প্রচ্ছদ

ঐতিহাসিক সাত লাইড়্যার ইতিহাস ও আমার কিছু স্মৃতি

  |  ১৪:০৮, জুন ১৮, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual5 Ad Code

:: আবু সালেহ আহমদ ::

Manual3 Ad Code

বানিয়াচঙ্গ রাজাদের স্মৃতি বিজড়িত একটি এলাকার নাম ঐতিহাসিক সাত লাইড়্যা।
এলাকার মানুষ এটিকে ডাকে হাত লইড়্যা বা কালাদেও হিসেবে জানে। ঐতিহাসিকদের মতে সাত বীরের কাহিনী কে কেন্দ্র করে এই এলাকার নামকরণ করা হয় সাত লাইড়্যা। আমার বাড়ির সন্নিকটে (বানিয়াচঙ্গ শেখের মহল্লা) এর অবস্থান থাকায় এর ইতিহাস ও স্মৃতিবহুল অনেক ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তুলে সবসময়।

এর কাছেই রয়েছে, ক্ষিনাঙ্গী নদীর মতো গড়ের খালের কিয়দংশ। খালটি বর্হিশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য লাউড়ের রাজা হবিব খাঁ তাঁর রাজধানী রক্ষার জন্যে গ্রামের চারি দিকে এই খাল খনন করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক অনেক তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে এই খাল পেড়িয়ে,কখনো নৌকায়, কখনো ভিজে (সাতরিয়ে) কৃষকেরা তাদের গরু গুলোকে সকালে স্নান করিয়ে হাল চাষের জন্য নিয়ে যেতেন মাঠে। অগ্রহায়ণ মাসে ধান বোজাই করা গরু মহিষের গাড়ি গুলোকে খালের পাড়ে আটক করে ভাড় অথবা মাথায় বোঝাই করে ধান নিয়ে আসতে হতো নিজ নিজ বাড়িতে। (খালের ইতিহাস পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে)।
গড়ের খালের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে একটি বিরাট খেলার মাঠ। এই মাঠে আমরা সমবয়সী ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেকেই খেলেছেন গোল্লাচুট, দাড়িয়া বান্দা, কানামাছি, নানধাইড়, হাডুডু, দাড়াগুটি সহ অনেক লোক-খেলা। এই মাঠে ফুটবল খেলা শুরু করে শেষ পর্যন্ত অনেকই সুনাম কুড়িয়ে গেছেন দেশে বিদেশে।
মাঠ ঘেঁসেই চলে গেছে শরীফ উদ্দিন সড়ক বানিয়াচঙ্গ হতে আজমিরীগঞ্জে।

Manual1 Ad Code

মাঠের অন্যদিকে ঐতিহাসিক সাত লাইড়্যা এখন শুধু স্মৃতি। এর ইতিহাস সম্পর্কে বানিয়াচঙ্গের ইতিহাস ও কিংবদন্তী গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাজা কেশব মিশ্রের জনৈক বংশধর রাজা পন্মনাভের সাত পুত্র সবাই ছিলেন বীর যোদ্ধা। লাউড়ের অধীনে তখন কুরশা, জন্তরী, পাইকুড়া, সতরসতী, শোনাইত্যা, জলসুখা, বিথঙ্গল, মোড়াকৈর এবং সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সমুদয় পরগণা বিস্তৃত ছিল। জালালাবাদের কথা গ্রন্থ থেকে জানা যায়,” বানিয়াচঙ্গ এর রাজারা তৎকালীন মুসলিম শাসককে ৪৮ খানা রণতরী যোগান দিতেন….। ঐতিহাসিকদের ধারণা তৎকালীন লাউড় রাজ্য বহ্মপুত্রের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইনী আকবরী গ্রন্থে এই রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।” রাজা পদ্মনাভের পরবর্তি বংশধর রাজা গোবিন্দ সিংহের সাথে জগন্নাথপুরের রাজাদের তখনকার সময় প্রায়ই খন্ড খন্ড যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকতো । এই সময় রাজা হবিব খাঁ শুনতে পেলেন বংশিপ্যাতে রাজা গোপী চাঁদের জনৈক বংশধর এক লোক নিজকে স্বাধীন জমিদার ঘোষণা দিয়ে বসবাস করছেন।

Manual6 Ad Code

তখন গড়ের বাইরে উচুস্থান বুরুজ পাড়া নামক স্থানে (বর্তমান সাত লাইড়া নামক স্থানে) বংঙ্গের বীর যোদ্ধাকে আসতে বলা হয়। বঙ্গের জমিদার সাত জন সৈন্যকে পাঠালেন। তখন বানিয়াচঙ্গের দু জন বীর যোদ্ধা একটা খুটি গেড়ে বললো, এটা যদি তোমরা সাত বীর তুলতে পার, তোমরাদের সাথে কোনো যুদ্ধ হবেনা। অন্যতায় তোদেরকে বশ্যাতা স্বীকার করে জমিদারী করতে হবে। সাত বীর চেষ্টা করেও যখন খুটি তুলতে পারেনি তখন তারা গিয়ে জমিদারের কাছে বানিয়াচঙ্গের রাজার শক্তির বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করলেন, জমিদার বশ্যাতা স্বীকার করে নেন ।পঞ্চাশ/ষাট উর্ধ্ব অনেক লোকে এই খুটি দেখেছেন বলে জানা যায়।

পূর্বে এই সাত লাইড়্যা এলাকা প্রচুর ঝোপ-জঙ্গল বেষ্ঠিত ছিল এবং প্রচুর বেত উৎপন্ন হত। মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এখানে দেও- দানব, জিন-পরি, ভূত-পেতনীর বাসস্থান ছিল। তাই ভয়ে অনেক সময় দিনের বেলায় মানুষ সেদিকে যেতনা । চার দিকে জঙ্গলের মধ্যে স্থলে ছোট একটা পূকুর ছিল। বর্তমানে মহল্লাবাসী এই পূকুর খনন করে বিরাট আকারে প্রসস্থ করছেন।

অতীত স্মৃতি বিজড়িত এই এলাকায় মাঝে মধ্যে আমার যাওয়ার সুযোগ ঘটে এখনো। এস টিভি আমার উপর ডকুমেন্টারীর অনেকটাই সেখান থেকে ধারণ করে ছিল। সব স্মৃতি ভুলা গেলও একটি ঘটনা আমাকে হৃদয়ে আজও আন্দুলিত হয়। সাত লাইড়্যাতে ঘুরতে গেছি, এমন সময় হঠাৎ ছাতা মাথায় জরিফ নামে একটি লোক দৌড়ে এসে বললো,”ও বা সাংবাদিক ভাই, তোমার সাথে একটা ছবি তুইল্যা রাখি রে-বা , যদি মইড়্যা যাই”। লোকটি ঠিকই মাস তিনেক পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।।


লেখক: কবি, কলামিস্ট ও লোক গবেষক।

Manual5 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code