প্রচ্ছদ

রাজলক্ষ্মী মৌসুমী লিখেছেন “মাল্টার আত্মজীবনী”

  |  ০৯:০৮, জুন ১০, ২০২০
www.adarshabarta.com

“মাল্টার আত্মজীবনী”

রাজলক্ষ্মী মৌসুমী

> আমাকে মাল্টা নামে চেনে সবাই কিন্তু কমলা আর বাতাবী লেবুর সংকরায়ণে আমার সৃস্টি। দক্ষিনাঞ্চলের সম্ভবনাময় ফল আমি।
> আমি সাইট্রাস পরিবারভুক্ত। বিদেশেই আমার বাস।
> বহু গুণের অধিকারী আমি। দেখতেও আমি মন্দ নই। গোলাকার আকৃতি আমার।গায়ের রং কমলা।
> মাঝে মধ্যে হয়ে যাই শিশুর হাতের খেলার বাহার।
> এখন আমাদের জন্ম হয় যত্র তত্র।
> বাড়ীওয়ালাদের বারান্দায় আর গাছের টবেও এখন আমাদের জন্ম হয়।
> আমার জন্ম এক ব্যবসায়ীর বিশাল বড় বাগানে।
> জন্মের পর থেকে মায়ের কোলে নেচে দুলে দিন কাটিয়েছি।
> নীচ থেকে তোমরা আমার সৌন্দর্যের বহর দেখো।
> বয়সে যখন পরিপূর্ণ হই তখন শত চেষ্টা করেও আরতো পারিনা মায়ের কোলে থাকতে।
> নাদের আলী আমাদের প্রতিদিন দেখে আর ভাবে কবে নাগাদ গাছ থেকে পেরে বাজারে নেবে।
> পরের দিন আমাদের নিয়ে গেলো বাজারে।
> যেতে না যেতেই বিক্রি হয়ে গেলাম।
> কিনে নিলো আমাদেরে, বিশুদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে ঠাঁই দিলো ডাইনিং টেবিলের এক কোনে তাও আবার ফল কাটার চাকুর পাশে।আমরা তো ভয়ে কাবু।
> বাজার থেকে আমরা ভাইবোনেরা একেকজন একেক বাড়ীতে চলে যাই। কী বলবো দুঃখের কথা কেটেকুটে খেয়ে নিলো আমার ভাউবোনদেরে।
> থেকে গেলাম আমরা তিন জনে সেই ডাইনিং টেবিলে।মনে হয় আমরা তিন জনে রয়ে গেলাম অতি আদরে।কী জানি কী ভেবে রেখেদিলো আমাদেরে তিন জনকে
> সেই টেবিলের এক কোণে।
> এত যে আয়ু নিয়ে এসেছি এ ভবে ,
> জানিনা ভাবিনি তো কোন দিন এ বিযয়ে।
> টেবিলে বসে মানুষ বলাবলি করে
> ফরমালিন দেয়া আছে এদের শরীরে।
> শুনি আর কাঁদি জানিনা বাপু আমরা তো ছিলাম মায়েরই কোলে।
> ফরমালিন দিলে দিয়েছে আমাদেরে
> বাজারের সেই বিক্রেতা সজীব রাখার ছলে।
> জানো ? রং আমার দারুণ সুন্দর কমলার মতো প্রায়।
> রোদের তাপেও আমি কালো হইনি।
> এখনও আমরা সেই কবে থেকে যেমন ছিলাম তেমনি আছি এই টেবিলের কোণে।
> ওরা খুব ভালো মানুষ এখনও কেটে খায়নি আমাদেরে।
> শুধু হাসাহাসি করে আমাদের নিয়ে।
> যে আসে তাকেই দেখায় আমাদের তিনজনেরে।
> হঠাৎ কী যে হলো জানিনা, এতদিন তো এক রুপেই ছিলাম।
> দেখছি রুপে আমার ভাটা পরেছে, চুপসে গেছে শরীর।
> ত্বক হয়েছে খসখসে টেবিলেও শোভা পায় না আর।
> এ বাড়ীতে এসেছি ১০৬ দিন প্রায়।
> হয়তো এখন ডাস্টবিনে ফেলে দেবে চিরদিনের তরে।
> এতদিন পার করে দিলাম মানুষের ঘরে।
> যদি আমাদেরে রেখে দিত জাতীয় জাদুঘরে।
> সারাজীবন থাকতে পারতাম চিরদিনের তরে।
> তাহলে কী মজাটাই না হতো ফরমালিনের খবরটাও সব মানুষ প্রত্যক্ষভাবে জানতেও পারতো।
> কী জানি বাপু হয়তো করোনাও হতে পারে
> আমাদের শরীরে।।
> ছবি দেখে সবাই বুঝবে আমাদের মৃত্যুর কারণ।
> ফরমালিন নাকি করোনায় শেষ হয়েছে আমাদের জীবন।