প্রচ্ছদ

স্মৃতিতে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক আবু ইসহাক ও তার পরিবার

  |  ২০:২৮, মে ০৮, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

নুরুন নাহার মেরি

বাংলা সাহিত্য জগতের এক উজ্জল নক্ষত্র এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক নড়িয়ার শিরঙ্গল গ্রামের কৃতি সন্তান আবু ইসহাক।

Manual3 Ad Code

এই কিংবদন্তি মানুষটি আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ, প্রিয়জন ও শ্রদ্ধাভাজন। যিনি ছিলেন আমার পিতৃতুল্য, যার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভে আমার বেড়ে উঠা। কারণ ওনার একমাত্র আদরের মেয়ে আভা নাছরীন (হেলেন) ছিল আমার বাল্যকালের স্কুল সহপাঠিনী।

Manual6 Ad Code

তার ছোট দুই ভাই মোস্তাক কামীল ও ইসতিয়াক জামিল ইষ্টু। মোস্তাক ছিল আমার আপন ছোট ভাই তাহমিনুল ইসলাম, যার ডাক নাম ফিরোজ এর সহপাঠি। ইসতিয়াক জামিল ইষ্টু এখন এক মাত্র জীবিত সন্তান এই স্বনাম ধন্য পরিবারের ঐতিহ্য ও গৌরব ধারন করে চলেছে । ইষ্টু অত্যন্ত মেধাবি ও উদার চিন্তা চেতনা ও সুক্ষ জীবন বোধ সম্পন্ন একজন মানুষ । এক কথায় যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান ।বর্তমানে নরওয়ের বারগীন বিশ্ব বিদযালয়ে র প্রফেসার হিসেবে সু দীর্ঘ দিন যাবত কর্মরত । অর সন্হাস্পদ মোস্তাক কামীল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অকাল প্রয়ানে পাড়ি দিয়েছে না ফেরার দেশে । এবার
ফিরে আসি মূল বিষয়ে ,মূলত
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান এর করাচী শহরে তখন আমাদের অবস্থান ছিল , এবং প্রবাসী বাঙ্গালীদের জন্য একমাত্র বাংলা স্কুল Govt Secondary School for Bengali Girls স্কুলের ৫ম শ্রেণী থেকে হেলেন আমার সহপাঠিনী। এমনিতেই সহপাঠিনী তো আরো অনেকেই ছিল,কিন্তু দিনে দিনে বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম যে দু’ তিনজন,তার মধ্যে হেলেন ছিল অন্যতম।অন্যতম হওয়ার মূল বিষয়টি হল হেলেন ও আমি স্কুলের সাংস্কৃতিক চরর্চায় ছিলাম একছত্র , বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা , পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান কিংবা প্রবাসী বাংগালীদের মাধ্যমে আয়োযিত যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের দু’জনের উপস্হিতি ছিল অত্যাবশ্যকীয় । সত্যি কথা বলতে কি স্কুল কর্তিক আয়োজিত বিভীন্ন অনুষ্ঠান গুলতে আমাদের দু জনের অংশগ্রহণ ব্যতীত অসম্পূর্ণ থেকে যেত। অর্থাৎ হেলেন ও আমি দিনে দিনে হয়ে উঠেছিলাম স্কুলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল তারকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হেলেন পশ্চিম পাকিস্তানের ক্লাসিক্যাল নৃত্যের গুরু “ ঘনেশ শ্যাম”এর ছাত্রী ছিল , শৈশব থেকেই । প্রবাস নৃত্যাংগনে হেলেন এর যথেষ্ঠ সু-খ্যাতি ছডিয়ে পড়েছিল । এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে স্বরনীয় যে

শিশু নৃত্যশিল্পী হিসেবে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এর হাত থেকে নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরুষ্কার হিসেবে গোল্ড মেডেল’ লাভ করেছিল ।
আজ হেলেন আমাদের মাঝে নেই, ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই, এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে কিন্তু ওর সাথে কাটানো সেই স্বৃতিময় দিন গুলির কথা মনে পড়লেই অন্তর টা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে,আর দু চোখ বেয়ে ঝরে অশ্রু ধারা । কিছু, কিছু ঘটনাবালীর স্বৃতি চারন করতে গিয়ে মনে হয়, এই বুঝি সেই দিনের কথা! স্কুল জীবনে ৭/৮ শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রায় দিনই
স্কুল ছুটির পর হেলেন এর সাথে , চলে যেতাম জাহাঙ্গীর রোডস্থ ওদের বাসায় আর সেই সুবাদেই আবু ইসহাক খালুজান এর নৈকট্য লাভের সুযোগ প্রাপ্ত হই।

তখন শুধু সাহিত্ত্যিক হিসেবে নয় একজন মহান মানুষ হিসেবে,একজন আদর্শ পিতা হিসাবে,একজন সাহিত্যনুরাগী ব্যক্তি হিসেবে ই বেশী জেনেছি এবং চিনেছি।তদ্রুপ খালাম্মাকেও খুব কাছ থেকে পেয়েছি ওনার নিবিড় সান্নিধ্য।খালুজান যখন ওনার নিজস্ব বজগতে নিমগ্ন থাকতেন তখন খালাম্মা আমাদের বান্ধবীদের সাথে আড্ডায় শরীক হতেন খালুজান এর- ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ বইটি প্রকাশ হওয়ার পর যখন আলোড়নের ঝড় উঠল,তখন আমার বা আমাদের বান্ধবীদের মধ্যে সাহিত্য সংক্রান্ত তেমন কোন ধ্যান -ধারণা বা আগ্রহ সৃ্ষ্টি হয় নাই। এরই মধ্য খালু জান এক দিন নিজ হাতে বই এর একটি কপি আমার হাতে তুলে দিয়ে বল্লেন মা মেরী , বই টা ভাল করে পড়ো , আর পড়া শেষ হলে একদিন আমাকে জানাবে কেমন লাগল তোমার ? আর আমার সাথে বসে একদিন গল্প করবে , বই টা নিয়ে কেমন? আমি ত মাথা নেডে জী খালু জান , জী খালু জান বলেই ওনার সামনে থেকে কনো মতে কেটে পড়ি , তবে বই টা পেয়ে আমি ভীষন আনন্দিত হয়ে ছিলাম কারন খালু জান এর লিখা বই পড়ব, এই কথা ভেবেই তো আমি ভীষন আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম ।তবে ঐ দিন গুলতে আমি নিহারন্জন গুপ্ত ও শরৎচন্দ্র চট্রপধ্যায় এর বই এর প্রতি খুবই আসক্ত ছিলাম । যাই হোক বাসায় এসেই মার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে বই টা নিয়ে পড়তে শুরু করলাম কিন্তু কয়েক লাইন পড়েই আমি থমকে গেলাম , মনের অজান্তেই চেয়ার থেকে লাফ গিয়ে উঠে দাডাঁলাম আর বলে উঠলাম এ কি কান্ড ! খালু জান এত জ্ঞ্যানী , গুনী একজন লেখক হয়েও এই গ্রাম্য ভাষায় কেন বই লিখলেন ? এই বই তো বাজারে মোটেই চলবে না, কেউ পড়বে না এই বই । পরের দিন খুব হতাশা গ্রস্ত হয়ে হেলেন কে জিজ্ঞাসা করলাম , হেলেন খালু জান এই বইতে এই ধরনের গ্রাম্য ভাষা কেন ব্যবহার করলেন ? হেলেন উওরে আমায় বোঝাল এই জন্যই তো এত আলডিত হয়েছে । কিন্তু বই টা পড়ার আর কনো আগ্রহই রইল না কারন অনেক কথা বা শব্দ
ঠিক মত বুঝতেও পারছিলাম না । এর পর বহূ দিন খালু জান এর সামনে পডিনি , কৌশলে ঊনাকে কেবল এডিয়ে গিয়েছি দেখা হওয়া মাত্রই তো জানতে চাইবেন বই টি পডে কেমন লেগেছে ?

Manual8 Ad Code

কিন্তু কালের প্রবাহে ও সময়ের স্রোতে বই টি একদিন সত্যিই আমি গভীর মনোযোগ সহকারে পড়লাম এবং বুঝতে পারলাম, ক্ষনজন্মা এই মহাপুরুষই বাংলা সাহিত্য দিগন্তের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ২০০৩ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারী এই মহান কৃওিমান মানুষটি পৃথিবীর সকল মায়ার বাধঁন ছিন্ন করে চলে গেলেন পর পারে , সেই গন্তব্যে যেখান থেকে কেউ কোনদিন আর ফিরে আসে না । উনার মৃওুর পরের বৎসর অর্থাৎ ২০০৪ সালে মরনো্ওর “স্বাধীনতা দিবস পদক লাভ করেন । এবং উনার এই গৌরবময় অর্জনে বাংলা সাহিত্য দিগন্তের ইতিহাসে, সাহিত্যিক আবু ইসহাক হয়ে রবেন চির অম্লান, চির ভাস্বর । গভীর শ্র্দ্ধাভরে তাঁকে স্বরন করি এবং তাঁর বিদেহী আত্তার মাগফেরাত কামনা্ন্তে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা । তিনি আমাদের বাংলা ভাষা এবং বাংগালী জাতির গর্ব ও অহংকারের মূর্ত প্রতীক। সাহিত্যিক আবু ইসহাক স্বমন্ধে নরিয়ার আর এক কৃতি সন্তান জাহাজ্ঞীর কবীরের গবেশনা লব্ধ না জানা অনেক তথ্য উপাত্ত দিয়ে নূতন প্রজন্ম কে আলকিত কারার এই মহতি প্রয়াস ও প্রচেষ্টা কে আন্তরিক অভিনন্দন ও সাধু বাদ জানাই ।পরিশেষে মরহুম সাহিত্যক আবু ইসহাক , তাঁর সহধর্মিনী ছালেহা ইসহাক এক মাত্র মেয়ে আভা নাছরীন হেলেন ও বড় ছেলে মোস্তাক কামিল সহ সকল বিদেহী আত্তার মাগফেরাত কামনা করছি ও পরম করুনাময় আল্লাহ তালার নিকট প্রার্থনা করছি , তিনি যেন তাদের সকল কে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন । আমীন।

Manual6 Ad Code

লেখক: নুরুন নাহার মেরি
ভার্জিনিয়া, আমেরিকা ।

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code