প্রচ্ছদ

জরিপের আলোকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০

  |  ০৯:১৩, অক্টোবর ২৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual3 Ad Code

:: তানিজা খানম জেরিন ::

আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ২০২০ নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী। সর্বশেষ রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্সের জনমত জরিপ অনুযায়ী ডেমোক্রেটিক দলীয় সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র ১০ পয়েন্ট এগিয়ে আছে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জন ট্রাম্প থেকে। নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্হার কোন জনমত জরিপেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন কে পিছনে ফেলতে পারেনি। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের পরও জো বাইডেন বিবিসি ও সিএনএনের জরিপে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ১০ পয়েন্ট এগিয়ে ছিল । উল্লেখ্য ১৫ ই অক্টোবর যে প্রেসিডেন্সিয়াল ভার্চুয়াল দ্বিতীয় ডিবেট হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। একদিকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন করোনা আক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সরাসরি ডিবেট করতে অস্বীকৃতি জানান অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভার্চুয়াল ডিবেট করতে অনীহা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য তৃতীয় ও শেষ ডিবেট ২২শে অক্টোবর শেষ হয়েছে ।যদিও ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনামুক্ত হলে সরাসরি ডিবেটচি অনুষ্ঠিত হয় ।এক প্রকাশিত ফ্রিডম ওয়াচ জরিপেও দেখা যায় ইলেক্টোরাল ভোটেও জো বাইডেন এগিয়ে আছেন। এ জরিপেও দেখা যায় ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন পাবেন ২৬৯টি ইলেক্টোরাল ভোট অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেন ১৬৯টি ইলেক্টোরাল ভোট। যদিও ফ্রিডম ওয়াচ চারটি অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি রাজ্যগুলো হল টেক্সাস, পেনসেলভেনিয়া, ওহাইও এবং ফ্লোরিডা কিন্তু এই অঙ্গরাজ্য গুলোতেও জো বাইডেন এক থেকে দশ পয়েন্টে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন। উল্লেখ্য ২০২০ আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে উপরোক্ত চারটি সহ আরো দুই/তিনটি অঙ্গরাজ্যের ভূমিকাই নির্বাচনী ফল নির্ধারণের সহায়ক হবেন। এই কথা অনস্বীকার্য আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনমত জরিপ সম্পূর্ণ সত্য বলে গণ্য করা হয়না তথাপি অনেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই দেখা গেছে জনমত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী প্রার্থীরা পুপুলার ভোটে অবশ্যই এগিয়ে থাকেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করেন; আবার অনেক ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল ভোটের মারপ্যাচে অনেক বেশী পুপুলার ভোট পেয়েও প্রার্থী হেরে যান। লক্ষণীয় বিষয় হল প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে দুই দলেরই অর্থাৎ গাধা এবং হাতি মার্কা ৪০% ভোট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দুই প্রার্থীর নিশ্চিত ভাবে সংরক্ষিত থাকে। অর্থাৎ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের সম্পূর্ণ ভোট ডেমোক্রেট দলীয় এবং বাকী অঙ্গরাজ্যের সম্পূর্ণ ভোট রিপাবলিকান দলীয়। প্রতিটা প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনেই সুইং স্টেট হিসেবে পাঁচ থেকে আটটি অঙ্গরাজ্যের ভোট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার-জিতের চূড়ান্ত ভূমিকা রাখে ।

আমেরিকার গঠনতন্ত্রে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের বিষয়টি উল্লেখিত না থাকলেও আধুনিক যুগে এটি নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যাম্ভবী অংশ হিসেবে বিবেচিত উল্লেখ্য একটি ননপ্রফিট সংস্হা ‘কমিশন অব প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ (সিপিডি) এই ডিবেটের আয়োজন করে থাকে। ডিবেটটি স্পন্সর করে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি। প্রেসিডন্সিয়াল নির্বাচনে ছয়টি ডিবেট দেখার আমার সুযোগ হয়েছে কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ২০২০ নির্বাচনে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যে ডিবেট দেখেছি মনে হয়েছে তিন পক্ষের একটি তর্কাতর্কি অনুষ্ঠান; না ছিল কোন নিয়মনীতির বালাই না ছিল কোন তার্কিক যুক্তি – খণ্ডন, দুই প্রার্থীসহ সঞ্চালকের ত্রিমূখী একটি সম্মুখ সমর যুদ্ধ। বর্তমানে করোনা সঙ্কটে গৃহঅন্তরীণ প্রায় সাড়ে সাতকোটি মানুষ এই হতাশাজনক ডিবেটটি দেখেছেন। এই প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল রাবিশ ডিবেটের পরেও ডেমোক্রেটিক পার্টি জো বাইডেন ১০ পয়েন্ট এগিয়েছিলেন; যা সিএনএনের তাৎক্ষণিক জরিপে প্রকাশিত হয়েছিল। আরো উল্লেখ্য প্রথম ডিবেট বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাস্হ্য পরিকল্পনা,পরিবেশ দুষণ রোধ ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলা পরিকল্পনার বিষয়ে তার কোন সঠিক টেকসই পরিকল্পনা পেশ করতে পারেনি। এমনকি বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসকদের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে করেছেন উপরন্তু জো বাইডেন যখন উন্নত টেকসই সূদুরপ্রসারী টেকসই পরিকল্পনা বলতে চেয়েছেন তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেন কে বাঁধা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন। অনেক আনন্দের কথা বিশ্ববাসী দ্বিতীয় ডিবেটটি না হওয়াতে স্বস্তিতে একটি রাত ঘুমাতে পেরেছেন ।

Manual7 Ad Code

আমেরিকার বর্তমান ৪৫তম প্রেসিডন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচন বানচালের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এমনকি নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি ক্ষমতা ছাড়বেননা বলে ঘোষনা দিয়েছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে অগ্রিম ভোটের যে ব্যবস্হা রয়েছে সেটা বাঁধাগ্রস্ত করতে পোষ্টাল ডিপার্টমেন্টের মহা-পরিচালক কে বদলিয়ে কিছু নিয়ম কানুনের পরিবর্তন করে বাঁধার সৃষ্টি করেছিলেন। এমন কি ডাক যোগে ভোট দেওয়ার পরও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আবার ভোট দেওয়ার আহব্বান জানিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। আরো উল্লেখ্য নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্হ্যবিধি না মেনে উপরন্তু মাস্কবিহীন অবস্হায় জনসমাবেশে যোগ দিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি করেছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও হাসাপাতাল থেকে বিশেষ ব্যবস্হায় জনসমাবেশে দেখা দিয়ে দিয়েছেন।

Manual6 Ad Code

আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন আসলেই প্রার্থীদের চরিত্র হননের এক ভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয় পাশাপাশি দুর্নীতি ও অপকীর্তির খবর গুলো সব মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করে। এটাও চরম সত্য কথা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৬ -২০১৭) অর্থবছরে মাত্র ৭৫০ ডলার করে ট্যাক্স প্রদান করেছেন অপরপক্ষে জো বাইডেন ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন তিন লাখ ডলার। আরো চরম সত্য কথা হল মূল দুজন প্রার্থী ইসরাইলের ব্যাপারে যেমন বিশেষ নমনীয় ঠিক তেমনই চায়নার ব্যাপারে দুজনই সমভাবে খরগহস্ত। যদিও ইতোমধ্যে পরিবেশ ও জলবায়ু সংস্হা থেকে আমেরিকা অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাম প্রত্যাহার করেছেন; অপর প্রার্থী জো বাইডেন পরিবেশ ও জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে বাজারে আসার সম্ভাবনা ছিল সেটা নিয়েও বর্তমান প্রেসিডেন্ট সময়ক্ষেপণ অথবা তার কুমতলব আমেরিকার জনগণ বুঝে ফেলেছেন। উপরন্তু করোনা সঙ্কটে দ্বিতীয় স্টিমুলাস প্রোগ্রাম নিয়েও টালবাহানা আমেরিকার জনগণ ভালো চোখে দেখে নাই। উপরন্তু করোনা মোকাবেলায় সূদুরপ্রসারী টেকসই পরিকল্পনা দ্রুত না নেওয়ার জন্য আমেরিকার সাধারণ জনগণ বর্তমান প্রেসিডেন্ট কে দায়ী করেন। অপর পক্ষে অন্য প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাঁধার মুখে তার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা পেশ করতে পারেনি এরজন্য সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ এবং হতাশ হয়েছেন দুই দলের সমর্থকরাও। জনমত জরিপেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নয়; জরিপ হল ভোটারদের প্রাথমিক মতামত। জনমত জরিপ প্রার্থীদের গতি-বিধি ভবিষ্যত পরিকল্পনা, নির্বাচনী ইশতেহার এবং রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ঘটনার সাথে সম্পর্কিত তাই জরিপের ফলাফল ক্ষণেক্ষণে উঠা-নামা করে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নানা ঘটনা ঘটবে এটা যেমন চরম সত্য নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অনেক চমক আসবে এবং জরিপের ফলাফল অবশ্যই কম-বেশী হবে। কথা হল আমেরিকান জনগণ যাতে সঠিক ভাবে ভোটটি দিতে পারে সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা সম্পন্ন হয়; গণতান্ত্রিক ব্যবস্হার আসল প্রবক্তা এই আমেরিকার ২০২০ নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসী তাকিয়ে আছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল হোক; নির্বাচনে যিনিই জিতে আসুক অগ্রিম অভিনন্দন।

Manual2 Ad Code

(লেখক: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।)

Manual1 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code