প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-১৫

  |  ১২:১৪, জুন ১৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

সিলেটের জনপ্রিয় মেয়র কামরানের সাথে আমার কোন ছবি নাই

:: মোঃ রহমত আলী ::

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী ও এমপিসহ অনেকের সাথে আমার ছবি থাকলেও সিলেটের সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে আমার কোনো ছবি নাই- এটা কল্পনাও করতে পারছিনা। শুধু দেশে নয়, যুক্তরাজ্যেও অনেক সময় তাঁর সাথে দেখা হয়েছে, মাঝে মধ্যে সাক্ষাৎকার নিয়েছি অধিকন্তু সভা-সমাবেশেও যোগদান করেছি। কিন্তু তাঁর সাথে আমার কোন ছবি না থাকায় এলবামের মধ্যে স্মৃতিময় হয়ে থাকতে পারলাম না। আর সেই আক্ষেপটাই এখন আমার মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুর পর সবাই যখন তাঁকে শোক বার্তা জানিয়ে ছবি সংযোজন করছে তখন আমিও একটি শোক বার্তায় তার ছবি সংযুক্ত করার অভিপ্রায়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু তা আর পেলাম না। তাই ছবি ছাড়াই শোক বার্তাটি তুলে ধরি। কিন্তু এরপরেও আমি খুঁজতে থাকলাম যে, যদি পেয়ে যাই তাহলে হয়তো তাঁর সম্বন্ধে একটা লেখা সেই ছবি সংযুক্ত করে লিখবো। এটাই ছিল আমার শেষবার ছবি খোঁজার উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবি আর পেলাম না। তবে তার বদলে একটি নতুন স্মৃতি আবিষ্কার করলাম যা ছিল, সেই ছবির চাইতেও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলতে চাই, আমরা অনেক সময় অনেক কিছু না পেয়ে মন খারাপ করি, অনুশোচনা করি। কিন্তু এর পিছনে যে মহান সৃস্টি কর্তার অন্য কোন আশির্বাদ থাকতে পারে তা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। আর তাই আমরা না বুঝে আক্ষেপ করি, মন খারাপ করি অথবা বিরাগভাজন হই।

সে যাই হউক, ছবির বদলে নতুন আবিস্কারটির কথা বলার আগে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। ১৯৯৬ সালের ৩ জুলাই লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাথে সিলেট পৌরসভা (বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন) এর একটি ঐতিহাসিক টুইনিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর উদ্ধেশ্য ছিল, পদ্ধতিগত বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবস্থাপনার অনুকরণীয় আদর্শ আদান-প্রদান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সর্বোপরি টাওয়ার হ্যামলেটস ও সিলেটের মানুষের মধ্যে হ্রদ্যতা গড়ে তোলা।
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ছিলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের তৎকালীন মেয়র আলবার্ট জেকব, ডেপুটি মেয়র রাজন উদ্দিন জালাল, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সিলভি পিয়ার্স এবং সিলেট পৌরসভার পক্ষে ছিলেন তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য সিলেট থেকে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য সফরে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশরে প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য, জগদিস দাস, কামাল আহমেদ, কামাল মিয়া ও সিলেট ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের চেয়াম্যান সেকিল চৌধুরী। এ প্রতিনিধি দলের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন, কাউন্সিলের তৎকালীন হুইপ কাউন্সিলর সোনাহর আলী।

চুক্তি স্বাক্ষর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, কাউন্সিলার রাজন উদ্দিন জালাল ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন, মেয়র আলবার্ট জেকব। এসময় বক্তব্য দানকালে মেয়রর বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, “আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করতে পেরে আনন্দিত। আশা করি এটি উভয় এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্য তথা টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাথে সিলেটবাসীর সম্পর্ক যে দীর্ঘদিনের তা এ চুক্তির মাধ্যমে আরেকবার প্রামণিত হলো। এর ফলে এখন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের ফলে উভয় এলাকার মানুষই লাভবান হবেন।

কাউন্সিলর রাজন উদ্দিন জালাল বলেন, ইউরোপিয়ান কমিশন থেকে এ চুক্তির মাধ্যমে আমরা যে আর্থিক অনুদান পাব তা দিয়ে বাংলাদেশ তথা সিলেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ সাহায্য, টাওয়ার হ্যামলেটস কন্ট্রাক্টর ব্যবস্থাপনার জন্য পাবে অর্থ। সাথে সাথে ইউরোপিয়ান কমিশনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে যা ভবিষ্যতে সরাসরি সেখান থেকে আর্থিক অনুদান পাওয়ার পথ সুগম হতে পারে। কাউন্সিলর সুনাহর আলী বলেন, এই চুক্তির অন্যতম কারণ হলো টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের তহবিলের সাথে সাথে ইউরোপিয়ান ও ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর নিকট থেকে কিভাবে অনুদান পাওয়া যায় তার প্রচেষ্টা চালানো।

উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে যিনি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন, তিনি হচ্ছেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক মিডিয়া অফিসার সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন। এ ব্যাপারে উভয় স্থানের মধ্যে অনেকটা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ চুক্তি অনুযায়ি পরবর্তীতে সিলেট শহরের নানাবিধ উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নে নিয়োজিত হন এ কাউন্সিলের আরেক কর্মকর্তা আইয়ুব করম আলী। যিনি দীর্ঘদিন এ ব্যাপারে সিলেট অবস্থান করেন।
আমি এই সংবাদটি এখন লিখতে পারতাম না যদি না আমার কাছে সে সময় আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত বিশ্বনাথ দর্পণের একটি কপি না থাকতো। যার প্রচ্ছদের ছবিটি এখানে সন্নিবেশিত করা আছে। আর সেটাই হলো বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ব্যাপারে আমার নতুন আবিস্কার। যা তাঁর ছবি খুঁজতে গিয়ে আমি পেয়েছি। আমি মনে করি সেই ছবি চাইতেও এটা এখন অনেক বড় দলিল যা হয়তো এখন অনেকের কাছে নাই। আমি সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি এ ম্যাগাজিনে তখন তা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছিলাম। সেই যুক্তিতে আমি এখন অত্যন্ত গর্বিত মনে করছি।

আবারো ফিরে আসি ফটো প্রসঙ্গে। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছবি আমার সাথে না থাকলেও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে দেশের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সাথে রয়েছে তাঁর অনেক ছবি। যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সাথে রয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গতা যার ফলে অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে রয়েছে তাঁর অসংখ্য ছবি। যার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর মৃত্যুর পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, তার ছবি রয়েছে বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি বেøয়ারের সাথে যা এখানে সংযুক্ত আছে। প্রিন্স চার্লসের সাথে সাথে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের সাথে, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর সাথেও। হয়তো আরো অনেকের সাথে তাঁর ছবি আছে, যেগুলি হয়তো আমার জানা নাই। কিন্তু আমার আফসোস হলো, আমার কোন ছবি তাঁর সাথে নেই।
উল্লেখ্য, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ জুন দিবাগত রাত ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। আমি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

আমি যখন এই লেখাটি লিখছিলাম তখন অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে লক্ষ্য করলাম আমাদের অত্যন্ত প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় মানুষ যুক্তরাজ্যের প্রবিন কমিউনিটি নেতা হাফিজ মজির উদ্দিন সাহেবের মৃত্যু সংবাদটি ওয়ার্টসআপে ভেসে আসছে। এ জন্য খুবই মর্মাহত হলাম। এর আগেও সাবেক মন্ত্রি মো. নাসিম. ধর্ম প্রতিমন্ত্রিসহ আরো অনেকের মৃত্যুসংবাদ গুলি আমার অন্তরে দাগ কেটেছে। সবার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি তাঁদের যেন তিনি বেহেস্ত নসিব করেন। সাথে সাথে যারা অসুস্থ তাদের আরোগ্য কামনা করে এ মহামারি থেকে উত্তরণ জন্য আল্লাহ তায়লার কাছে মাগফেরাত কামনা করছি। আমিন

ছবির ক্যাপশন- (উপরে) নব্বই এর দশকে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রিকে উপহার দিচ্ছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। পাশে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার ডেভিট কার্টার, শিল্পপতি ইকবাল আহমদ ও সাফয়ান আহমদ চৌধুরীসহ অন্যান্য।
(নীচে) ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত বিশ্বনাথ দর্পণের একটি সংখ্যা।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com