প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-৬

  |  ১৬:৫৮, জুন ০৩, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারদের সাথে বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনা

:: মোঃ রহমত আলী ::

বাংলাদেশ থেকে যারা ব্রিটেনে এসেছেন তারা অবশ্যই এক বা একাধিকবার ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সে হিসাবে আমিও যখন যুক্তরাজ্যে আসি তখন সেখানে যেতে হয়েছিল। তখন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন, স্যার কলিম ইমরে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় নিযুক্ত এ পর্যন্ত ১৫ জন হাইকমিনাারের মধ্যে ৭ম স্থানের অধিকারী। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন। আমি যুক্তরাজ্য আসার ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে তার একটা ছবি নিয়ে আমার কিছু স্মরনীয় ঘটনা রয়েছে। আর সেটা হলো উপরের ছবিটি।
এ ছবিটি ১৯৯৩ সালে তুলা। তখন তিনি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। ভাগ্যক্রমে আমি সে অনুষ্ঠানে যোগদান করি। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আমি তাঁকে আমার সম্পাদনায় তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত দর্পণ ম্যাগাজিনের একটি কপি হস্তান্তর করি। এরপর আমি যখন যুক্তরাজ্যে ভিজিট ভিসার জন্য হাইকমিশনে ইন্টারভিউ দিতে যাই তখন আমার মৌখিক ইন্টারভিউ দেয়ার পর কিছু ডকুমেন্টস দাখিল করি। আর এ ডকুমেন্টস এর সাথে এ ছবিটিও ছিল। আমার তখন যেন মনে হলো মৌখিক ইন্টারভিউ এর পর সংশ্লিষ্ঠ অফিসার আমাকে ভিসা দেয়ার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দে ছিলেন। কিন্তু এটি পাওয়ার পর আমার প্রতি তার আস্তা আরো বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সে ভিসাটি পাওয়ার পথ সহজ হয়েছিল। আমার তখন মনে হয়েছিল যে, ছবিটি দেয়ায় তা কাজে লেগেছে। তবে এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত ধারণা। ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে হয়তো তারা অন্যান্য অনেক কিছু বিবেচনা করেছে।

ভিসা পাওয়ার পর আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে আসলেও দর্পণ ছেড়ে চলে আসতে পারিনি। তাই উক্ত ম্যাগাজিনের কিছু কপি আমি সাথে করে নিয়ে আসি। আর এই ম্যাগাজিনের একটি প্রদর্শনী স্টলের ব্যবস্থা করি সে সময়ে অনুষ্ঠিত লন্ডনের দেশ বিকাশের মেলায়। আর সেই স্টল পরিদর্শনে অন্যান্যদের সাথে আসেন কলিন ইমরের পর ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার পিটার ফাউলার। যিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় নবম ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমি এ সূযোগে তাঁকে দর্পণ ম্যাগাজিনের একটি কপি প্রদান করি। সুতরাং মনে হলো যে, দর্পণ ম্যাগাজিন লন্ডনে নিয়ে আসার পরও তা কাজে লেগেছে।

Manual3 Ad Code

ডেভিট ওয়াকার ছিলেন, বাংলাদেশে ৯ম ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন। হাইকমিশনার হিসাবে তারা যেভাবে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন, আমিও যেন ধারাবাহিকভাবে একের পর এক তাঁদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। বিলেতে বৈশাখী মেলা যখন প্রথম শুরু হয় তখন একসময় ইস্ট লন্ডনের ব্রিকলেনের কাছাকাছি এলেন গার্ডেনে তা অনুষ্ঠিত হয়। হঠাৎ দেখি যে, মেলায় একাকী হাটছেন ডেভিট ওয়াকার। অন্যান্য কেউ তাকে তেমন চিনতে পারছেন কি না জানিনা। তবে আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম যে তিনিই তৎকালীন সময়ের বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার। কোশলাদি জিজ্ঞাসার পর তিনি মেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলেন এবং এ সূযোগে আমিও ফটোসেশনে অংশ নিলাম।

বাংলাদেশে দশম হাইকমিশনার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন ডেভিট কার্টার। আমার ধারাবাহিক সাক্ষাতের অংশ হিসাবে বার্মিংহামের একটি সভায় তাঁর সাথে দেখা হয় এবং তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এটিও দর্পণ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এ সময় কথা প্রসঙ্গে আমার পরিবারকে কেন যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসছি না জানতে চান। আমি উত্তরে জানাই কিছুদিনের মধ্যেই সেটা আমি করতে যাচ্ছি। ডেভিট কার্টর ২০০০-২০০৪ সাল পর্যন্ত দশম হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।

Manual8 Ad Code

Manual8 Ad Code

একজন বাঙালী বংশোদ্ভুত কেউ হাউজ অব কমন্সে এমপি হবেন এমন দাবী ছিল যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাঙালীদের অনেক দিন থেকে। বিশেষ করে ২০১০ এর পূর্ব পর্যন্ত। কিন্তু কেউ বৃটেনের হয়ে বাংলাদেশে কুটনীতিক হবেন এমন ধারণা পোষণ কেউ তখন করেছে বলে অন্তত আমার মনে হয়নি। কিন্তু সে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করলেন আনোয়ার চৌধুরী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ১১তম ব্রিটিশ হাইকমিশনার। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তার সাথে অনেক স্মৃতি আছে যা বলে শেষ করার মত নয়। তবে একবার বৈশাখী মেলায় তিনি গান পরিবেশন করে প্রচুর আনন্দ প্রদান করেন সবাইকে। তবে সেটা মঞ্চে নয় দর্শক সারিতে। শুনেছি ঢাকায় থাকতে নাকি একই মঞ্চে শিল্পি রুনা লায়লার সাথে গান করেছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে রয়েছেন রবার্ট চার্টাটন ডিক্সন। তিনি তার কর্মস্থলে ২০১৯ সালে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশ ও বৃটেনে অবস্থানের ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১৯ সালের ২৬জুন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাথে ‘ডায়ালগ উইথ জার্নালিস্টস‘ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে তিনি জর্জরিত হন। ক্লাবের সাথে আরো অনেকে মতবিনিময়ে বসেছেন কিন্তু এত অধিক সংখ্যক প্রশ্ন আর কাউকে করতে দেখিনি। তাই এটিও ছিল আমার কাছে একটি বিশেষ স্মৃতিময় ব্যাপারে।

সে যাই হউক, এ সময় তাকে উপহার স্বরুপ ক্লাবের মনোগ্রামে খচিত একটি মগ ও বেগ উপহার দেয়ার হয়। অবশ্য যে মগে তাঁকে উপস্থিত সময়ে চা পান করতে দেয়া হয়েছিল সেটিও ছিল ক্লাবের মনোগ্রাম খচিত। তাঁর জন্য আলাদা কোন বিশেষ চায়ের কাপের ব্যবস্থা করা হয়নি। (চলবে)।

Manual3 Ad Code

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code