প্রচ্ছদ

বাবারা এমনই ত্যাগী হয় (১)

  |  ১০:৩৫, জুন ২০, ২০২০
www.adarshabarta.com

:: আবু সালেহ আহমদ ::

শুধু আমার নয়, সকল সন্তানের জন্যই বাবা হচ্ছেন,ছাতা সরূপ। আমার বাবা নেই,বাবার কদর এখন ভালো করে বুঝি, ঠিক তেমনি যার বাবা নেই বা যিনি বাবা হারিছেন তার কাছেও বাবার মূল্যায়ন ও সমাদর বহুলাংশে বেশি। বাবারা সন্তানের সুখের জন্য, মানুষ করার জন্য,কতোনা কষ্ট করেন, দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে চলেন। কিন্তু বাবাদের জন্য আমরা কি করতে পেরেছি, কিবা করছি। বাবা দিবসে ফেইসবুকে বাবাকে নিয়ে অনেকেই লিখে দেখে আমারও ইচ্ছে হলো কিছু লিখার।
আমার বাবা মারা গেছেন সেই ১৯৮৭ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর। সেদিন সকালে একসাথে খেয়ে আমি গিয়েছিলাম কলেজে,বাবা গেলেন গ্রাম্য একটি বিচারে, বলেছিলেন তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু। বেলা একটার দিকে আমাকে খোঁজে কলেজে আমার এক আত্বীয় এসে বললো,তোমাকে হাসপাতাল যেতে হবে। তোমার আব্বাকে নিয়ে আসা হচ্ছে হাসপাতালে। দৌঁড়ে গেলাম। ডাক্তার মিত্র বললেন, দেরি হয়ে গেছে। আমাকে স্বাভাবিক করতে চাইলেন। আমি বুঝে গেলাম বাবা আর নেই। এরপর আর কিছুই মনে নেই। জানাজা হলো এমপি শরীফ উদ্দিন স্যার সহ আওয়ামিলীগের অনেকই আসলেন। বাবা এক সময় আওয়ামিলীগের থানা সহ সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে বাবার অনন্য ভূমিকা ছিল।
বাবার আদর্শ বাবার স্মৃতি মনে হলে, আজো আবেগ তাড়িত হই। তিনি চেয়ে ছিলেন সন্তানরা উচ্চ শিক্ষিত হউক। কিন্তু আমরা পারিনি। খেলাধুলা ও দুষ্টামিতে আমরা ছিলাম ডানপিটে। মনে পড়ে যতক্ষণ আমরা পড়েছি ততক্ষণই তিনি আমাদের পাশে বসা থাকতেন। চোখে ঘুম আসলেই, নানা গল্প ও উপদেশ দিতেন।
আমাদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন।বিচার পঞ্চায়েতে গেলে আমরা আনন্দিত হতাম। পড়া থেকে উঠে যেতাম। তিনি ফিরে এসে আমাদের খোঁজে বের করে শিক্ষনীয় ঘটনা গুলো বলতেন। বিচারের রায়ে কোনো পক্ষের ক্ষতি হলে বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে আসতেন। একবার, ফলন্ত ধান গাছ কাঠার জন্য পশ্চিম ভাগের বেশ কিছু ঘাসের দা ও দুটি নৌকা ধরে নিয়ে আসা হলো। আসামিদের রেখে সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে আসামিদের নাস্তা করিয়ে চুরি করবেনা ওয়াদা করিয়ে তাদেরকে ও তাদের পরিচিত জনের ঘাসের দা সমজিয়ে বিদায় করে দিলেন। আসামি বললো আপনিতো দাগুলো না দিলেও পারতেন। তারা খুশি হলো,এর পর তারা আর চুরিতে এলোনা। (চলবে)

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও লোক গবেষক।