প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-২০

  |  ১৪:৪২, জুন ২১, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual3 Ad Code

২৫ বছর পূর্বে ওবায়দুল কাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার সম্পর্কে লন্ডনে যা বলেছিলেন

:: মোঃ রহমত আলী ::

দিনটি ছিল রবিবার। তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫। সময় বিকেল পাঁচটা। স্থান পূর্ব লন্ডনের ‘সাড়ে বায়ান্ন হ্যানবারী স্ট্রিট’ হল। যাকে ইংরেজিতে বলা হত “ফিফটি টু এন্ড হাফ”। এখানে একটি সভার কথাই আজকের আলোচ্য বিষয়। তবে তার আগে, একটু বলে নেয়া ভাল যে, হলের নামের ব্যাপারে অনেকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, সাড়ে বায়ান্ন বা ‘ফিফটি টু এন্ড হাফ’ আবার কী। দেশের প্রবাদ বাক্য ‘বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির সাথে এটার কোন সম্পর্ক আছে কি না’ ইত্যাদি। তাদের অবগতির জন্য বলা প্রয়োজন যে, আসলে এ নামে একটি হল তখন ছিল, যদিও বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব নাই। অন্য ব্যবসা চলছে সে জায়গায়। স্থানীয় হ্যাবারী স্ট্রিটের রাস্তা অতিক্রম করার সময় একটি সরু রাস্তা দেখতে পাওয়া যায় ৫২ এবং ৫৩ নম্বরের মধ্যখানে। আর এ রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করলেই ভিতরে গিয়ে সেই হলে পৌঁছা যেত। এখানে তখন সব সময় সভা-সমাবেশ হতো। এমন কি আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার তৈরীর পূর্বে প্রতি বছর সেখানে অস্থায়ি শহীদ মিনার তৈরী করে শহীদ দিবস পালন করা হতো। আমি যখন যুক্তরাজ্যে প্রথম আসি তখন আমার নিজ এলাকার সংগঠন ‘বিশ্বনাথ সঙ্ঘ’র পক্ষ থেকে সেখানে আমার জন্য একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

Manual4 Ad Code

Manual4 Ad Code

আর উপরোল্লিখিত তারিখে যে সভার আযোজন করা হয় সেটিও ছিল একটি সংবর্ধনা সভা। এটির আয়োজন করা হয়েছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আর সংবর্ধনা গ্রহণকারী ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব কে করেছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলেিগর তৎকালীন সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খান। আর পরিচালনা করেছিলেন, সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক
– যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এতে দলীয় অনেক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখেছিলেন।

Manual6 Ad Code

জনাব ওবায়দুল কাদের বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাথে সাথে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রিও বটে। তবে তিনি ছাত্রনেতা থাকাকালীন আমরাও কলেজে লেখাপড়া করতাম। সে হিসাবে আমি তাঁর বক্তব্য শুনেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সিলেটের ঐতিহাসিক সারদা হলে আমি তাঁর প্রথম বক্তব্য শুনতে পাই। আমি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শুনছিলাম, যখন তিনি তাঁর দুই হাত দুই দিকে পেন্টের পকেটে ডুকিয়ে কবিতার ছন্দের মত অনর্গলভাবে সুললিত কন্ঠে বক্তব্য রাখছিলেন। আসলে তিনি সব সময়ই ছন্দ মিলিয়ে কাব্যিক বক্তব্য রাখতে ভালবাসেন।

এরপর অনেকদিন আর তাঁর বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়নি। অবশেষে লন্ডনে এসে সে অনুষ্ঠানে আবার তাঁর বক্তব্য শুনে যাচ্ছিলাম। তখন তাঁদের দল ক্ষমতায় ছিল না তাই সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দলীয় কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এমতাবস্থায় সে সভায় দাবি উঠেছিল প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে। তিনি তখন বলেছিলেন, প্রবাসীদের এ দাবিটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাদের দলের বিভিন্ন বাবির সাথে অগ্রণ্য দাবি হিসাবে তা গ্রহণ করা হবে এবং তা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাওয়া হবে। উপস্থিত প্রবাসীরাও তাঁকে তখন হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। সাথে সাথে এটাও তারা মনে করেছিলেন যে, যদি কোন কারণে তারা ক্ষমতাহীন থাকার সময় না হয় তখন ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই সেটা বাস্তবায়িত হবে।
কিন্তু এরপর বিগত ২৫ বছরে অনেক জল গড়িয়েছে। মাঝে মাঝে তা বন্যার আকারেও প্রবাহিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে অনেকের ভাগ্যাকাশের চাকা। কিন্তু প্রবাসীদের সে দাবিটি কোন সময়ই বৃস্টির ছিটেফোটু জলেও সিক্ত হয়নি। আশার বাণীর মধ্যেই সেটা সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। অতি সম্প্রতি এ ব্যাপারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল তাই অনেকে মনে করেছিলেন যে, সেই বৃষ্টির জলে সিক্ত হবেন প্রবাসীরা। ভোটাধিকার লাভ করে সবাই তৃপ্ত হবেন। কিন্তু আবারও তা কভিড-৯ নামক জ্বরের কারণে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

Manual6 Ad Code

সে যাই হোক, এ ভোটাধিকারের জন্য প্রবাসীদের অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। বাংলাদেশ হাই কমিশন, বাংলাদেশ বিমান অফিস, সোনালী ব্যাংক বয়কট করতে হয়েছে, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এ বিষয়টি। যারা এ সমস্ত আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের অনেকেই আজ জীবন সায়ান্নে উপস্থিত। কেউ কেউ অসুস্থ আবার কেউ কেউ ইহলোক ত্যাগ করেছেন। কিন্তু এ ভোটাধিকারের অপ্রাপ্তি এখনো রয়ে গেছে।
তবে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক সব সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবেও বিষয়টির প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাই তিনি খুবই আশাবাদী তা বাস্তবায়নের জন্য। তবে যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে তার মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তবুও এ সব কাঠিয়ে শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখবে এ সান্তনা নিয়েই সবাইকে থাকতে হবে। হয়তো বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ হলে একটা সুরাহা হতে পারে। আর এ সুরাহা করার ব্যাপারে অগ্রিম ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান কর্মতৎপর হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। কারণ আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেক হাইকমিশনার আসলে গেলেও তাঁর প্রচেষ্টায় গত বছরের শেষদিকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছিল বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনসহ অন্যন্য স্থানে। তাই আমরা আবারো আশা করতে পারি বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার এ কার্যক্রম আবার শুরু হবে এবং প্রবাসীরা বর্তমান সরকার তথা স্থানীয় হাইকমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞভাজন হবেন।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code