প্রচ্ছদ

জীবন বড় বৈচিত্রময়, পর্ব-১

  |  ১৫:২৯, আগস্ট ২০, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual1 Ad Code

:: মিজানুর রহমান মিজান ::

Manual6 Ad Code

এ পৃথিবীর সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একজন, মহান রব। তিনি কত সুন্দর করে থরে বিথরে যেখানে যা লাগে, তাই দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন পৃথিবী নামক এ জগত সংসারকে। মানুষকে আবার আশরাফুল মাখলুকাত নামে সৃষ্টির শ্রেষ্টত্ব উপাধিতে করেছেন ভুষিত। সসীম জ্ঞানের অধিকারি আমরা মানুষ তা বুঝে ও অনেক সময় না বুঝার ভান বা দাম্ভিকতা বা অবহেলায় এড়িয়ে যাই। কিন্তু একটু সচেতন দৃষ্টিতে তাকালে দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠে সব কিছু। মহান আল্লাহ জগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা ও হেফাজতকারি।পৃথিবীর সকল প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। যখন যার ডাক আসবে রদ হবার কোন প্রকার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে যে স্থান পরিবর্তন বা লুকিয়ে মরণকে জয় করার আশা করা বাতুলতা তুল্য।অথবা আহাম্মকি ছাড়া কিছুই নেই। যেমন করোনা ভাইরাস আমাদেরকে শিক্ষা দিচেছ। পৃথিবীতে কেহ কারো নয়। যা পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানে স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আর এখন তা বাস্তবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার প্রমাণ দেয়া হচেছ। তারপর ও আমরা সচেতন হচিছ না। কেমন করে বলি সচেতন হচিছ বা হবার লক্ষণ এখনও বিরাজিত নয়। যেমন দেখুন পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, “ কেয়ামতের মাঠে পিতা পুত্রকে চিনেও চিনবে না, পুত্র পিতাকে চিনেও চিনবে না”। অনুরুপ সবার বেলা। ইয়া নফছি, ইয়া নফছি হবে গলার মালা। তাকানোর সময় নেই। করোনা তাই আমাদের শিক্ষা দিচেছ।তথাপি কি ঘুষ, দুর্নীতি, ভেজাল ছাড়ছি বা ছাড়ার কোন প্রকার লক্ষণ দেখা যাচেছ। সাহেদ-সাবরিনার কথাই ধরুন।ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের কথা।এ বাংলায় রয়েছে আরো হাজার সাহেদ-সাবরিনা, প্রদীপ, লিয়াকতরা। ওদের মুল উৎপাঠন কিন্তু হবার কথা। কই কতটুকু আমরা সক্ষম হচ্ছি, পারছি। তবুও আশাবাদী উৎপাঠনের, নির্মুলের।আশা, ভালবাসা, স্বপ্ন মানুষকে পথ চলার সুযোগ করে দেয়, হয় আলোকময়তার দিকে, সার্থকতার দিকে।যাক ধান ভানতে শীবের গীতের মত হয়ে যাচেছ। তাই এবার আসছি ফিরে মুল লক্ষ্যে।

আমি যখন লেখাপড়া করি তখনকার পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কে এখানে কিছু কথা বলা আমার উদ্দেশ্য।আমি ১৯৭১ সালে ক্লাস ফাইভে পড়ি। দেশ স্বাধীন হবার পর অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বৃত্তি পরিক্ষা। পূর্বে পরিক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কান্দিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছিলাম পরিক্ষার্থী। আগের বৎসর কান্দিগ্রাম সর: প্রাথ: বিদ্যালয় থেকে প্রথম বারের মত বৃত্তি পরিক্ষার জন্য চারজন ছাত্রকে নির্ধারিত করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কেহ উত্তীর্ণ হতে পারেননি। আর এ বৃত্তি পরিক্ষা চালু করেছিলেন বা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জয়নগর গ্রামের প্রয়াত সামসুদ্দিন আহমদ স্যার প্রধান শিক্ষক হয়ে কান্দি গ্রাম স্কুলে যোগদান করে। পরের বৎসর স্যার আমি ও ঘাসি গাঁও নিবাসী আব্দুন নুরকে পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের নিমিত্তে নির্ধারিত করেন। আব্দুন নুর আমার বাড়িতে থেকে স্যারের বাড়িতে সকাল সন্ধ্যা অবধি লেখাপড়া করতাম। স্যার যে আন্তরিকতা নিয়ে রাত এগারটা পর্যন্ত পড়াতেন। আজ সে দৃশ্য কল্পনা করা যায় না। কেহ একটি টাকাও স্যারকে উপহার বা উপঢৌকন দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিন্তু স্যারকে কখন ও দেখিনি বিমর্ষ বা দু:খিত। স্যারকে বরঞ্চ দেখেছি আমি ও আব্দুন নুর যখন বৃত্তি প্রাপ্ত হই, তখন খুশির জোয়ারে ভাসমান। তিনি সফল হতে পেরেছেন এ আনন্দের আতিশয্যে। অপরদিকে কান্দিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আমরাই প্রথম বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র বলে তিনিও আরো গর্ববোধে ছিলেন আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদেরকে তিনি ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করেই আসতেন বাড়িতে।সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন তিনির বাড়িতে। সকাল নয়টা পর্যন্ত পাঠদান করে আমাদের ছুটি দিয়ে তিনি খাবার গ্রহণ ও গোসল সেরেই সঠিক সময়ে স্কুলে হতেন হাজির। আমাদের ক্ষেত্রে ও ছিল সে নিয়ম প্রযোজ্য।বিলম্বতার মোটেই সুযোগ নিতেন না বা বিলম্বতায় স্কুলে হাজির হওয়া একদিন ও দৃশ্যমান হয়নি।দায়িত্ব সচেতনতার একনিষ্ট এক সাধক ছিলেন তিনি। তিনির লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে, আচার আচরণে মনে হত দায়িত্ব মানেই, নিয়ম মানেই তা যথাযথ পালন করা একান্ত অপরিহার্য, কর্তব‌্য পরায়নতা। আমি যখন প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই, তখন শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলাম প্রধান শিক্ষক রুপে চন্ডিপুর নিবাসী মহাশয় প্রয়াত শ্রী প্রফুল্ল চক্রবর্তী, কান্দিগ্রাম নিবাসী প্রয়াত জনাব সৈয়দ আখতার হোসেন ও নোয়াখালী জেলা নিবাসী জনাব মাওলানা নুরুল আমীন সাহেবত্রয়কে।অল্প দিনের মধ্যে পেনশন প্রাপ্ত হয়ে চলে যান প্রধান শিক্ষক। তিনির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আসেন প্রয়াগমহল নিবাসী শ্রী কালিপদ চৌধুরী। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই তখন বদলি হয়ে চলে যান শ্রী কালিপদ চৌধুরী। তিনির স্থলাভিষিক্ত হয়ে আসেন জয়নগর নিবাসী প্রয়াত জনাব সামস উদ্দিন সাহেব।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিতে আমি পেয়েছিলাম আমার পরম শ্রদ্ধেয় এ পাঁচজন শিক্ষককে।যাঁদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণাদ্ভুদ হয়ে আমি আমার জীবনের চাকা রেখেছি সচল অদ্যাবধি। যাঁদের ভালবাসা পাঠদান ও আদর্শে আমি আদর্শিত।আমি আমার জীবনকে তাঁদের তথা অন্যান্য শিক্ষকদের একটা না একটা আদর্শ বলতে পারি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি,রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্তায় ভাবতাম পাঠশালার পাঠ শেষান্তে কোথায় , কিভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাব। কারন তখন আমাদের এলাকায় কোন হাই স্কুল ছিল না। হাই স্কুল ছিল তখন বিশ্বনাথ সদরে রামসুন্দর হাই স্কুল, লালা বাজার হাই স্কুল, গবিন্দ গঞ্জ হাই স্কুল এবং বাদবাকি সিলেট শহরের স্কুলগুলি।তবে পরিতাপের বিষয় তা এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় রাজা গঞ্জ বাজারে একটি হাই স্কুল বসানো হয়েছিল। তা কিন্তু স্বল্প দিনের মধ্যে বন্ধ হযে যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমার অন্য লেখায় রয়েছে বিধায় তা আর এখানে বিস্তারিত আলোচনা করছি না।পাঠক ক্ষমা করে নেবেন। একটি তথ্য বহুদিন পর হিসাবে ভুলে গেছি। একবার কান্দিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভেঙ্গে যায়। তখন আমরা ক্লাস করতাম কান্দি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা প্রয়াত জনাব ইদ্রিছ আলী’র বাড়িতে। (বর্তমানে যে বাড়িতে বসত করতেছেন জনাব আফরোজ আলী মেম্বার সাহেব)। তখন আমি হয়ত দ্বিতীয় শ্রেণি বা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। অত:পর গৃহ হল নির্মিত। বাঁশের বেড়া টিনের ছাউনি। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা। কিন্তু ছাত্র সংখ্যা পাচিছল দিন দিন বৃদ্ধি। তখন প্রধান শিক্ষক জনাব সামস উদ্দিন, সহকারি শিক্ষক সৈয়দ আখতার হোসেন ও নুরুল আমিন রয়েছেন শিক্ষক হিসাবে। একদিন প্রধান শিক্ষক জানালেন আমাদেরকে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী প্রতি সপ্তাহে দশ পয়সা করে দিতে হবে চাঁদা। নুতন আরেকটি গৃহ বা ভবন নির্মাণের জন্য। আমার ক্লাসের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর চাঁদা সংগ্রহের। এভাবে সকল ক্লাসেই ছিল দায়িত্ব অর্পিত। আমরা বেশি দিন চাঁদা সংগ্রহ করতে হয়নি। একদিন স্যার তা বললেন বন্ধ করতে। আর নির্মিত হয়ে গেল নুতন একটি ছনের ছাউনি বিশিষ্ট দু’কক্ষের একটি ভবন।যা ছিল উত্তরমুখী পূর্ব-পশ্চিম লম্বা।তবে ভবনটি শুধু ছাত্রদের চাঁদাকৃত টাকায়, না অন্য কেহ ছিলেন শরিক দাতা হিসাবে তা আমরা জানিনা। তা জানার বয়স ও তখন ছিল না। (চলবে)।

Manual2 Ad Code

লেখক: সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

Manual1 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code