প্রচ্ছদ

স্মৃতির পিঞ্জিরা, পর্ব-১

  |  ১৬:২২, জুন ২১, ২০২০
www.adarshabarta.com

বাবাদের ত্যাগই আদর্শ

:: আবু সালেহ আহমদ ::

বাবা যেমন ছিলেন, সমাজ সেবক,শিক্ষানুরাগী তেমনি ছিলেন আদর্শ একজন কৃষক। দীর্ঘদিন ছিলেন বি,এস,ডি দাখিল মাদ্রাসা ও গরীব হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ছিলেন বানিয়াচং থানা আওয়ামিলীগের সভাপতি ও একজন গ্রাম্য বিচারক। তার মধ্য কোনো খায় খুতাস ছিলনা। বলতেন,”টাকার চেয়ে সন্মান বড়।” খুব সকালে জমিতে যেতেন, কখনো একা কখনো খামোর করে চাষাবাদ করতেন। কৃষিকে তিনি এবাদত মনে করতেন। তাই মৃত্যু অবধি চাষাবাদ করে গেছেন। শেষ বয়সে বাবা অনেক কষ্ট করেছেন, মাঠে যখন যেতেন আমি যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে বলতেন, পশ্চিমে আমার পূর্বে তোমাদের স্কুল। মাঝে মধ্যে (আগাছা সারাতে) বন বাছাতে বা ভাত নিয়ে গেলে খুব আনন্দিত হলেও বাবার কাছে যেন তির্যক মনে হত। ক্লাশ নাইনে পড়ি একবার ভোরে উঠে লুকিয়ে গেলাম জমিতে, লাঙ্গল জোয়াল লাগিয়ে,কিছু দূর যেতেই গরু দুটি দিল দৌড়। (জমিতে ছিল পানি যাকে বলা হত ফেকি চাষ।) লাঙ্গল টা ভেঙ্গে গেল। কি করি, ঘন্টাখানেক পর বাবা গেলেন,ভয়ে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলাম। বললাম, লাঙ্গল টা এসে দেখি ভাঙ্গা, বললেন্ হয়তঃ কেহ নিয়ে চাষ করে ভেঙ্গে দিয়েছে। আর কি করা, ভাঙ্গা লাঙ্গল টাই বাড়িতে নিয়ে আসলাম। পরদিন বললেন, আগে যেকোনো কাজ শিখতে হয়। আমার বুঝতে অসুবিধে হয়নি বাবা বুঝে গিয়েও কিছু বলেন নি ।
তখনকার সময় গ্রামের এক অভাবী ছেলে আব্বার সাথে যৌথ চাষাবাদ করতো,তিনি এখন আমেরিকাতে কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়িতে আসলেই বাবার পরামর্শ সহযোগীতার কথা গর্ব করে বলেন। তাকে নিয়ে বাবাই প্রথম পশ্চিম হাওরে রবিশস্য চাষ করেছিলেন।

শৈশব কাৈশরের দুরন্তপণায় বাবার খুশি হতে না পারলেও রেজাল্ট হলেই দেখতাম আকাশ ছোয়া স্বপ্ন ও কতো আনন্দ ঝিলিকের ছোয়া। মাঝে মধ্যে আমাদের স্কুলে গিয়ে খোঁজ খবর নিতেন। দেখতাম শিক্ষকদের সাথে কতো আন্তরিকতা , আমি যখন ৭ম বা ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। বাবা তখন স্কুলের অভিভাবক সদস্য হয়ে ছিলেন। আজ ভাবি, স্বল্প শিক্ষিত হয়েও বাবা এতকিছু জানতেন কিভাবে। তিনি বলতেন, কোটি কেটি টাকার চেয়ে, সৎ থাকাটাই বড়। বলতেন,”ঘুষের চাকরি নিবেনা,ধান্দা মান্দা যার ভাঙ্গা নাও তার, ধনী হয়ে দেখিছি গরীবই ভালো”। বাবার কথায় যেন সোনা ফলেছে ।

বড়দের সাথে কিংবা বড় ভাইদের সাথে কখনো বিয়াদবী করবেনা, জানিনা বাবার কথা কতটুকু রাখতে পেরেছি তবে বৈষম্যের শিকার হলেও এখনো প্রাণপ্রাণ চেষ্টা করে য়াচ্ছি। (চলবে)।

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও লোক গবেষক।