প্রচ্ছদ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সাথে ভূপর্যটক রামনাথ ও অধ্যাপক পদ্মনাথের সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা

  |  ১১:০৯, নভেম্বর ১৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

:: আবু সালেহ আহমদ ::

Manual6 Ad Code

এশীয়দের মধ্য প্রথম সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনেননি এমন লোক শিক্ষিত সমাজে কমই খোঁজে পাওয়া যাবে। তিনি বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে বিচরণ করেন নাই। বিশেষ করে কবিতা গল্প, উপন্যাস নাটক প্রবন্ধ ও গানে যে ঐশ্বর্য মন্ডিত অবদান রেখেছেন তার জন্য বিশ্ব দরবারে আমরা গর্বিত। বহু গুণে গুণান্ধিত এই কবি গুরুর সাথে বিশ্বের অনেক নামী দামী লেখক ও লোকের ছিল সুসম্পর্ক। ভারত, বাংলাদেশ তথা সিলেটের অনেক জমিদার রাজনীতিবিদ, লেখকে সাথে ছিল যোগাযোগ ও সখ্যতা। এ নিয়ে অনেকটা আলোচনা হলেও বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমন কারী রামনাথ বিশ্বাস ও বিখ্যাত কামরূপ শাসনাবলী গ্রন্থ সহ বহু গ্রন্হের লেখক, গবেষক, বিদ্যাবিনোদ, অধ্যাপক পদ্মনাথ ভট্টচার্যের সাথে কবি গুরুর কি রকম সম্পর্ক ছিল, সে সম্পর্কে বাংলা সাহিত্যে কমই আলোচনা করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। এ সম্পর্ক গবেষকগণ আলোচনার জন্য এগিয়ে আসলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঐতিহ্যশ্রাশী হবে বলে আমার বিশ্বাস।

Manual8 Ad Code

বানিয়াচং চাঁন পাড়া গ্রামে ১৮৫১ সালের ১৩ জানুয়ারী জন্ম গ্রহণকারী রামনাথ বিশ্বাস ছিলেন একজন বিখ্যাত ভূপর্যটক। আজ থেকে প্রায় ৯০ বসর পূর্বে (১৯৩১সালের ৭ জুলাই) যখন রাস্তা ঘাট লব্জ ষ্টিমার, যোগাযোগ এত উন্নত ছিল না। দেশেদেশে যুদ্ধ ও যুদ্ধের মহড়ায় মানুষ থাকতো সংকিত, বন জঙ্গলে হিংস্র পশুর ভয়তো আছেই, পাশাপাশি চোর ডাকাত উশ্ঙ্খলতা কমছিলনা।

Manual3 Ad Code

Manual5 Ad Code

সেই সময়ে রামনাথ বিশ্বাস প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমন করে বিশ্ববাসী কে থাক লাগিয়ে ছিলেন। শুধু তাই নয় ভ্রমনের পাশা পাশি ৪০ টি ভ্রমন কাহিনী সংক্রান্ত বইও লিখে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছিলেন।

ভ্রমন কাহিনী গুলো এতই জনপ্রিয় ছিল যে তখকার যুব সমাজের মধ্যে পড়ার জন্য কাড়া কাড়ি পড়ে যেত। প্রকাশকরা সস্করণের পর সংস্করণ ছাপিয়ে ও কুলকিনার পেতেনা। পেতেন না। বিশ্বের নামীদামী কবি ও লেখক বিশেষ করে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অধ্যাপক সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ত্রৈলোক্য বিশ্বাস, মন্মথ বিশ্বাস, তারাশংকর বন্দেেপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সতিনাথ ভাদুরী, নারায়ন গাঙ্গুলী, কালী শেখর, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম জসিম উদ্দিন সহ অনেক খ্যাতনামা মানুষ নিয়মিত তারঁ লিখা পড়তেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভূপর্যটক রাম নাথ বিশ্বাস ১৯৪০সালের ২৬শে এপ্রিল বিশ্ব ভ্রমন শেষ করে একদিন বিশ্বকবিকে তাঁর ভ্রমনের ঐতিহাসিক বিশ্বজয়ী বাইসাইকেলটি উপহার দিতে শিলাইদেহের রবীন্দ্র কুটিরে যান। রামনাথের পৃথিবী গ্রন্হ থেকে জানা যায়,”উদ্দেশ্য -বিশ্বজয়ী সাইকেলটি বিশ্বকবিকে উপহার দিয়ে নিজে ধন্য হবেন। কিছুক্ষণ কথা বার্তার পর হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ বললেন,”রামনাথ তোমার লেখা আমি পড়ি” অবিশ্বাস্য ছোট এই বাক্যটুকু কানে পৌছানোমাত্র চিরাচরিত স্বভাব তেড়ে ফুঁড়ে আছড়ে পড়তে চেয়েছিল। কিন্ত ইনি যে স্বয়ং রবি ঠাকুর বলে কথা। তবু শত হলেও রামনাথ বটে। মেঝের দিকে নতদৃষ্টিতে মাথা চুলকে বহু চেষ্টাকৃত ধীর গলায় উত্তর দিলেন -গুরুদেব অধমের কাছে মিথ্যা বলে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? এক পলকঅন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে গুরুদেব হাঁকলেন -অনিল, “দেশ “পত্রিকা গুলো নিয়ে এসে দেখাওতো পর্যটক মশাইকে। কবির প্রিয় পাত্র অনিল চন্দ ত্বরিতে বেশ কয়েকটি তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলে রামনাথ সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন, তারই লেখা পাতার পর পাতা আন্ডার লাইন করা। লজ্জা সংকোচে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে রামনাথের। মসৃণ আয়না সদৃশ রামটাকে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে এবং চমকে চমকে উঠে ভাবছেন, এও কি সম্ভব। আমার মতো অধম লেখকের লেখা বিশ্বকবি এভাবে পড়েন।
রামনাথ বিশ্বাস কবি গুরুকে কত টুকু ভালবাসতেন তা ফুটে উঠেছে ভ্রমনে যাওয়া সময় আর্শিবাদের মধ্য দিয়ে। রামনাথ কবি কুটিরে গিয়ে কবিগুরুকে ভ্রমনে যাওয়া কথা বললেন, বিশ্বকবি লিখলেন,” আর্শীবাদ”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আফ্রিকা ভ্রমনে যাওয়ার পূর্বে রামনাথ আবার গেলেন বিশ্ব কবির সাথে দেখা করতে।
বিশ্ব কবি লিখেছিলেন,
“বিশাল বিশ্বের আয়োজন,
মন মোর জুরে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্হ ভ্রমন বৃত্তান্ত আছে যাহে অক্ষয় উৎসাহে-
যেথা পাই চিত্তময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।
জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে পূরণ করিয়া লই যত পারি ভিক্ষালব্ধ ধনে”।

লেখক: বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও লোক গবেষক।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code