প্রচ্ছদ

ঈদের গল্প : লকডাউনে ঈদ

  |  ২৩:২৩, মে ১৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী

সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায় রীতার। বিছানা ছেড়ে উঠে সে।
বাথরুমে ঢুকে। গোসল করে বের হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে
রোদের ইলিক ঝিলিক আলো দেখে। মনটা জুড়ে যায়। দূরে গাছে পাখির কলকাকলি। বাগানে ফুলের মেলা।
পাড়াটা নিরব,নিস্তব্ধ।আজ ঈদের দিন। নেই সেই পরিবেশ। রীতা মায়ের ডাকে ঘরে ঢুকে। মা রান্নাঘরে।
মা ঈদের নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন। রীতা পায়েস মুখে দিয়ে বলে,মা আজ ঈদের দিন। পাড়া নিরব,কেনো মা। মা বলেন,লকডাউনে সকলে ঘরে ঘরে। করোনায় এবার ঈদ ওলট পালট হয়ে গেছে মা।

তোমার বাবা ভায়েরা ঈদের জামাত ঘরে পড়ছেন।
এবার দোকান থেকে ঈদের জামা তো দেওয়া হলো না মা। আয় মা,বলে মা রীতা নিয়ে রুমে যান। আলমারী খুলে লাল টুকটুকে জামা তুলে দেন তার হাতে।
যা মা জামাটা পড়ে আয়।
রীতার চোখে মুখে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।মা দোকান তো বন্ধ, জামা কোথায় পেলে। মা বলেন,তোর ছোটো মামা ক’ মাস আগে কুরিয়ার পাঠিয়েছেন।আলমারীতে রেখে দিয়েছিলাম। মামাকে ফোন দেয় রীতা। ঈদের সলাম দেয়। সুন্দর জামার জন্য মামাকে ধন্যবাদ জানায়। মামা আদর জানিয়ে করোনায় সাবধানে চলার কথা বলেন ভাগ্নিকে। রীতা মা’র হাতে ফোন দিয়ে রুমে যায়। জামাটা পড়ে। আয়নায় দাঁড়ায়। বেশ মানিয়েছে জামায়। সেজেগুঁজে রুম থেকে আসে। মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মা বলেন,দারুন লাগছে রীতা। মা জড়িয়ে ধরে চুমু খায় গালে রীতা। বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই,বাবা বলেন,মা সুন্দর জামা। বেশ মানিয়েছে।

মামার সাথে আলাপ হয়েছে মা। মাথা নাড়ায় এক গাল হেসে রীতা। আবার ডাকেন মা। বাবাকে নিয়ে টেবিলে যায়। রকমারি খাবার রান্না করেছেন মা।টেবিলে সাজিয়ে রেখেছেন। মা বলেন,রীতা ভাইদের নিয়ে আয়।

রীতা ভাইদের ডেকে নিয়ে আসে। একসাথে বাবা মাকে নিয়ে ঈদের খানা খায় খোশ গল্প করে।
রীতা ফিরে আসে রুমে। আজ ক’মাস হলো ইশকুল ছুটি। সহপাঠীদের সাথে দেখা নেই। একে একে প্রিয় বান্ধবীদের ফোন দেয়। জমিয়ে আলাপ করে। কুশলাদি করে জেনে নেয় সবার খবর।ফোনে আলাপ শেষে বাবা মায়ের সাথে টেলিভিশনে নাটক দেখে। নাটক শেষে আসে খবর। খবরে করোনার খবর দেখে। মনটা জুড়ে ভয় বেড়ে যায়। আর কতদিন এ ভাবে থাকতে হবে।লকডাউনে অচল জীবনের চিত্র। প্রিয় মুখগুলো চোখে।

মনে পড়ে গত ঈদের কথা। কত হৈ-হুল্লোড় করেছে।
সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছে সাথীদের সাথে নিয়ে। ঈদ মেলায় ছুটাছুটি আনন্দে। ঈদের বর্ণিল সাজে
মাতোয়ার মন ছিলো উজালা। সেই ঈদ নেই এবার।

এবার দূরত্ব বজায় রেখে ঈদ করছে সবাই।ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়ছে। চরম উৎকন্ঠায় একেকদিন অতিক্রম করছে জীবন যাপনে। রীতা ভাবে, দিন কি আবার হবে স্বাভাবিক? আবার মেতে ওঠতে চায় আগের মতো আনন্দে। সেদিন আসুক ফিরে চায় রীতা। রীতা মন দোলে ওঠে অতীত স্মৃতির দোলনায়। সে কি সুখের দিনগুলো। শৈশব মনে পড়ে বেশি বেশি। মায়ের আর বাবার আদরের দিনগুলো। বাবা অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসেন হাতে করে চকলেট। মায়ের হাতের মায়ার পরশ ভুলার নয় আজও। ভাই বোনেরা মিলে বাসার আঙিনায় ছোটাছুটি। কানামাছি খেলা। সে কি অপূর্ব দিন। ঘরে লুডু ও ক্যারেম খেলা মিষ্টি মধুর সময়। কানে বাজে রঙ বেরঙের কথা। মায়ের সাথে আত্মীয়দের বাসায় বেড়ানোর রঙিন স্মৃতি। আজ হঠাৎ করে জীবনের ছন্দ থমকে দেয় করোনা। থমকে দেয় লকডাউনে বিশ্ব। শোকের ছায়ায়, শোকের কান্নায় বুকটা জুড়ে দুঃখ। শান্ত্বি নেই,অশান্তির ঝড়ে যেনো বিশ্বের সর্বত্র আজ।লকডাউনে আটকে গেছে চলমান জীবন।অফিসে ছুটি,ইশকুলে ছুটি,ছুটি আর ছুটি। সবখানে ছুটির ঘন্টার বাজছে ঘন্টা করুণ সুরে।

লেখক: আমেরিকা প্রবাসী; কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক।