা করি আর ভাবি, আল্লাহ তুমি আমার জন্য কি রেখেছ, কি হচ্ছে, কি ঘটতে যাচ্ছে?এমন সময় কুব্বার ভাই শুধালেন, মিজান এইতো আসছেন মাওলানা অলিউর রহমান।পিছন ফেরে তাকাতেই দৃষ্টি পড়লো সাদা ধবধবে পান্জাবী ও সাদা সেলোওয়ার পরিহিত মাওলানা সাহেবকে।তিনি কাছে এসেই ছোঁ মেরে ধরলেন এক হাতে আমাকে এবং অপর হাতে কুব্বার ভাইকে। ট্রেনের ঐ দিন ছিল বিলম্ব।আমাদেরকে নিয়ে চললেন রেলওয়ের কেন্টিনের দিকে।পথ যেতে যেতে আমার কোশলাদি করছিলেন জিজ্ঞাসা।আমি প্রত্যেক কথায় শুধু জ্বি জ্বি বলেই চলছি। কেন্টিনে বসে চায়ের অর্ডার দিলেন এবং তিনি শুরু করলেন বলতে। মিজান আমি সারাদিন ধরে তোমাকে খুজছি আমার অন্যান্য কাজ ফেলে। তোমার সম্পূর্ণ ঘটনা অবগত হয়েছি।তুমি কাল থেকে আমার জামেয়া-এ-ইসলামিয়া তেলিকুনা মাদ্রাসায় চল।আমি কোন জবাব দেবার পরিবর্তে ভাবতে লাগলাম। এ পর্যন্ত আমার সাথে সংঘঠিত কোন কথা কাউকে বলিনি এক মাত্র আল্লাহ ব্যতীত।তিনি কি ভাবে অবহিত হলেন? আবার আমি মাদ্রাসায় গিয়ে খাপ খাওয়াব কি ভাবে, যেহেতু আমি কলেজ পডুয়া।মাদ্রাসা ও কলেজের পরিবেশের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।তাছাড়া নানাবিধ ভাবনায় আমি ছিলাম মহাচিন্তিত।আমি তিনিকে না-বাচক জবাব দিচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি সময় চেয়ে চলে আসি।পরদিন মাওলানা সাহেব আমার বাড়ি গিয়ে হাজির। তখন আর না করতে পারিনি বিধায় সম্মতি প্রকাশ করে যোগ দেই। (চলবে)।

Manual5 Ad Code

লেখক: সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Manual2 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code