প্রচ্ছদ

রাজলক্ষ্মী মৌসুমী লিখেছেন গল্প “দেবীর দর্শন”

  |  ১৬:০০, জুন ১২, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

দেবীর দর্শন

Manual8 Ad Code

:: রাজলক্ষ্মী মৌসুমী ::

আমার পরিচয় আমি একজন ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। আমার কোন অভাব নেই। আমি একজন, আর কোন ভাই বোন নেই। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। কঠিন নিয়মে বড় হলাম। সবার সাথে কথা বলাও নিষেধ।আমার মা ভুল করে আমার নাম রেখেছিলেন স্বাধীন। মাঝে মাঝে রাগ করে মাকে বলি আমার নামের সাথে আমার চরিত্রের কোন মিল নেই।
তোমাদের কঠিন শাসন, কঠিন নিয়মের নির্মম অভিশাপ বাড়ীর প্রাচীর গুলোতেও মরীচিকার প্রলেপ।
এই অভিশপ্ত জীবন বইতে হবে সারা জীবন।
হে আরাধ্য দেবতা তুমি কোথায়?
তুমি নির্বাক নয়নে সব কিছুই হজম করো কেনো তা বলতে পারে?
জীবনের হিসেব নিকেষ মিলবে না কোনদিন। আমি বিদেশে পড়াশুনা করে বিদেশী সংস্কৃতিতে শিক্ষা গ্রহন করেছি। তারপরেও আমি আমার মনের কথা বলতে পারছি না। ইতোমধ্যে আমার একটি ভালো চাকরীও হয়েছে। বাড়ীর বাইরে যাবার কথা উঠতেই মা বাবা অমত প্রকাশ করলেন। কে রান্না করবে কে খাওয়াবে। এখন ১৫ দিনের৷ মধ্যে বিয়ে করানো ভাবনা তাঁদের।
আমি যাকে পছন্দ করি তার কথা তো বলাও যাবে না। খুব দরিদ্র । বংশও ছোট। আমি নিজেও দেখিনি
দৈবক্রমে ওকে একদিন ওদের ছাদে দেখেছিলাম।
তারপর একদিন সাহস করে মাকে বলেই ফেললাম।
কোন কথা না বলে মা চলে গেলেন পাশের ঘরে।বুঝলাম মায়ের আপত্তি আছে। আমি চাকরীতে আর গেলাম না।
কারো সাথে কোন কথাও বলি না।। চুপচাপ থেকে দিন পাড়ি দিচ্ছি।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় মেয়েটাও জানতো না আমার মনের কথা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আবার বিদেশ চলে যাবো।মায়ের মুখের দিকে চেয়ে অনেকদিন অপেক্ষা কোরলাম। বুঝা গেলো মায়ের ইচ্ছে নেই।
আমার নাম স্বাধীন হলে কি হবে আমি মন থেকে স্বাধীন ছিলাম না। একমাত্র সন্তান ছিলাম তাই মা বাবার মনে কষ্ট দিতে চাইনি।
বাবাকে একদিন বললাম বিদেশে যাবার কথা।পি, এইচ, ডি, করতে যাবো শুনে উনি খুশী হলেন।
তারপর তো যাবার সময় হলো। মনটা কেবলি ছটফট করছিলো একটু যদি দেখে যেতে পারতাম। ওর নাম ছিলো স্নেহা। বন্ধুর বদৌলতে একদিন ওদের বাড়ীতে যাবার সুযোগ হলো ।
সে দিনটি ছিলো বুধবার। হায়রে নিয়তি যখন দেখতে গেলাম, গিয়ে শুনি ওর আশীর্বাদ হয়ে গেছে দিন কয়েক হলো। দেখার সাধ কালিমায় ঢাকা পরে গেলো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো আমার জন্য কি একটু অপেক্ষাও করতে পারলে না?
আমি আর ওকে দেখবো না ভেবে অভিমান হলো কিন্তু কার উপর অভিমান করবো?
যদি স্নেহাকে আমার মনের কথাটা জানাতে পারতাম ওর বাবা মা অবশ্যই রাজী হতেন।
নিজের প্রতি তখন ধিক্কার আসলো। গরীব বলে কী ওরা মানুষ নয়? বংশ দিয়ে কী হবে?
আভিজাত্যের অহংকার মানুষকে জীবনের শেষ পরিণতিতে নিয়ে যায়।
অবশেষে স্নেহা আসলো তার মায়ের সাথে। আমার মনে হচ্ছিলো দেবীর সন্মুখে আমি বসে আছি।
এতো মনকাড়া সুন্দরীর রুপ দেখে আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম।কোন কথাই বলতে পারছিনা। সেই ক্ষণে আমার মনে মনে একটা ভাবনা আসলো।
আমার এই চোখ দিয়ে আর অন্য কোন নারীর সৌন্দর্য দেখবো না। স্নেহাকে বললাম তোমাদের বাগানে অনেক গোলাপ ফুটেছে।আমাকে তুমি নিজের হাতে এনে দাও।স্নেহা বললো আচ্ছা আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি। লাল আর সাদা তার মাঝে একটি কালো গোলাপ ছিলো আমাকে সবগুলো দিতে চাইলো।আমি বললাম, আমাকে শুধু কালো গোলাপটা দাও।
আমি মা বাবা অতি আদরের সন্তান কোনদিন তাঁরা আমায় কষ্ট দেননি,আমিও দেইনি।বাধ্য সন্তান আমি।
আমাকে দিয়ে তাদের অনেক আশা ভরসা কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম আমার নিজের অক্ষমতা, আমার ভীরুতা, আমার লজ্জ্বাই আজ দায়ী।
মনের ইচ্ছেটাকে সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতে পারিনি। আভিজাত্য ও মা বাবাকে দোষ দিতে চাই না।আমিই আমার জন্য দায়ী। অবশেষে—
কালো গোলাপটি স্নেহার হাত থেকে নিলাম মৃদু স্পর্শ একটু অনুভব কোরলাম। বন্ধু আমার পাশেই ছিলো সে হঠাৎ ফোনে কথা বলার জন্য বাইরে গেলো এই সুযোগে
আমি গোলাপ কাঁটা দিয়ে দুই চোখে ভালোবাসার বিসর্জন দিলাম।
দেবী দর্শনের পর আমার এই পোড়া চোখের বিসর্জন হওয়াটাই শ্রেয়। সেই মূহুর্তে আমার এটাই মনে হয়েছিলো।তারপরে তো আমি শুনতে পাচ্ছিলাম স্নেহার মিষ্টি কণ্ঠ।সে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে বলছে।ওর মা আমার বন্ধুর কাছে সব শুনে বললেন এমন রাজপুত্র যদি আমার মেয়ের ভাগ্যে আসতো আমরা ওদের পায়ে স্নেহাকে দিয়ে আসতাম। আমাদেরই কপাল মন্দ।একি করলে বাবা বর্তমান জগতে তোমার মত বাধ্য সন্তান নেই বললেই চলে।
আমাকে নিয়ে ওরা চলে গেলো হাসপাতালে।
আমি স্বাধীন মা বাবাকে কিছুই দিতে পারলাম না। কিছুই করতে পারলাম না তাঁদের জন্য।
আমার কল্পনাতে বেঁচে থাকুক আমার দেবী দর্শন।
চোখ নেই তাতে কী হলো মন তো আছে।
ভেবে ভেবেই আনন্দ পাই এখন।

Manual1 Ad Code

(এই গল্পটি কোন সত্য ঘটনা নয়।
কাল্পনিক ঘটনা।)

Manual6 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code