প্রচ্ছদ

লন্ডন টু ক্যাম্বার স্যান্ডস বিচ : কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে’র সদস্যদের সমুদ্র বিলাসে উদ্বেলিত একটি দিন

  |  ২৩:১৪, আগস্ট ২৩, ২০২১
www.adarshabarta.com

দেলওয়ার হোসেন সেলিম :
বৈশ্বিক এই দুঃসময়ে অন্য অনেক কিছুর মতোই থমকে গেছে পর্যটন বা বিনোদন শিল্প। বাংলাদেশ, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য-সব জায়গায় বিনোদন জগৎ এক বড় ধাক্কা খেয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দেশ বিদেশের সব ধরনের কার্মকাণ্ড বন্ধ ছিলো। দীর্ঘ কয়েক মাস লকডাউন শেষে অবশেষে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা ফ্রীডম মুভমেন্ট পেয়েছেন। এখানে সম্প্রতি বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন কার্যক্রম বেশ জোরে শোরেই চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্বের বিধিবিধানের কথা মাথায় রেখে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করা হয়েছিলো লন্ডন টু ক্যাম্বার স্যান্ডস বিচ। পরবাস জীবনের ব্যস্ততার চাপ কাটাতে লন্ডন প্রবাসীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় প্রাণবন্ত আনন্দ ভ্রমণের।
কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে’র উদ্যোগে ২২ আগস্ট ২০২১ (রবিবার) দিনব্যাপী এ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। দেশটির ক্যাম্বার স্যান্ডস সমুদ্র সৈকতে জাঁকজমকপূর্ণ আনন্দ ভ্রমণ অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক দফা করোনার তান্ডব এবং ব্যাস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি নিতে এই সমুদ্র ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছিলেন বহু প্রবাসীরা। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রবাসীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সামার সিজনের কিছুটা তাপদাহের মাঝে সমুদ্র ও পাহাড়ি এলাকায় শীতল হাওয়ায় স্বস্তি এবং আনন্দের মধ্যে সময় কাটান ভ্রমণ পিয়াসী প্রবাসীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় সবাই বাস যোগে যাত্রা শুরু করেন ইস্ট লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলে অবস্থিত তানজিল অফিসের সামনে থেকে। ডে ট্রিপ বাস্তবায়ন উপকমিটির পক্ষে এসময় সকলকে স্বাগত জানান হসপিটালিটি সেক্রেটারী সালিক আহমদ।
কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে’র সদস্যদের সমুদ্র বিলাসে উদ্বেলিত এ দিনে সন্মানিত অতিথি হিসাবে সাথে ছিলেন সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা মাওলানা রফিক আহমদ রফিক এবং উপদেষ্টা ব্যারিস্টার কুতুবউদ্দিন শিকদার এমবিই। তাঁরা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, এমন আয়োজনের মাধ্যমে,সকলের জন্য আনন্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসে নিজেদের মধ্যে বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ সম্পর্ক কর্মব্যস্ত জীবনে প্রশান্তি সৃষ্টি করে এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তাই সকলের সম্মিলিত আয়োজনগুলো হয়ে উঠবে আপনজনের মিলনমেলায়। তাঁরা কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের ইসি কমিটির নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে চেয়ারপার্সন নাজিরুল ইসলাম বলেন, আপনারা প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশকে ভালোবাসুন; শিল্প-সংস্কৃতিকে ভালোবাসুন। এ দেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে লালন করুন, একে পৃষ্ঠপোষকতা করুন। সেই সঙ্গে নিজের ছেলেমেয়েদেরও বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করুন।
সেক্রেটারী মোহাম্মদ মখলিছুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, লন্ডনে বসবাসরত সিলেট তথা কানাইঘাটবাসীদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিকতার সাথে আদর্শবান মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশ বিদেশে আমাদের জন্মভূমির বহু মানুষ সমাদৃত এবং মেধা মননের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এজন্য আমরা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি। তিনি প্রবাসে কর্মব্যস্ত জীবনে একটু অবসরের স্বাদ নিতে সবাই অংশগ্রহণ করে ডে ট্রিপ সফল করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ট্রেজারার আহমদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনেক। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের রেমিটেন্স দিয়ে আমাদের অর্থনীতি আজ সমৃদ্ধ। প্রবাসীদের শ্রমের ফলে যেমন প্রবাসী আত্নীয় স্বজনদের উন্নতি তেমনি দেশেরও উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের নাড়ির টানে প্রবাসেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
চলন্ত বাসে অনুষ্ঠিত হয় কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকের ইসি মিটিং। সেক্রেটারী মোহাম্মদ মখলিছুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারপার্সন নাজিরুল ইসলাম। হাফিজ জয়নুল আবেদীন চৌধুরীর সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সুচিত ইসি মিটিংয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা হয়। মুখরোচক নাস্তা পরিবেশন করা হয়।
যান্ত্রিক শহর লন্ডন থেকে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে সবুজ ছায়া ঘেরা, পাখি ডাকা ক্যাম্বার স্যান্ডস এরিয়াতে বাস থেকে নেমেই যোহরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা হয়। সাথে নেওয়া রকমারি আইটেম দিয়ে লাঞ্চ করা হয়। সুস্বাদু খাবার খেয়ে সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।

এরপর কাপড় চোপড় পরিবর্তন করে বিস্তৃত বালুকাময় সৈকতে নামেন। পরিষ্কার বালি এবং নিরাপদ স্নান জলের সমুদ্র সৈকতে বিপুলসংখ্যক মানুষ সারিবদ্ধভাবে হৈ হুল্লোড় করে সৈকতে নেমেই লবনাক্ত পানিতে সাঁতার কাটা শুরু করেন। আমরাও তাই করেছি মনের আনন্দে। একপর্যায়ে শুরু হয় আমাদের মধ্যে হ্যান্ডবল খেলা। বালিতে দুই পক্ষ হয়ে রশি টান প্রতিযোগিতা, বালিতে দৌড়ানো, ফটোসেশন ইত্যাদি। অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিকতায় সমগ্র অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মানুষ একত্র হয়ে ক্যাম্বার স্যান্ডস এলাকায় উৎসবে মেতে উঠেন। সব মিলিয়ে উৎসব স্থলটি হয়ে উঠেছিলো যেনো একটুকরো বাংলাদেশ।
দারুণ বালুচর দ্বারা সমর্থিত, ক্যাম্বার স্যান্ডস একটি সুদৃঢ় সৈকত যেখানে নরম সোনালী বালি প্রায় ৭ মাইল। ইংল্যান্ডের ইস্ট সাসেক্স উপকূলে একটি বিশিষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এলাকা। একটি বিস্তৃত বালুকাময় সৈকত। তার পরিষ্কার বালি এবং নিরাপদ স্নান জলের জন্য লন্ডন থেকে কেম্বার স্যান্ডসে যেতে পারেন ট্রেন যোগে। সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল থেকে।

যাঁদের সরব উপস্থিতিতে এই মিলন মেলা মুখরিত হয়ে ওঠে, তাঁরা হলেন :

কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে’র চেয়ারপার্সন নাজিরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা মাওলানা রফিক আহমেদ, উপদেষ্টা ব্যারিস্টার কুতুবউদ্দিন শিকদার এমবিই, সাবেক সেক্রেটারি আজমল আলী, সহ সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক, সাবেক সেক্রেটারি ও বর্তমান সহসভাপতি লেখক প্রাবন্ধিক সাদেকুল আমিন, ইসি মেম্বার মুজিবুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন, সেক্রেটারী মোহাম্মদ মখলিছুর রহমান, ট্রেজারার আহমেদ ইকবাল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফারুক আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সেক্রেটারি ও বর্তমান সহসভাপতি শোয়াইবুর রহমান, বিলাল আহমদ, সাবেক ট্রেজারার ও বর্তমান এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জাকারিয়া সিদ্দীকি, ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি নুমান আহমদ পাটওয়ারী, হসপিটালিটি সেক্রেটারী সালিক আহমদ, এসিস্টেন্ট ট্রেজারার একাউন্টেন্ট সোলেমান আহমদ পাটওয়ারী, জামাল উদ্দিন, এসিস্টেন্ট ট্রেজারার এমাদ উদ্দিন রানা, আবুল হারিছ, তানভীর খান বাবুল, তাহের উদ্দিন, পাবলিসিটি সেক্রেটারি আতাউর রহমান, সুলতান আহমদ, হাফিজ জয়নুল আবেদীন চৌধুরী, ফাহাদুল আমিন, আজমল হোসাইন, জাকির হোসেন মিল্লাদ, রইছ উদ্দিন, তাহমিদুল ইসলাম, আনওয়ার হোসেন, ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, নাজমুল ইসলাম চৌধুরী, হাফিজ কাওসারুল আম্বিয়া, রেজাউর রহমান, শাহিনুল হক, নাজমুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, ইউসুফ আহমদ মেম্বার, মোস্তফা কামাল, শামীম আহমদ, তাজুল ইসলাম, উমর আলী, নাজমুল, আব্দুস সামাদ, রেজাউল করিম রেজা, সাংবাদিক দেলওয়ার হোসেন সেলিম প্রমুখ।
লং জার্নির সময় বাসে মাইক্রফোনের সাহায্যে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালনে সেক্রেটারীকে সহায়তা করেন ট্রেজারার আহমদ ইকবাল চৌধুরী। ফটোগ্রাফার ছিলেন সাবেক ট্রেজারার জাকারিয়া সিদ্দিক। ফিরে আসার সময়ে বাসে হামদ, নাত, দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে মাতিয়ে রাখেন অংশগ্রহণকারী অনেকেই।
সমুদ্রের নীলজলে সাঁতার, জলকেলি, অসীম আকাশের হাতছানিতে ভেসে বেড়ানোর আনন্দ ভাগভাগি করে পড়ন্ত বিকেলে ফিরে আসার সময় ঘনিয়ে এলো লন্ডনে নিজ নিজ আবাসনে। সমাপ্ত করার প্রস্তুতি নিতে হলো কানাইঘাট এসোসিয়েশন ইউকে-এর সামার ডে ট্রিপ। প্রকৃতি যেন মিশেছিল এদিন সকলের মনজুড়ে আর মেলা বসেছিল অর্ধশত প্রবাসীর কুশল উচ্ছ্বাসে, সমুদ্রবিলাসে উদ্বেলিত ছিলেন সকলেই। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি বিভিন্ন খেলাধুলা ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি রঙিন হয়ে উঠেছিলো। দিন শেষে সবার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় ক্লান্তি অথচ প্রশান্তির ছায়া। সন্ধ্যার আগেই নিজ শহর লন্ডনে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রাণবন্ত সেই আনন্দ ভ্রমণের।