প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-১৬

  |  ১৪:৩৯, জুন ১৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

স্মরণ হয় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে খেলার কথা

Manual7 Ad Code

:: মোঃ রহমত আলী ::

Manual8 Ad Code

বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলায় প্রথম সারির দেশগুলির সাথে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। আর এ লক্ষ্যে বিশে^র বিভিন্ন দেশ চষে বেড়াচ্ছে। সাথে সাথে অনেক সম্মানজনক ভ‚মিকা রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম বিশ^কাপ খেলার অনুভ‚তিটা আজও ভুলতে পারছিনা। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। আর এ খেলার সময় মাঠে থেকে আমি নিজে তা প্রত্যক্ষ করেছি। তাই এখনও সেটা স্মৃতির পাতায় ঝলঝল হয়ে আছে। তখন শুধু খেলা দেখা নয়, বাংলাদেশ সহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের ক্রীড়া নৈপূন্য অত্যন্ত কাছে থেকে দেখার সূযোগ হয়েছিল। সাথে সাথে ছবিও তুলি। এখানে বলে নেয়া ভাল যে, এ বিশাবকাপ খেলার দ’ুবছর আগে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রপি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলা শুরুর আগে আমরা দেখেছি যে, সে সময় প্রদত্ত টিকেটের কিছুটা বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল। প্রশ্ন হতে পারে যে, খেলা হবে লন্ডনে তাই দেশে এ টিকেটগুলি যাওয়ার কারণ কী ছিল। এর কারণ ছিল কিছু দালাল খেলা দেখার কথা বলে বাংলাদেশ থেকে আদম পাঁচারের কাজে তা ব্যবহারে সচেষ্ট হয়েছিল। এটা শুধু ক্রিকেট খেলা নয়, বৃটেনে বা অন্য দেশে এ ধরণের অনেক ইভেন্টের সূযোগে এ সমস্ত দালাল তৎপর হয়ে উঠে ও লোকজনকে মিথ্যা আশ^াস দিয়ে তারা স্বার্থ উদ্ধার করে। আমি তখন শুনেছিলাম, অনেকে স্থানীয় ব্রিটিশ হাইকমিশনে শুধু টিকেট আর পাসপোর্ট নিয়ে হাজির হয়েছিলো। উদ্বেশ্য ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা দেখতে আসবে। কিন্তু সে সমস্ত লোকদের শুধুমাত্র ক্রিকেটের ছক্কা ও চার ছাড়া আর কিছুই জানা ছিল না। অবশ্য এ নিয়ে তখন অনেক লেখালেখি হয়েছে।

Manual3 Ad Code

এ ব্যাপারে আমার আরো একটি বিষয় স্মরণ হয়, যার উত্তর আজও খুঁজে পাইনি। আর সেটা ছিল বাংলাদেশের সে সময়ের ক্রিকেট জগতের দায়িত্বশীল সাবেক এক মন্ত্রির একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে। তিনি তখন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারে এ মন্তব্যটি করেছিলেন। লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে করা এ মন্তব্যটি তখন বেশ আলোচিত হয়েছিল। তিনি অন্যান্য কথার সাথে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ বিশ^কাপ ক্রিকেট খেলায় যোগত্য অর্জন করার জন্য যখন আরো একটি দেশের সাথে জয়লাভ করার খুবই প্রয়োজন ছিল তখন সে দেশের সাথে ‘আন্ডার দ্যা টেবিল’ কিছু করতে হয়েছিলেন। আমি তখন এ কথার অর্থ খুজে পাচ্ছিলাম না। অর্থাৎ ক্রিকেট খেলাতো মাঠে হয়, তাই মাঠেই এর ফয়সালা হওয়ার কথা। এটা ‘আন্ডার দ্যা টেবিল’ হয় কিভাবে। তা হলে ক্রিকেট খেলা কি বাস্কেটবল খেলার মত টেবিলেই অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রসঙ্গে আমার একটি গল্পের কথা প্রায়ই মনে পড়ে আর তা হচ্ছে, এক শিক্ষক ছাত্রকে বলেছিলেন যে, ‘একজন মহিলা নীচে দাঁড়িয়ে আছে‘ তা ইংরেজীতে বলার জন্য। ছাত্রটি প্রথম জানতে চাইলো সেই মহিলা বিবাহিত না অবিবাহিত। শিক্ষক বল্লেন, তার সাথে আবার এটার সম্পর্ক কী? ছাত্র বল্ল, দরকার আছে। শিক্ষক তখন বল্লেন, আচ্ছা ধর অবিবাহিত। ছাত্র তৎক্ষনাৎ বলে ফেল্ল ‘ তা হলেতো স্যার এটা “মিস আন্ডার স্টেন্ডিং”। শিক্ষক বল্লেন, কী সব আবুল-তাবুল বলছো। ছাত্র তখন বলে ঠিক-ই তো আছে স্যার;। যেমন বিবাহ হয় নাই, তাই ‘মিস’, আর নীচে হল ‘আন্ডার’ এবং দাঁড়িয়ে আছে হল ‘স্টেন্ডিং’। তাই এসব মিলিয়ে “মিস আন্ডার স্টেন্ডিং”। শিক্ষক তখন বল্লেন, এটা হলো (ভুলবশত) আর সেটা হলো (এ ওমেন ইজ স্টেন্ডিং ডাউন)। তাই আমরাও মন্ত্রীদের অনেক কথাকে এটা এবং সেটা বলে চালিয়ে দেই। অনেক কথা পত্রিকায় লিখে স্পেস নস্ট করার প্রয়োজন পড়ে না।

Manual4 Ad Code

তবে পত্রিকায় না লিখলে কি হবে। আজকালতো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। অনেক কথা মুখ ফঁসকে বের হয়ে গেলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। আর তখন তারা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পর্যবসিত হন। এ হেন পরিস্থিতিতি তখন কিছুদিন মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন। কেউ কেউ আবার মিডিয়ার উপর দোষ চাপিয়ে দেন এই বলে যে, বিষয়টি বিকৃত বা অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়েছে। ভাগ্যভালো সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ ছিল না, তাই সে মন্ত্রির কথাটি যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই রয়ে যায়। আর এ সমস্ত ফালতু কথা কোন পত্রিকায় প্রকাশেরও প্রয়োজন মনে করা হয় নাই। যে যাই হউক, প্রথম বিশ^কাপ খেলায় যোগদানকারী ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়রা তখন বার্কিংহাম প্যালেসে বৃটেনের রানি কুইন এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আর এটা জেনে আমরাও তখন আরো বেশী উৎফুল্ল হয়েছিলাম। আকরাম খান ও বুলবুল ছিলেন তখন এর নেতৃত্বে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম বিশ^কাপ খেলার ফলাফলটি এখানে তুলে ধরলাম। হয়তো ভবিষ্যতে কারো প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ আজকালতো হয়ে গেছে ডিটিজাল সাংবাদিকতা। সবাই মোবাইলে বা কম্পিউটারে সকল তথ্য সংরক্ষন করেন অথবা সংবাদটি প্রকাশের পর তাকে আর তেমন গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এটা যে এক সময় প্রতারণা করতে পারে সেটা অনেকে ভাবেন না। আমি যখন কোন ফিচার বা কলাম লিখি তখন অনেকে বলে থাকেন, এ সমস্ত তথ্য আমি কিভাবে স্মরণ রাখি। আমার মাথা কম্পিউটার নাকি ?

সত্য বলতে কি, আমি তখন এগুলির কিছুটা নোট করে রাখতাম। আজকালকার তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমি নিজে একেবারে অচল। তা ছাড়া বয়সের কারণে বিভিন্ন সময় ভুল পড়ে যায়, তাই কিছুদিন আগে মেমরী ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। তারা বড় একটি মেশিন দ্বারা আমার মাথা পরিক্ষা করেছে এবং আবারো ছয়মাস পরে যেতে বলেছে। এর মধ্যে একটি বুকলেট দিয়ে বলেছে যে, এটা থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী অনুসরণ করার জন্য। তাতে তারা, আমার বিভিন্ন কাজের জন্য ডাইরী, কেলেন্ডার, এলার্ম ক্লক বা ইলেকট্রনিক রিমাইন্ডার্স ব্যবহার করার কথা বলেছে। সাথে সাথে কম্পিউটারও। তখন ভাবলাম যারা আমার মাথা কম্পিউটার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছিলে তারা আসলে ভুল। কারণ আমার মাথা যদি কম্পিউটার হয়ে যেত তখন সে ক্লিনিক থেকে কেন কম্পিউটা ব্যবহারের কথা বলা হতো। একটি থাকতে আরেকটির দরকার আছে নাকি।

সে যাই হউক, সে বিশ্বকাপ, ১৭ মে (১৯৯৯) নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলে বাংলাদেশ টিম ১১৬ রানে অল আউট হয়ে যায়। ২ মে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৮২ রান করে। এ সময় মেহরাব হোসেন বাংলাদেশ দলের পক্ষে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন। তবে ৭ ইউকেটে জয়লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর বিশ্বকাপ ক্রিকেট স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ২২ রানে হারিয়ে দেয় তাদের। ২৭ মে বাংলাদেশ করে ১৭৮ রান করলেও অষ্ট্রেলিয়া ৭ ইউকেটে জয়লাভ করে। ৩ মে বাংলাদেশ ৬২ রানে পাকিস্তানকে হারালে একই সাথে বৃটেন ও বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমিরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। তখন নানা মন্তব্যের মধ্যে একটি ছিল, ১৯৭১ ইংরেজীতে যুদ্ধ করে একবার আমরা জয়লাভ করেছিলাম আর দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে তাদের হারিয়ে আবারো জয়লাভে তারা দুইবার পরাজয়ের স্বাধ পেল। আসলে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের জন্য এমন এক জায়গা যেখানে বাঙালীদের আরো অনেক জয় সুনিশ্চিত হয়েছে, আগামীতেও হবে। (চলবে)।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code