প্রচ্ছদ

জীবন বড় বৈচিত্রময়, পর্ব-১৩

  |  ১৭:০৬, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual1 Ad Code

:: মিজানুর রহমান মিজান ::

আমরা অনেক সলা-পরামর্শ করে এগুতে থাকি সামনের দিকে। শুরু হল স্কুলের তহবিল সংগ্রহের কাজ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের নিকট যাতায়াত। পূর্বেই বলেছি আমরা সঠিক সময়ে স্কুল ছুটি দিয়ে অভিযান পরিচালনা করতাম।কারন স্কুলের ফলাফলও ছিল নিন্মগামী। তা থেকে উত্তোরণ ছিল জরুরী। স্কুলের নিকট কোন প্রকার খাবারের ব্যবস্থা ছিলো না।পাঠক কিছু সত্য বা ঐতিহ্যের অংশ এখানে উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন। বিশ্বনাথ বাজারে তখন যেতে হতো পায়ে হেঁটে। ছিল তিনটি রাস্তা। এক রামপাশা হয়ে বর্তমান রাস্তা ধরে বিভিন্ন স্থানে বিরাট ও বিশাল গর্ত পানিতে টুইটুম্বুর, কোথাও বাঁশের সাঁকো ইত্যাদি পেরিয়ে। অথবা সঙ্গে নিতে হতো অতিরিক্ত কাপড় বা গামছা। তারপর বিশ্বনাথ বাজারের দর্শন মিলতো।অপরদিকে পালের চক গ্রামের পূর্বাংশে দিয়ে রামধানা গ্রাম হয়ে জানাইয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে ছিল রাস্তা।এ রাস্তা ধরে গেলে রামধানা গ্রামের মধ্যে থাকতো বর্ষা কালে প্রচুর পানি। তা পার হতে হলে আশ্রয় নিতে হতো নৌকার। নৌকা ছাড়া পার হওয়া ছিল অকল্পনীয়। নৌকা না পেলে বসে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু রামধানা গ্রামে একটি নিয়ম চালু ছিল এবং ঐ গ্রামের প্রায় প্রত্যেক পরিবারে থাকতো ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। যা দিয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটা বা ধান সংগ্রহ করা হতো। নৌকা নিয়ে কেহ বের হলেই যতই কাজ থাকুক, কোন পথযাত্রী পার হবার অপেক্ষায় অপেক্ষমান থাকলে ঐ পথযাত্রীকে পার করে তবে যেতে হতো নিজ কাজেকর্মে।ঐ রেওয়াজের জন্য রামধানা গ্রামের মানুষের আলাদা একটি সুনাম বা মর্যাদা ছিল মানবিক বা মানব সেবার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।সর্বশেষ রাস্তা ছিল বর্তমান আশুগঞ্জ বাজারের পূর্বদিকে বয়ে যাওয়া রাস্তা যা কৃপাখালি হয়ে শ্রীধর পুর(সিদ্ধরপুর)হয়ে এমপি’র রাস্তা নামধারী রাস্তা হয়ে বিশ্বনাথ বাজারে পৌছা।এ সকল রাস্তা বর্ষাকালে পানিপূর্ণ থাকতো।আবার শুকনো মৌসুমে কোথাও পানি, কোথাও কাঁদাপূর্ণ।শুকনো মৌসুমে পানি না থাকলেও কাঁদাযুক্ত থাকবেই থাকবে।

একদিন স্কুল ছুটি দিয়ে অনাহারী অবস্তায় যাত্রারম্ভ আমাদের বিশ্বনাথ বাজার অভিমুখে।

Manual1 Ad Code

প্রথমেই চলে গেলাম মুক্তির গাঁও নিবাসী বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত আকমল আলী’র নিকট।অত:পর তৎকালীন ব্যবসায়ী বর্তমানে প্রয়াত জনাব ইন্তাজ আলী’র নিকট। উভয়ের নিকট থেকে আমরা পেয়েছিলাম উপদেশমুলক বেশ কিছু বাক্যালাপ। তাঁদের বক্তব্য ছিল “ আপনাদের মতো অনেকেই আসেন সাহায্য সহযোগিতার নিমিত্তে।কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় বা শ্রুত হয় বিভিন্ন কথাবার্তা। আপনারা যে সত্য ও সঠিক তার কি প্রমাণ রয়েছে।কারো কপালে তো সিল, স্বাক্ষরের লেভেল আঁঠা থাকে না ভাল মানুষ বলে”।আমরা পড়ে গেলাম দারুণ ভাবনা ও চিন্তায়।সত্যিই তো কথাগুলি। কথার যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ রয়েছে।তবে সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী প্রয়াত আকমল আলী আমাদেরকে দিয়েছিলেন দেড়বান টিন সে সময়ে।পৃথক একদিন আমি গিয়ে এনেছিলাম। আর প্রয়াত ইন্তাজ আলী সাহেব নগদ টাকা দিয়েছিলেন।পাঠক ক্ষমা করবেন, টাকার অঙ্কটা এ মুহুর্তে স্মরণ করতে অক্ষম।গিয়েছিলাম দক্ষিণ সুরমার কদমতলী নিবাসী প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তি হামিদ মিয়ার কাছেও। আরো বেশ কিছু জায়গায় গিয়ে বিফল হয়ে আসতে হয়েছিল।তাই ভাবনা, চিন্তা-চেতনায় আমাদের পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছিলাম। অনেক ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গানের অনুষ্ঠানের কথা। পরিবেশ পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল আমাদেরকে এ জাতীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হতে। আমাদের তখন মুল প্রতিপাদ্য ছিল, “কাজটি মন্দ হলেও , আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল মহৎ”।এ শান্তনায় ছিলাম আমরা উদ্বুদ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত।তবে এ সময় অনেক বাঁধাও ছিল সম্মুখে।১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার গদিতে। সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্টিত।সারা দেশে সামরিক আইন জারীর মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সমগ্র দেশকে কয়েকটি আঞ্চলিক জোনে করা হয় বিভক্ত। একেক জোনে একেকজন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন দায়িত্ব প্রাপ্ত।সিলেটের দায়িত্বে নিয়োজিত সামরিক কর্মকর্তার নিকট আমাদের কর্মকান্ড উপস্থাপন করলে তিনি অনুমোদন প্রদান করেন স্কুলের উন্নয়নের নিমিত্তে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। এ অনুমোদন নিয়ে অনুষ্টিত হয় গানের অনুষ্ঠানটি।অনুষ্ঠানে শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন কারী আমির উদ্দিন, প্রয়াত শিল্পী আব্দুল হামিদ ও আকলিমা খাতুন।মাইকিং করা হয়েছিল অনেক দুর পর্যন্ত।নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠানে আগত দর্শনার্থী ছিলেন প্রচুর।সে সময় ছিল টেইপ রেকর্ডারের বহুল প্রচলন।নানা আকারের, ডিজাইনের টেপের প্রচলন।তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে অনেক কষ্টকর ব্যাপারটি।কত আকার আকৃতির, ডিজাইনের টেপরেকর্ডার।তার ইয়ত্ততা নেই।সময় কি আর এক গতিতে চলে? কখনো কখনো হোচট খায় জীবনের সাথে, কখনো ধাক্কা লাগে বাস্তবতার সাথে।নদীর স্রোত আর সময় বয়ে থাকে না কারো জন্য। তা চলমান। তবে গতি প্রকৃতির হয়তো বা হতে পারে ভিন্নতা। যেমন নদীর স্রোত কখনো উত্থাল তরঙ্গায়িত, কখনো ইষৎ মৃদুমন্দ, কখনো ধীরগতি সম্পন্ন।টেপরেকর্ডারের সময় ছিল তখন উচ্ছ্বল যৌবন তাড়িত। গাড়ি প্রচলন তখন ছিল না বললে অত্যুক্তি হবে না গ্রামাঞ্চলে।পায়ে হেঁটেই পথ চলতে হতো। দেখা যেত অনেকে টেপরেকর্ডার বাজিয়ে আত্মীয়-স্বজন বাড়ি যেতে।আজ সে টেপরেকর্ডার হারিয়ে গেছে কোন সুদুরের যাত্রী হয়ে।তা আজ অত্যাধুনিকতার অগ্রযাত্রায় হয়েছে বিলীন। এতো লোক সমাগম আমি আজ পর্যন্ত দ্বিতীয়টি দেখিনি।অনেক দর্শনার্থী,শ্রুতা বলতেন স্কুল আমাদের, স্কুলের মাধ্যমে গানের অনুষ্ঠান হবে। আমরা টাকা বা টিকেট কেনো কিনে দেখব।জবাবে বলা হত “সত্যিই আপনি গান দেখুন, শুনুন ফ্রি। তবে আপনার স্কুল ভাঙ্গা, স্কুলকে আপনি কি দিবেন দিয়ে দেন।তখন প্রশ্নকারী হয়ে যেতেন ‍নিরব, নিরুত্তর।আর কথা না বাড়িয়ে টিকেট কেটে নিতেন”। এ অনুষ্ঠান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ইট সংযুক্ত ভবনটি নির্মাণ করা হয়।পাঠক ভবনটির পরিচয় দেয়া ভাল হবে বলে আমি মনে করি।তাহলে আসুন পরিচিত হই।মুলত: উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় গৃহটি (ভবন)ছিল ইংরেজি এল সাইজের।উত্তরাংশের ভবনটির সম্মুখ ছিল দক্ষিণ দিকে।ঐ ভবনের মধ্যখানে(বর্তমানে)তখনকার সময়ের পূর্বাংশে যে ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা টিনের চাউনিযুক্ত ভবন, সেটিই পাকা দালান বিশিষ্ট আমাদের নিবন্ধে উল্লেখিত ভবনটি।এ ভবনের পশ্চিমের শেষ প্রান্তের কক্ষটি ছিল পূর্বেই বলেছি স্কুলের চৌকিদার কাম পিয়ন তাহির আলীর কক্ষ।আবার তা ছিল মেয়েদের কমন রোম হিসেবেও ব্যবহৃত।নুতন কক্ষ তৈরী হয়ে গেলে সেখানে স্থানান্তরিত হয় প্রধান শিক্ষক রুম, শিক্ষক কমন রুম, মেয়েদের কমন রুম।

Manual6 Ad Code

আমি স্কুলে থাকাকালীন সময়ে আমার উপর অর্পিত ছিল ক্রীড়া শিক্ষকের দায়িত্ব।কারন আমার পরম শ্রদ্ধাগুরু বর্তমানে প্রয়াত জনাব উকিল আলী স্যার তখন লিবিয়া চলে গিয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য।তিনি আবার প্রবাস থেকে এসে স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন, তখন কিন্তু আমি হয়ে গেছি প্রবাসী নামের অধিকারী।বেশ কিছুদিন লাইব্রেরীর দায়িত্বেও ছিলাম অধিষ্ঠিত।অপরদিকে স্কুলের কোন কাজে বাহিরে যোগাযোগ করা প্রয়োজন হলে প্রধান শিক্ষক সে দায়িত্বও অর্পণ করতেন।উদাহরণ স্বরুপ সে সময় থানার (উপজেলার) উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন C.o.(সার্কেল অফিসার), যা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদবী সৃষ্টি হয়েছে।তখনকার সার্কেল অফিসার হঠাৎ বদলী হয়ে চলে যান গোয়াইনঘাট থানায়।কিন্তু তিনির একটি স্বাক্ষর আমাদের স্কুলের জন্য ছিল জরুরী।সে স্বাক্ষরটি আনতে আমাকে যেতে হয়েছিল গোয়াইনঘাট।সেদিন সঙ্গি হয়েছিলেন আমার জনাব তপু চৌধুরী।এভাবে বেশ কয়েকটি কাজে আমি অংশ নিয়েছি।অর্থ্যাৎ প্রধান শিক্ষক আমাকেই সে সকল কাজে পাঠাতেন। (চলবে)

Manual4 Ad Code

লেখক: সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Manual6 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code