প্রচ্ছদ

জীবন বড় বৈচিত্রময়, পর্ব-৩

  |  ১৬:৫১, আগস্ট ৩০, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual8 Ad Code

:: মিজানুর রহমান মিজান ::

আমি বা আমার বাবা ছিলাম মানসিক নির্যাতনের শিকার প্রতিনিয়ত ।এ জিনিষটি দেখে দেখে ও আমি লেখাপড়ার তাগিদ অনুভব করি মনে প্রাণে।

Manual8 Ad Code

শৈশব,কৈশোর কাল বন্ধনহীন জীবন। তবে আনন্দঘন, উচ্ছ্বসিত, উল্লাসিত ধারা সিক্ততায় অনেকের দিনাতিবাহিত হয়। তৎকালীন সময়ের ঘটনা প্রবাহ বা দিনলিপি স্মৃতি পঠে থাকে অনেক দিন জাগ্রত।যা ভবিষ্যত দিন যাপনে ভাবায় অনেককে পুনারাবৃত্তি সচলতায়। বছর, মাস স্মরণ থাকলেও সঠিক দিনটি মনের অতলান্ত থেকে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।১৯৭২ সাল। এইতো ক’দিন পূর্বে বাংলাদেশ নামক দেশটি এ গ্রহের একটি রাষ্ট্রের খাতায় নাম লিখিয়ে স্বতন্ত্র পতাকার বৈশিষ্ট নিয়ে আবির্ভুত। আমিও দশ এগারো বছরের এক কিশোর সবেমাত্র পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে হাই স্কুলে ভর্তির চিন্তায় বিভোর। কোথায় ভর্তি হবো?তখন হাই স্কুল বলতে বিশ্বনাথ থানা সদরের একমাত্র রামসুন্দর হাই স্কুল, পশ্চিম দিকে একলিমিয়া জুনিয়র হাই স্কুল, গবিন্দ গঞ্জ হাই স্কুল, পূর্ব দিকে লালাবাজার হাই স্কুলের অবস্থান। এছাড়া সিলেট শহরের স্কুল ব্যতীত আর কোন স্কুল ছিল না।এগুলি বাড়ি হতে অনেক দুরে থাকায় আরাম আয়েশ পরিত্যাগ অর্থ্যাৎ স্বজনের সান্নিধ্যসহ বাড়ি ছাড়তে হবে।অপর দিকে সিলেট শহরের স্কুলে যেতে হলে লজিং থাকা জরুরী। নতুবা প্রতিদিনকার ট্রেনের যাত্রী খাজাঞ্চি-সিলেট বাধ্যতামুলক।কিন্তু এক্ষেত্রে এ রকমের ঝুকি গ্রহণে কেহই সায় দিবেন না। এক কথায় বাড়ি ছাড়া, না হয় লেখাপড়া ছেড়ে দেয়া।এ বয়সে বাড়ি ছাড়তে অনেকের কষ্ট হয়। আমি এ আওতার অন্তর্ভুক্ত হতে বেদনাই স্থান পাচ্ছিল হৃদয়াসনে অধিক মাত্রায়।

Manual3 Ad Code

ভাবনার মহাজালে বন্দীত্ব জীবন। আর ইতস্ততা নিত্য সঙ্গী।আমার প্রতিবেশী ঘনিষ্ট সহচর, সেই শিশু বেলার সাথি যদিও বয়সের একটু পার্থক্য বিদ্যমান।৩/৪ বৎসরের অগ্রজ।বিকাল বেলা খেলার মাঠে আমাকে জানালেন বাড়ির সন্নিকটে উত্তর বিশ্বনাথ হাই স্কুল নামে স্কুল প্রতিষ্ঠার সুসংবাদ এবং তিনি দু’দিন পূর্বে স্কুলে ভর্তি হয়ে ক্লাস করে ফেরার। সংবাদটি প্রাপ্ত হয়ে মনে কি পরিমাণ আনন্দ, উল্লাস, পুলকিত হয়েছিলাম যা ভাষায় ব্যক্ত করা আমার পক্ষে দুরুহ।এ আনন্দকে উপলব্ধি করা যায় শুধু মাত্র। অনুভুতি জন্মে, অনুরণিত হয়।খেলা সমাপন হল সন্ধ্যার সাথে সাথে। পৌছলাম বাড়িতে গিয়ে।মুখায়ব দর্শনে মা জিজ্ঞেস করেন আজকের আনন্দের কার্যকারন সম্পর্কে। আনন্দের বহি:প্রকাশ ঘটাতে যতো প্রকার কলাকৌশল ছিল তা অনর্গল উদগীরন করলাম এবং কালই স্কুলে যাবার কথা ও জানিয়ে দিলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠেই স্কুলে যাবার তোড়জোড় শুরু।মা আমাকে সাধ্যাতীত আদর যত্নে পাঠালেন স্কুলে। স্কুল বলতে যা দেখলাম তা হল পাহাড় পুর নিবাসী জনাব শহর উল্ল্যা সাহেবের বাংলো ঘর (বৈঠকখানা)।পাকা দেয়াল বেষ্ঠিত উপরে টিনের ছাউনিযুক্ত। মেঝ পাকা।৫টি ডেস্ক ও ৫টি বেঞ্চ।তিনটি ছোট আকারের টেবিল। চার পাঁচটি চেয়ার।একটি মাত্র কক্ষ।প্রথম কক্ষটি হতে অপর কক্ষে সংযোগের নিমিত্তে পূর্ব দেয়ালের ঠিক মধ্য খানটায় বড় কাঠের দরজা রাখা আছে। আবার উত্তর দেয়ালে আরেকটি দরজা বাহিরে বের হবার। প্রথম কক্ষের পশ্চিম ও উত্তর দেয়ালে দু’টি দরজা।মানে কক্ষটির মোট তিনটি দরজা।সংলগ্ন কক্ষটি বরাদ্দ হলেও প্রথম দিকে একটি কক্ষই ব্যবহার করা হতো ছাত্র সংখ্যা কম হবার সুবাদে। এ সময়ে যাঁদের শিক্ষক রুপে পেয়েছিলাম- তাঁদের নাম হচ্ছে প্রধান শিক্ষক মরহুম আখতার হোসেন কিনু মিয়া হাজারী গাঁও, বাবু রাধিকা রঞ্জন দাস (টগর) লালার গাঁও,মরহুম আলতাফুর রহমান ছাদ মিয়া ঘাসি গাঁও, মরহুম নওরোজ আলী হাজারী গাঁও, মরহুম কামাল উদ্দিন হাজারী গাঁও, মরহুম উকিল আলী হাজারী গাঁও,মরহুম মৌলানা আব্দুল্যা ও কমর উদ্দিন খান খাজাঞ্চি গাঁও প্রমুখ। তবে বাবু রাধিকা রঞ্জন দাস মাত্র কয়েক দিন ছিলেন।এ সময় জুনিয়র হিসেবে ৬ষ্ট হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান অব্যাহত ছিল। কোন ক্লাসে ২/৩ জন আবার কোন ক্লাসে ৫/৬জনের মত ছাত্র সংখ্যা ছিল বিদ্যমান। দিনে দিনে অবশ্যই ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছিল।আর আমার অগ্রজ হিসাবে যাঁদের পেয়েছিলাম। তাঁরা হচ্ছেন অষ্টম শ্রেণিতে বাবু সুজিত কুমার দাস ও সুভাস দাস লালার গাঁও, আব্দুল হক রহিম পুর, শফিক মিয়া হাজারি গাঁও, মরহুম কমর উদ্দিন ও আলতাব আলী পাহাড় পুর, আক্কাস আলী দোহালিয়া, বকুল চন্দ চন্দ মোহাম্মদ পুর, সামছুল ইসলাম তোতা পশ্চিম নোয়াগাঁও, আব্দুল মোমিন খান খাজাঞ্চি গাঁও এবং সপ্তম শ্রেণিতে বাবু সুব্রত মোহন কর, শায়েস্তা হোসেন মোহাম্মদ পুর,সমর কুমার দাস লালার গাঁও, আতাউর রহমান গোপাল, মলয় ও মৃদুল সেনাপতি প্রয়াগমহল, সিরাজ উদ্দিন ও আলতাব আলী দ্বীপবন্ধ,আলফাজ উদ্দিন দোহালিয়া, আব্দুল মতিন খান খাজাঞ্চি গাঁও প্রমুখ।(আর স্মরণ হচ্ছে না)।

প্রত্যহ সকাল দশটায় ক্লাস শুরুর রেওয়াজ বা নিয়ম বর্তমানের মত থাকলেও আমি বা আমরা দুরত্বের কারনে বাড়ি হতে রওয়ানা হতাম সকাল নয়টায়। গোসল, খাওয়া-দাওয়া করে হরেক রঙের হরেক ডিজাইনের লুঙ্গি পরেই যেতাম। জয়নগর (নোয়াপাড়া) গ্রামের দক্ষিণের রাস্তা হয়ে রাজাগঞ্জ বাজারের উপর দিয়ে খাজাঞ্চি(মাকুন্দা) নদীর পশ্চিম তীর দিয়ে সিলেট-ছাতক রেললাইন পর্যন্ত।জুতা বা সেন্ডেল পরা ছিল অকল্পনীয় কাদা-জলের কারনে।রাস্তা পাকা দুরের কথা বর্তমানের মতো উচুও ছিল না। নদীতে বন্যার সময় দু’কুল উপছিয়ে পানি গড়াত। রাস্তায় ছোট বড় অসংখ্য ছোট বড় গর্ত বিরক্তি, কষ্টকর হলেও স্কুলে যাতায়াত ছিল নিয়মিত।রেলওয়ে ব্রীজটি পার হতে অনেকের ক্ষেত্রে ছিল বিপদজ্জনক অনভ্যস্থতা জনিত কারনে। ব্রীজের দক্ষিণ পার্শ্বে থাকতো খেয়া নৌকা। স্কুলে তখন খেলাধুলার কোন প্রকার সরঞ্জাম না থাকায় মধ্য বিরতিতে অনেকেই ব্রীজ পারাপারের অভিজ্ঞতা অর্জনে হতাম নিয়োজিত। পারাপারের ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি প্রশিক্ষণসম অপরকে সহায়তার পাশাপাশি আনন্দের একটি অংশ বলে হত গন্য। আমার মামার বাড়ি যেতে ব্রীজ পারাপার ছিল এক প্রকার বাধ্যতামুলক। সে সুবাদে এ ব্যাপারে আমি ছিলাম পারঙ্গম ছোট বেলা থেকে।তাই বেশ কয়েকজনের ছিলাম প্রশিক্ষকের ভুমিকায়।আরো লক্ষণীয় ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম সমুহের রাখাল বালক, স্কুলে না আসা কিশোররা ব্রীজের পিঞ্জিরার উপরে উঠে নদীর পানিতে লাফিয়ে পড়ার দৃশ্য।ওরা নিয়মিত এ জাতীয় বিপদজনক ও শংঙ্কাযুক্ত খেলায় হত মত্ত। সতর্কবাণীর পাশাপাশি উপদেশমুলক বাক্য বিলাতেন শিক্ষকবৃন্দ, বয়োজৈষ্ট পথচারী। এতে সফলতা ও আসে দ্রুত।পরিহার করে কিশোররা মারাত্মক ঝুকিবহুল খেলার। অগ্রহায়ন মাসের পর জয়নগর গ্রাম থেকে ক্ষেতের জমি দিয়ে আড়াআড়ি বর্তমান স্কুলের অবস্থান সোজা রেললাইনে উঠতাম।ঘুর্ণায়মান এ পৃথিবীর বুকে স্থান,কাল, পাত্র ভেদে অনেক কিছুর পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাধিত হয়, হচ্ছে। অনুরুপ সমাজ, সামাজিকতায় ও অনেক পরিবর্তন নিত্য সহচর। আজ যা বিলাস দ্রব্য বলে গণ্য। আগামী দিনে নিত্য ব্যবহার্য্যের আওতাভুক্ত।এক সময় ধনী গরিব সবার ব্যবহার্য ছিল কাঠের তৈরী খড়ম।তা থেকে দিনে দিনে উত্তোরণ ঘটে-“প্লাষ্টিকের তৈরী নাগড়া জুতায়”।চামড়ার তৈরী জুতো ছিল ধনী ব্যক্তির বা বিলাস দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।তা থেকে উৎকর্ষের ও সমৃদ্ধির ফসল বর্তমান চালচিত্র।অর্থ্যাৎ বর্তমান প্রজন্মের জুতো ছাড়া খালি পায়ে হাঁটা যেমন অকল্পনীয় বিষয়।

সহপাঠি রুপে তখন পেয়েছিলাম অনেককে। কিন্তু এ বিষয়ে এখন সকলের নাম স্মরণ হচ্ছে না স্মৃতির পশরায় সাঁতার কেটে।হয়তো একটু এদিক সেদিক মানে আগে পরে হয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থী। যাদের নাম স্মরণ হচেছ তারা হলেন-মর্তুজ আলী, আখলাক হোসেন আকিল পুর, নজমুল হক বিলপার, আফজল আলী তেলিকুনা, মানিক মিয়া, সুরুজ আলী, ময়না মিয়া কান্দি গাউ, মানিকুজ্জামান, শিব্বির আহমদ, মানিক মিয়া হাজারী গাঁও, অতুল চন্দ চন্দ বাওয়ান পুর, মতি রঞ্জন দাস বাবুনগর,আজাদুর রহমান ও আশিক আলী রাম পুর, প্রবীর কুমার নাথ হরিপুর,রমাকান্ত চক্রবর্তী, রথীন্দ্র চক্রবর্তী চন্ডিপুর,আব্দুছ ছালাম, সুধন্য কুমার সোম প্রয়াগমহল, ছৈদুর রহমান ও নুরুল আমিন রহিম পুর, মরহুম খছরুজ্জামান ও আকিকুর রহমান পালের চক, প্রয়াত রেখা বেগম নুর পুর প্রমুখ।(চলবে)

Manual1 Ad Code

লেখক: সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Manual7 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code