প্রচ্ছদ

জীবনের কথা, পর্ব-২৬

  |  ১৫:০৬, জুন ২৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

বিনোদন জগতের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হবে মনে করে একটি ছবি তুলে রেখেছিলাম

:: মোঃ রহমত আলী ::

চিন্তা করেছিলাম এক। হয়ে গেছে আরেক। মানুষের জীবনের রহস্য বড়ই বিচিত্র। কখন যে কি হয়ে যায়, তা অনেক সময় বলা যায় না। অবশ্য পরিবেশ, পরিস্থিতি বা সময়ের প্রেক্ষাটেও কোন কোন সময় সেটা হয়ে থাকে। তবে পেশাগত বিভিন্ন ব্যাপারে অনেকের জীবনে পারিবারিক প্রভাব থাকলেও কেউ কেউ একটু ব্যতিক্রমী হয়ে যায়। আর তখনই তার মধ্যে আলাদা সত্ত¡া বিরাজ করে। আর সেটা নিয়েই তার পথ চলা শুরু হয় এবং ভবিষ্যৎ সেভাবে নির্ধারিত হয়।
বাংলাদেশের বিনোদন জগতের ঐতিহ্যবাহী পরিবার হচ্ছে, আবুল হায়াতের পরিবার। এ পরিবারের প্রায় সবাই অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তারা হচ্ছেন, তিনি নিজে ছাড়াও তাঁর বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত, বিপাশা হায়াতের স্বামী তৌকির আহমেদ, অন্য জামাতা শাহেদ শরীফ খান। কিন্তু তার ছোট মেয়ে নাতাশা এর বাইরে অন্য একটি পেশায়। সে ক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিষ্ঠিতও নাতাশা। তাই আজকে আমার আলোচনার বিষয় নাতাশা ও তার পরিবারকে নিয়ে।

আবুল হায়াত ও তার পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্য বিভিন্ন সময় বৃটেন সফর করেছেন। সেটা পেশাগত কারণে হয়েছে আবার অন্যান্য কারণেও হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৫ বছর আগে তাদের সাথে আমার দেখা হয় লন্ডনে। তখন অনেকটা অন্তরঙ্গভাবে মিশে যাওয়ারও সুযোগ সৃস্টি হয়েছিল তাদের সাথে। আমি সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার চেষ্টা করেছি ও দর্পণসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশের প্রচেষ্ঠা চালিয়েছি। তখন তাদের পরিবারের মধ্যে বিপাশা হায়াতের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় মাইলফলক স্পর্শ করা সে বিপাশার ছিল যেমন অভিনয়, তেমন মায়াবী চেহারা, তার সাথে অপরুপ সৌন্দর্য্য। মোট কথা, সব মিলিয়ে দর্শকদের কাছে যেন এক স্বপ্নের রানি হিসাবে ছিল তার অবস্থান। অনেক যুবকের হ্রদয়ের আরাধনার পাত্রি তখন বিপাশা। ছবিতে তাকে দেখে কল্পনার রাজকুমারী মনে করতো তার অনেক ভক্ত। আমার এক সহকর্মী তো ছিল তার জন্য পাগল প্রায়। টিভিতে তাকে দেখলে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিতো। কোন সময় তার কোন অঘটন দেখলে মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা হতো তার। কিন্তু আমি সেই জনপ্রিয় বিপাশাকে আবিষ্কার করলাম অন্যভাবে। তাকে যখন সরাসরি দেখলাম তখন কল্পনাই করতে পারেনি যে, এই বিপাশাই সেই বিপাশা- যাকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে আত্মহারা হয় অনেকে।

তাহলে বিষয়টা খুলেই বলি। লন্ডনের একটি নাটকে অভিনয় করানোর জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল বিপাশাকে। সে সময় তার বিয়ে হয়নি তাই, সাথে এসেছিলেন, পিতা আবুল হায়াত, মাতা মাহফুজা খাতুন শিরিণ ও ছোটবোন নাতাশা। নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে তারা এসেছিলেন। কারণ কিছুটা রিয়ার্সেল দিতে হয়েছিল নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার আগে। এমতাবস্থায় আমি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ গ্রহণ করি। ক্যামেরা হাতে নিয়ে চলে গেলাম যেখানে, যেখানে তারা যেখানে রিহার্সেল করছেন। আমার মধ্যে তখন যেন একটা আলাদা উদ্দীপনা কাজ করছিল। আর এ উদ্দিপনার একটি কারণ হল, তার সাথে দেখা হবে, অন্যটি হল, সম্ভব হলে একটি সাক্ষাৎকার নেওয় যাবে। সেখানে যাওয়ার পর রিহার্সেল স্থলে গিয়ে বসলাম ওয়েটিং রুমে। আমার সাথে তখন কেউ ছিলনা। তাই একাকী বসে বসে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সময় যেন অতিবাহিত হচ্ছিল না। তাই কিছুটা অস্থিরতা অনুভব করি। কিন্তু কারো কাছে তার সাথে দেখা করার কথা কাউকে লজ্জায় বলতেও পারছিলাম না আবার সইতেও পারছিলাম না। কারণ সেখানে আমার পরিচিত তেমন কেউ ছিলনা। হঠাৎ সেই ওয়েটিং রুমের একপশে বসে থাকা একটি মেয়েকে আমার অভিপ্রায়ের কথাটি উল্লেখ করলাম। আমার মনে হয়েছিল যে, সে হয়তো তাদের পরিবারের কেউ হবে। কারণ তার চেহারার সাথে বিপাশার চেহারার অনেকটা মিল আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। তাই কথাটা তাকে জিজ্ঞাসা করি।
আমার কথাটা শুনে মেয়েটি একটু হাসলো এবং এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু একটি মাত্র কথা বল্লো। কিন্তু আমি তার কাছ থেকে যেটা শুনলাম তাতে রীতিমতো হতবাক হয়ে যাই। চিন্তাও করতে পারি নাই যে, এতক্ষণ অপেক্ষা করার পর এ উত্তর তার কাছ থেকে পাব। মনে হলো তাকে আরো আগে জিজ্ঞাসা করলেতো আমার সেই অপেক্ষার পালা এত দীর্ঘায়িত হতো না। খামাখা এতক্ষন টেনশনে ছিলাম।

পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আমি যার সাথে আলাপ করেছিলাম সেই হলো আমার প্রতীক্ষার বিপাশা। যার প্রতিক্ষায় দীর্ঘক্ষণ আমি পিপাসার্ত ছিলাম। আসলে আমিতো তাকে এর পূর্বে আর কখনো ক্যাজুয়েল ড্রেসে দেখি নাই। সব সময় টিভির স্ক্রিনে দেখেছি। তাই আমার মধ্যে সেই ধারণা ছিল যে, বিপাশাকে আমি এক উজ্জল মূর্তি হিসাবে তখন দেখব। তাকে দেখে মনে হলো টিভির স্ক্রিন, মেকআপ মানুষকে যে কতটুকু বদলে দিতে পারে তা আমি তখনই অনুভব করলাম। অবশ্য তখন আর কোন ছবি তুলি নাই তার সাথে। তেমন কিছু আলাপও করি নাই। কারণ সে অবস্থায় একাকী তার সাথে আলাপ করার মত পরিবেশ ছিল না। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তার পিতার সম্মতিতে দেখা করে ছবি তুলে রেখেছিলাম।

এবারে আসি আমার লেখার মূল প্রসঙ্গে। আমি এরপর আরো একদিন সেখানে গিয়েছিলাম। এ সময় তার পিতা-মাতা ও ছোটবোন নাতাশা সেখানে ছিল। নাতাশার বয়স তখন ‘টিন এজ’ পর্যায়ে ছিল। আমি মনে করলাম, সেও হয়তো একদিন তার বোনের মতো জনপ্রিয় ও প্রতিষ্টিত শিল্পী হবে। তাই আগেভাগেই কাজটা সেরে ফেলি অর্থাৎ একটা ছবি তুলে রাখি। এরপর ছবিগুলি অ্যালবামে রেখে দিলাম। তারপর অনেকদিন অতিবাহিত হলো। বিপাশার বিয়ে হলো তৌকির ভাইয়ের সাথে। বিয়ের পর তাঁদের একত্রে অভিনয়কৃত অনেক ছবিও দেখলাম। কিন্তু নাতাশার অভিনয়ে আসার তেমন কোন আলামত দেখতে পেলাম না। তাই সে ছবিটি তোলা নিস্ফল হয়েছে বলে মনে করতাম। মাঝে-মাধ্যে এলবামে দৃস্টি গোচর হলেও তা আর তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি। সাথে সাথে আমার সে অভিপ্রায়ের কথাও কাউকে প্রকাশ করিনি।

অতিসম্প্রতি একটি পত্রিকায় নাতাশার একটি স্বচিত্র প্রতিবেদন আমার দৃষ্টিগোচর হয়। তখন আমার এলবামে থাকা তার সেই ছবি বের করে দেখলাম, তার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই তার বিয়েও হয়ে গেছে এবং শ্রীষা ওসাবীদ নামে দু‘টি সন্তানও আছে। বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখলাম তার সেই পূর্বের ছবি ও ২৫ বছর আগের ছবি। তবে আমি আশ^স্ত হয়েছি এই ভেবে যে, সে ছোটবেলায় বাবার নির্দেশনায় মঞ্চ নাটক ‘বিসর্জন’-এ প্রথম অভিনয় ও টিভিতে প্রথম নাটক ‘বন্দি’তে কিছুটা কাজ করে অভিনয়ে দিকে তেমন অগ্রসর না হলেও যার সাথে বিয়ে হয়েছে তিনি একজন জনপ্রিয় নাট্য শিল্পি। নাম শাহেদ শরীফ খান। অভিনয় সম্পর্কে তার মন্তব্য যেটা আমি জেনেছি সেটা হলো, “আমার বাবার আগ্রহেই আমি কিছুদিন অভিনয় করেছি। কিন্তু অভিনয়ে আমার মন টানেনি”। তাই ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে তার পারিবারিক পেশার বাইরে গিয়ে পরিবর্তন এনেছে। অবশ্য সেটাও বিনোদন জগতের সাথে সম্পৃক্ত। হয়তো আমার ধারণা সাথে মিল হয় নাই বটে কিন্তু সেটাও মন্দ কিসে। তাই তার জন্য শুভকামনা করি।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ ম্যাগাজিন সম্পাদক। ইমেইল: rahmatali2056@gmail.com