প্রচ্ছদ

দেশী প্রজাতির মাছ হচ্ছে বিলুপ্ত

  |  ০৯:০২, জুন ০২, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

:: মিজানুর রহমান মিজান ::

Manual2 Ad Code

বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ বলে আমরা বই পুস্তকে পড়েছি, জেনেছি। আজ নদীগুলির অবস্তা অত্যন্ত সুচনীয়।নদীর নাব্যতা নেই। ভরাট হচেছ যত্রতত্র। হারাচেছ তার আগের জৌলুস। দখল বাণিজ্যে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করা হচেছ ইচছা মাফিক। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত দু’টি নদী বাসিয়া ও মাকুন্দা। নেই তাদের পূর্বের খরস্রোত, বর্ষাকালের প্রবল স্রোতের প্রবাহ। বিশ্বনাথের হাওর, খাল-বিল হচেছ দেশীয় প্রজাতির মাছ শুন্য। এক সময়ে এ উপজেলার দেশীয় মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সারাদেশসহ প্রচুর মাছ বিদেশে রফতানী করা হত। এখন তা হয় না বললেই চলে।
মাছের আকাল দেখা দিয়েছে তীব্রভাবে। তাই অত্র এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সাধনে ব্যর্থ হচেছ। খামারের মাছই এখন বাজার দখলের পাশাপাশি জনসাধারণের মাছের অভাব পূরণের অবলম্বন হয়ে দাড়িয়েছে। এক সময়ের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হাওর, বিলঝিল, জলাশয় দেশীয় প্রজাতির মাছে ছিল পরিপূর্ণ। মিটা পানিতে ভরাট এ উপজেলায় প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন তা অবলুপ্তির পথে। হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ। মাছ শিকারীরা অনেক প্রকার হাতিয়ার ব্যবহার করে শিকারকৃত মাছ দিয়ে বা মাছের তৈরী সুস্বাদু খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলতেন। এখন কিন্তু তা আর দৃষ্টি গোচরীভুত হয় না। নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল ভরাট করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে অনেক নিম্ন ভুমি হচেছ উচু ভুমিতে রুপান্তরিত।কৃষি খেতে অপরিকল্পিত, অপরিমিত কীট নাশকের ব্যবহার বৃদ্ধিতে মাছের ক্ষেত্রে বাজছে বারোটা।তাছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ তৈরী, রাস্তা নির্মাণ করে মাছের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি, সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিষ প্রয়োগ ও বিলের পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরন হবার সুবাদে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচেছ।
এ সকল কারন ছাড়া ও রয়েছে কারেন্ট জালের ব্যবহার। তার সাথে দৃশ্যমান হচেছ মশারি জালে রেণু পোনা ধরা। আমি প্রতিনিয়ত দেখছি বা দৃশ্যমান হচেছ মশারি জালের ব্যবহার। বৈশাখ মাস হচেছ ষড়ঋতুর এ দেশে দেশীয় মাছের প্রজনন সময়। আজকের ছোট ছোট কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা সকাল বিকাল ধরা হচেছ মশারি জাল দিয়ে পোনা মাছ।এ ধরার ফলে মাছ বা মাছের প্রজাতির বৃদ্ধি হচেছ ব্যাহত।উপজেলার প্রতিটি বাজারে দেখতে পাওয়া যায় পোনা মাছ ধরে বিক্রি করতে। একদিকে জলাশয় নেই, অপরদিকে এ মাছের পোনা ধরার ফলে মাছ প্রাপ্তি কতটুকু দুরুহ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি না। যে কেহ সহজেই অনুমান করতে কষ্ট হবার কথা নয়। উপজেলার অনেকগুলি বাজার ঘুরে দেখা যায় দেশীয় প্রজাতির মাছ মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলে ও এ জাতীয় মাছের দাম অত্যন্ত চড়া এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। খামারের মাছের দাম আনুপাতিক হারে কম। মাছ বিক্রেতারা জানান দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রাপ্তি অনেক কঠিন ও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট পানির সেচ মেশিনের ব্যবহারের ফলে খাল-বিল সেচের মাধ্যমে মাছের আকাল হচেছ তীব্রতর। এমনটি হচেছ অধিক মুনাফা ও আমাদের স্বেচছাচারিতা মনোভাবের ফলে অবৈধ কারেন্ট জাল, মশারি জাল দিয়ে মা মাছ, রেণুপোনা অবাধে ধরে নিধন করাতে।

Manual3 Ad Code

এক্ষেত্রে যদি মাছের প্রজননকালীন সময় স্থানীয় প্রশাসন সঠিক ভাবে নজরধারী করে, তাহলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে এবং দেশীয় মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার ক্ষেত্রে ইলিশ মাছের মত নিষেধাজ্ঞা থাকলে উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করেন অনেকেই। তবে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ও রয়েছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। বর্তমান প্রজন্ম দেশীয় অনেক প্রকার মাছ চেনেই না। রয়ে যাচেছ এ প্রজন্ম চেনা জানার অনেক দুরের বাসিন্দা হয়ে।

Manual1 Ad Code

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার, সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব।

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code