প্রচ্ছদ

৭ মার্চ বংগবন্ধুর ভাষন ও আমার অহংকার

  |  ১৪:০৫, জুলাই ৩১, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual1 Ad Code

মুজিব বর্ষে স্মৃতির পাতা থেকে

Manual2 Ad Code

:: মকবুল হোসেন তালুকদার ::

Manual3 Ad Code

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ৭ই মার্চ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এইদিন বিশ্বের মেহনতি মানুষের বিপ্লবী কন্ঠস্বর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ কোটি মুক্তিকামী বীর জনতার উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন।আমরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ঐ জনসভায় যোগদান করবো বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতে ৬ই মার্চ আমাদের সোহরাওয়ার্দী হল থেকে আমি, সাইফুল,নিজাম,মতিন,গিয়াস, রফিক,চন্দ,আরেফিন,আফজাল, মুরাদ সহ ২০/২৫ জন দল বেঁধে রাএের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। সারা রাস্তার প্রায় প্রত্যেক ষ্টেশন থেকেই হাজার হাজার বীর জনতা ট্রেনে উঠার ফলে ট্রেনে দাড়িয়ে থাকার মতোও স্হান ছিলনা।লোক সংখ্যার চাপে ট্রেনও খুব ধীর গতিতে চলতে থাকে।সকাল ১০-১০:৩০ টার দিকে কমলাপুর ষ্টেশনে নেমে ওখানেই গোসল হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা সেড়ে পায়ে হেটে রেসকোর্স ময়দানের দিকে রওনা দেই এবং সভাস্হলে হাজির হই বেলা আনুমানিক ১:০০-১:৩০ টার দিকে। তখন রেসকোর্স ময়দান লোকে লোকারন্য। কোনভাবে এদিক সেদিক ধাক্কা দিয়ে জায়গা করে নিয়ে এক পর্যায়ে সভা মন্চের খুব কাছা কাছি চলে যাই।মাথার উপর হেলিক্পটার চক্কর দিচ্ছে। ধারনা করছিলাম সভায় আগত স্বাধীনতাকামী জনতাকে ভয় দেখানোর জন্যই পাকিবাহিনী এধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে।

এরই মধ্যেই এলো সেই মহেন্দ্রক্ষন। বীরদর্পে বংগবন্ধু শেখ মুজিব প্রথমে সামান্য হেটে এবং পরে সিড়ি বেয়ে মন্চে এসেই উপস্হিত লক্ষ জনতাকে অভিবাদন জানিয়ে চিরায়িত বজ্র কন্ঠে বলে উঠলেন,” ভায়েরা আমার, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম,……., কি অন্যায় করেছি আমরা,……… আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবা, মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো, দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনসাল্লাহ। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল …., এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা”। বংগবন্ধু সেদিন ধরেই নিয়েছিলেন যে স্বাধীনতা ঘোষনা দেয়ার সাথে সাথেই পাকি হায়নারা সভাস্হলেই তাঁকে মেরে ফেলতে পারে এবং আমরাও শংকিত ছিলাম। তাইতো বংগবন্ধু জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবীর ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ঠ ভাষনটি দিয়েছিলেন। সভায় আগত লক্ষ জনতার পিনপতন নিরবতার মধ্যে একাগ্রচিওে বংগবন্ধুর ভাষন শুনছিলাম এবং আমার প্রতিটি শিরা উপশিরায় রক্তের শিহরন অনুভব করছিলাম; আমার কেবলি মনে হচ্ছিল এখনি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি।সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে বাঁশের লাঠি নিয়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষন মহড়া শুরু করি এবং পরবর্তীতে মুক্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি।
পরিশেষে উল্লেখ করতে চাই যে, জাতির জনক বংগবন্ধু’র বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাধীনতার ঘোষনা সম্বলিত ভাষন প্রদানের মুহুর্তে ইতিহাসের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসাবে উপস্হিত থাকতে পেরে এবং বংগবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।গর্ব অনুভব করি এবং এটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন ও আমার অহংকার।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধ ও কৃষিবিদ
আমেরিকা।

Manual4 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code