প্রচ্ছদ

লেখক মুসতাক আহমেদের মৃত্যু এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি

  |  ১৩:২৬, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
www.adarshabarta.com

 

:: সাইফুর রহমান কায়েস ::

আইসিটি আইন মুক্তবাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী কালো আইন।লেখক মুসতাক আহমদের মৃত্যু মানে মুক্তবুদ্ধির ও মুক্তমনের , বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মৃত্যু। এই মৃত্যুটি আসলে মৃত্যু নয়, পরিকল্পিতভাবে হত্যার শামিল। প্রতিটি মঞ্চ থেকেই লেখক মুসতাক আহমেদ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠুক। আমরা একটি ক্রান্তিকাল পেরুচ্ছি। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার মানুষেরা এখন সংখ্যালঘু । রাষ্ট্র যেখানে তার জনগণের রক্ষাব্যুহ হিসাবে কাজ করার কথা সেখানে রাষ্ট্র নিজেই হন্তারক হয়ে উঠলো যা একজন লেখকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হলো।

আইসিটি আইনের শুধু সাতান্ন ধারাই নয়, পুরো আইনটিই একটি কালো এবং নিবর্তনমূলক আইন। এর মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা ,গণতন্ত্র চর্চা ও বিকাশের সম্ভাবনাকে হত্যা করা হয়েছে। সুশাসন এখন তাই একটি আপ্তবাক্য ছাড়া আর কিছুই নয়। গণতন্ত্রের সলিল সমাধি রচিত হয়েছে এই আইনটি কার্যকরের মাধ্যমে। রাষ্ট্র যেকারণে জনকল্যাণ নয়, গণপীড়কের ভূমিকাই পালঙ ন করছে। একজন লেখক তার দেশপ্রেমের কারণে বিবেকের দায়মোচন করতে গিয়ে সাদাচোখে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই পারেন। তাই বলে তাকে জেলে পুরে মেরে ফেলা, জাতিকে তার শববাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে এমনটি কোনোকালেই কাম্য নয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন তাই একটি ব্যর্থতার স্মারক হয়ে থাকলো।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সুযোগে স্তিমিতপ্রাণের সঞ্চার হওয়ায় মানুষ আত্মনিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ফলে সমাজ থেকে প্রতিবাদ তার নান্দনিকতা হারিয়েছে। সাম্য, সুষম বন্টনের ধারণা, ন্যায্যতা ও নীতির ভিত্তিতে যে সমাজ চলার কথা তা থেকে বেপথুমান হয়ে গেছে। ফলে সমাজের প্রতিস্তরেই ধর্ষণ বেড়ে গেছে। ফলে ধর্ষণ এখন শুধু সামাজিকই নয়, রাষ্ট্রেরও ব্যাধিমন্দির । আজ মুসতাককে মরতে হয়েছে বিচারহীনতার জন্য কাল আমি, পরশু আপনি। এভাবে চলতে থাকলে মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার ক্ষেত্রে বিরাট সংকট দেখা দিতে পারে।

সুশাসন মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেবার কোনো সুযোগ বাই। তাই আমরা এমন হঠকারীতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। লেখক মুসতাকের মৃত্যুকে একটি দানবীয় মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যায়। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যায়- যেটি আমাদের বিবেককে অনেকদিন পর্যন্ত আহত করে রাখবে। খুনের মামলার আসামী বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হলেও একজন লেখক আদালতে ছয়বার দাড়িয়েও জামিন না পাওয়ায় দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থার সংকট তৈরী হয়েছে। জাতির সামনে লেখক হত্যার বিষয়টি খোলাসা হওয়া প্রয়োজন । তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ঘটনা চাপা দিতে নয়, প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।