প্রচ্ছদ

করোনা ও জানা অজানা

  |  ১৫:৫৩, এপ্রিল ০২, ২০২১
www.adarshabarta.com

Manual1 Ad Code

সাদেকুল আমিন :

মানব সভ্যতার আদিকাল থেকে যথাক্রমে মেসোপটেমিয়ান, পারস্য, মিশরিয়, সিন্ধু উপত্যকা, গ্রীক, রোমান, ইসলামী ও ইউরোপীয় সভ্যতাগুলো ধীরে ধীরে মানব জীবনের বিভিন্ন জানা দিকগুলোর অগ্রগতি এবং অজানাকে জানার লক্ষে কাজ করেছে। বর্তমান বিশ্বে এর ধারাবাহিকতা বেশ লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে, COVID-19 এর অদৃশ্য আবির্ভাব গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এবং এটা মানব জাতিকে এক প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে।

COVID-19 বা করোনা ভাইরাস মহামারীর তীব্রতা উপলব্ধি করে এর Vaccine আবিষ্কারে গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। জাতি,ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এর কাজ চলে। যার ফলে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করার সক্ষমতা লাভ করে। অবাক করার মতো ব্যাপার হল, এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যে দুই ব্যক্তি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তারা হলেন, তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিম বিজ্ঞানী দম্পতি ও জার্মান সিটিজেন Professor Ugur Sahin এবং Dr. Özlem Türeci। তাঁরা দু’জন ফাইজার কোম্পানি যে ভ্যাকসিন (Pfizer-BioNTech) প্রস্তুত করেছে সেটার উদ্ভাবক। এ সুবাদে মানুষ জাতি এখন একটু হলেও স্বস্তি অনুভব করছে। এটা বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে কি না, বা তার আগাম বার্তা বহন করছে কি না, তা ভেবে দেখার বিষয়। পাশাপাশি, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মোডারনা কোভিড-19, রাশিয়ান স্পুটনিক ভ্যাকসিন সহ আরো কয়েকটি ভ্যাকসিনের সফল কার্যকারিতার বার্তা ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে, বিশ্বের অনেক দেশই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে মানব সভ্যতা অজানা ভবিষ্যতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, মানব সভ্যতা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং প্রযুক্তিতে এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি, কে কার আগে শীর্ষে পৌঁছাবে তার এক অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে।

Manual6 Ad Code

বর্তমানে আমরা ডিজিটালাইজেশন ও বসবাস যোগ্য মহাকাশ অনুসন্ধানের যুগে বাস করছি। মানুষ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেে ব্যবহার করছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এখন মানুষ হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য আদান প্রদান করছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মানুষ, স্পেস স্টেশন স্থাপনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বসবাস যোগ্য মহাকাশের দিকে।

Manual5 Ad Code

এটা অত্যন্ত লক্ষ্যণীয় যে, বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতি, ডিজিটালাইজেশন ও বসবাস যোগ্য মহাকাশ অনুসন্ধানের পিছনে যে জ্ঞান ও বিজ্ঞান কাজ করছে সেটা মুসলমানদের স্বর্ণ যুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানের ফসল হিসাবে স্বীকৃত। গণিতবিদ্যা ও বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সে সময়ের কয়েকজন জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খুয়ারিজমি (৭৮০-৮৫০), আবু নসর আল-ফারাবি (৮৭২-৯৫০), আল-বাতানী (৮৫৮-৯২৯), ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭) এবং ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৯৮)।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, মানব জ্ঞান এখনও এই বিশাল মহাবিশ্বের অনেক অজানাকে জানতে বা আবিষ্কার করতে পারেনি। জানা জিনিসের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে মানব সভ্যতা দ্রুত গতিতে ছুটছে অজানাকে জানার অন্বেষণে।

Manual3 Ad Code

উদাহরণ স্বরূপ, এটি একটি বৈজ্ঞানিক সত্য যে, মহাবিশ্বের কেবলমাত্র ৫% সাধারণ পদার্থ এবং শক্তি (matter and energy) মানুষের জানা। তবে আজ অবধিও ৯৫% অন্ধকার পদার্থ এবং অন্ধকার শক্তি (dark matter and dark energy) মানুষের অজানা রয়ে গেছে। মহাবিশ্বের এই অন্ধকার পদার্থ এবং অন্ধকার শক্তির ভাঙ্গন হ’ল 5% সাধারণ পদার্থ এবং শক্তি, ২৭% অন্ধকার পদার্থ এবং ৬৮% অন্ধকার শক্তি। সামগ্রিকভাবে, অন্ধকার পদার্থ এবং অন্ধকার শক্তি মহাবিশ্বের মোট ভর-শক্তি উপাদানগুলির ৯৫% নিয়ে গঠিত।

Manual3 Ad Code

মানব ইতিহাসে এটা বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় যে, যখনই কোন অজানাকে জানার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তখনই মানবজাতি তার প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী দক্ষতা দিয়ে তা জানার চেষ্টা করেছে। আর এর জন্য প্রয়োজন নিরলস প্রচেষ্টা, জ্ঞান, জ্ঞান এবং জ্ঞান। তবে, এ প্রচেষ্টা ও জ্ঞান হতে হবে সঠিক এবং বিশুদ্ধ। এর সুফল ব্যবহার হতে হবে মানব কল্যাণে। যেটি মানবতাকে এগিয়ে নিবে এক নতুন দিগন্তে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অফুরন্ত সুযোগ উন্মুক্ত করে দেবে এবং তাদের কাছে আশার এক রশ্মি প্রদর্শন করবে।

ইসলামে জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে যারা জানে আর যারা জানে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহুতাআলা বলেন, “নবী, তুমি বলো: যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” [ সুরা আয-যুমার: আয়াত ৯ ]

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code