প্রচ্ছদ

একজন মুত্তাকী মানুষের চির বিদায়! কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের শোক

  |  ১৪:১৭, জুলাই ০৪, ২০২৩
www.adarshabarta.com

মখলিছুর রহমান:

লন্ডনে বসবাসরত জনাব হায়াত উল্লাহ গত ২৮শে জুন ২০২৩ সনে ঈদের দিন নিজ রবের সান্নিধ্যে চলে গেছেন যে রব কে না দেখে সারা জীবন সিরিয়াসলি ইবাদত করেছেন। তিনি তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। উনার মত সাধারণ শিক্ষিত এত পরহেজগার মানুষ খুবই কম দেখা গেছে। এখন পূর্বলন্ডনের গার্ডেন অফ পিচে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

জনাব হায়াত উল্লাহ সাহেবের দেশের বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার ৭ নং দক্ষিণবাণীগ্রাম ইউনিয়নের বাণীগ্রামে। পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম ১৯৪৩ সনে কিন্তু উনার বড় ছেলে মনে করেন উনার বয়স ৮৫/৮৬ হবে। শিক্ষা জীবন শেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলায়  প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সনে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে স্হায়ীভাবে ইউকেতে চলে আসেন। একটি নীটিং কোম্পানিতে ভাল পোস্টে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সনে সেই কোম্পানি থেকে রিডান্ডেন্সি পেয়ে যান। পরবর্তীতে আর তেমন কাজ করতে হয়নাই। ইসলামের খেদমতে জীবন কে বিলিয়ে দিয়েছেন।

বিবাহিত জীবনে তিনি ৫ মেয়ে এবং ৩ ছেলে সন্তানের জনক। আলহামদুলিল্লাহ ৫ মেয়েকে সুপাত্রস্ত করছেন এবং ছেলেদের মানুষ করেছেন। বড় ছেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া একজন কমিউনিটি একটিভিস্ট। সেই ছোট বয়স থেকে সামাজিক কাজে জড়িত। কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ছিলেন। মার্জিত, নম্র, ভদ্র মোহাম্মদ জাকারিয়া হোম অফিসের একজন সিনিয়র একাউনটেন্ট। মেজো ছেলে মোহাম্মদ কিবরিয়া ইউকে মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সে কাজ করেন। বর্তমানে পোস্টিং হল সৌদি আরব। ইউকে সৌদি এম্বেসিতে  পোস্টিং। ছোট ছেলে মোহাম্মদ ইয়াহিয়া একজন আলেমে দ্বীন। তিনি রিডিং সেন্ট্রাল মসজিদের হেড ঈমাম। বাবার জানাজা তিনিই পড়িয়েছেন।

জনাব হায়াত উল্লাহ একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। সত্তরের দশকে কানাইঘাট কমিউনিটির খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ ইউকেতে ছিলেন। জনাব হায়াত উল্লাহ পূর্বলন্ডনের সোলেন্ডার গার্ডেনে অনেক বড় ঘর নিয়ে থাকতেন সেই হেতু কানাইঘাটের নতুন কোন পরিবার ইউকেতে আসলে উনার ঘরেই উঠতেন। উনার মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন।

১৯৭৫ সনে গাছবাড়ী এলাকার স্বনামধন্য অলি এবং বুজুর্গ মাওলানা হরমুজ উল্লাহ ইউকেতে আসেন তাবলীগি কাজে। যিনি গাছবাড়ী মাদ্রসার প্রিন্সিপাল ছিলেন এবং পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশের তাবলীগের আমির হন। তিনি সেই বছর জনাব হায়াত উল্লাকে সাথে নিয়ে হজ্জ্ব করতে যান। হজ্জে অবস্থানকালীন ভারতের তাবলীগের বিখ্যাত বুজুর্গ মাওলানা ইউসুফের সানিধ্যে আসেন। মাওলানা ইউসুফ জনাব হায়াত উল্লাহর নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেন এবং হাবিব উল্লাহ নাম রাখেন। সেই থেকে তিনি অফিসিয়ালি হাবিব উল্লাহ হয়ে যান এবং পাসপোর্ট সহ সবকিছুতে হাবিব উল্লাহ নাম ধারণ করেন কিন্তু কানাইঘাটের মানুষের কাছে তিনি সেই আগের নামেই পরিচিত ছিলেন।

১৯৭৫ থেকে ২০০৪ সন পর্যন্ত তিনি পূর্ব লন্ডনের ক্রিস্টিয়ান স্ট্রিট তাবলীগি মসজিদের খেদমতে ছিলেন। এই মসজিদের একজন কি হোল্ডার ছিলেন এবং বিনা বেতনে মুয়াজ্জিনের  দায়িত্ব পালন করেছেন। সারাটি জীবন তিনি এই মসজিদে আজান, একামত দিয়েছেন এবং জামাতে নামাজ পড়েছেন। উনার আওয়াজ খবুই উচ্চ এবং সুমিষ্ট ছিল। তিনি একজন সুঠাম দেহের অধিকারী, সুদর্শন পুরুষ ও ছিলেন।

উনারা মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের নেতৃবৃন্দ। চেয়ারপারসন জনাব আজমল আলী, সেক্রেটারি জনাব জাকারিয়া সিদ্দিকী এবং ট্রেজারার জনাব ইমাদ উদ্দিন রানা এক শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসংতপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। শোক জানিয়েছেন ইসি এবং এসি কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ।

সমবেদনা এবং সহমর্মিতা প্রকাশ এবং শান্তনা দিতে গতকাল (৩রা জুলাই) উনার বড় ছেলের ইস্টহামের ঘরে যান কানাইঘাট কমিউনিটির অনেক নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রফিক আহমেদ, জনাব আজমল আলী, জনাব ইজ্জত উল্লাহ, জনাব কাউসার আহমেদ চৌধুরী, জনাব ইউসুফ আহমেদ মেম্বার, মোহাম্মদ মখলিছুর রহমন , জাকারিয়া সিদ্দিকী, ফারুক আহমেদ চৌধুরী, ইমাদ উদ্দিন রানা, হাসান রাজা, এবং সেবুল আহমেদ। মরহুমের জীবন থেকে আলোচনা, কোরআন থেকে তেলায়াত এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্টিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা রফিক আহমেদ।

আল্লাহ দুনিয়ার এবং আখেরাতের সুন্দর্য্য পাওয়ার জন্য আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন। জনাব হাবিব উল্লাহ কে আল্লাহ দুনিয়ার সকল সুন্দর্য্য দান করেছেন। মুত্তাকিদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত বলে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ  ঘোষণা দিয়েছেন। জনাব হাবিব উল্লাহ একজন মুত্তাকী, পরহেজগার মানুষ ছিলেন। সর্বজন বিদিত তিনি একজন ভাল ও পরোপকারী  মানুষ ছিলেন।

আমরা আশা করব আল্লাহ উনার সব ভাল কাজকে যেন কবুল করেন, উনাকে ক্ষমা করে দেন, বিনিময়ে জান্নাতের সর্বোচ্চ সীমায় যেন আসীন করেন।

পরিবারের সকলের প্রতি আমাদের সমবেদনা, আল্লাহ যেন সবরে জামিল দান করেন। আল্লাহ্হুম্মা আমিন।