প্রচ্ছদ

ফ্রান্সে প্রবাসীদের মিলনমেলা ও বনভোজন

  |  ২৩:১৩, এপ্রিল ১২, ২০২০
www.adarshabarta.com

দেলওয়ার হোসেন সেলিম, প্যারিস (ফ্রান্স):

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির একদল উদ্যমী তরুণ ও যুবকদের নিয়ে দিন
ব্যাপী এক মিলনমেলা ও বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় ১১ আগস্ট, ২০১৪ সোমবার। এর আয়োজক সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার অধিবাসী, ফ্রান্সে বসবাসরত মাসুম চৌধুরী ভাই আমাকে তাদের সাথে বন্ধু মেলা ও বন ভোজনে যেতে আমন্ত্রণ জানালেন। এক কথায়ই রাজি হয়ে গেলাম। সামার সিজনাল হলিডে’তে ভ্রমণ পিপাসু মনকে খানিকটা খোরাক জোগান দেয়ার পাশাপাশি প্যারিসে বাংলাদেশী অনেক
কমিউনিটির নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা এবং পরিচয়ও হয়ে গেলো!

মূলত: সুপারমুন উপলক্ষে, সুস্থ বিনোদনের লক্ষেই এর আয়োজন করেন মাসুম চৌধুরী। বিগত ১০ আগস্ট ২০১৪ (রোববার) রাতের আকাশে যে চাঁদ হেঁসেছে তার আকার
ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে বড়। আর দূরের চাঁদটি নেমে এসেছিল পৃথিবীর অনেকটা কাছে। তাই ফ্রান্সের প্যারিস থেকেই বহু লোক এই সুপারমুন দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এই স্মৃতি লালন করে রাখতে,”প্রবাসে বাঙালিরাই বাঙালিদের ভাই, সব বাঙালি মিলে একটি বড় পরিবার।
সেই পরিবারের নাম বাংলাদেশ।” এই শ্লোগান নিয়ে দল মত নির্বিশেষে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে একে একে সবাই
জড়ো হতে থাকেন ইঁলদ্যু ফঁসের ক্লিসি সোভা মেরির
পার্শ্ববর্তী মাঠে। এখানেই রাহুল আমিন নিজ হাতে ঘরুয়া রান্না করা রকমারী বাংলাদেশী খাবার একটি ঠেলা গাড়ীতে করে নিয়ে আসেন।

তখন ঘড়ির কাটায় স্থানিয় সময় বেলা ২টা। প্রবাসের হাজারো ব্যাস্হতা ঝামেলার মাঝেও অনেক দিন পর একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাত হওয়ায় উপস্থিত সবাই আনন্দিত। এখান থেকেই হাতে হাতে খাবার সামগ্রী নিয়ে পায়ে হেঁটে প্রায় দুই কিলো মিটার যাত্রা শুরু করলাম
ক্লিসি সোভা ন্যাচারাল পার্কে। প্রায় ৩০ মিনিট পর গন্তব্যে পৌছে সবাই নয়ন ভরে দেখে নেন অপরুপ সৌন্দর্য। আনন্দে উদ্বেলিত হন। উল্লাস প্রকাশ করেন।

বিশাল বড় প্রাকৃতিক মনোরম ও সৌন্দর্যে ভরপুর এই ক্লিসি সোভা পার্কে রয়েছে সবুজ গাছ গাছালি, প্রাকৃতিক লেক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ, ডাহুক, পাতি হাস, রাজ হাস ও ভাসমান নানান প্রজাতীর ফুল। পার্ক জুড়ে রয়েছে সুপ্রশস্ত পায়ে হাঠার পথ, পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যাবস্থাও আছে। বিশাল বড় এই পার্কের যেদিকে যাবেন, দুই চোখ যেন খুঁজে পাবে সবুজের রুপ। যেন এপার থেকে ওপার দেখা যায় না। এছাড়া, নানান ফুল ও ফলের মৌ মৌ গন্ধ, পাখির কলরব, নৈসর্গীক দৃশ্য অবলোকন করে মন প্রফুল্লে ভরে উঠলো সকলের। সেই
সাথে মনে পড়লো লাল সবুজের প্রিয় জন্ম ভূমির কথা। আসলে প্রিয় বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে আট হাজার কিলো মিটার দূরে ইউরোপের মাটিতে জীবনের প্রয়োজনে বসবাস করলেও মন কাঁদে সর্বদা মা, মাঠি এবং মানুষদের জন্য। তাইতো সমবেত কন্ঠে দাড়িয়ে সকলেই যৌথ কন্ঠে গেয়ে ওঠেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ……।’

এরপর শুরু হয় বনভোজন। একেকটি থালায় খাবারগুলো সুষমভাবে বন্টন করেন নুর ইসলাম, ফারুক খান ও ডালিম। কোল ড্রিংকস এবং খাবার পানি বিতরণ করেন শামীম আহমদ বেগ। খাবার সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই দক্ষ বাবুর্চি রাহুল আমিনের ভুঁয়শী প্রসংসা করেন। খাবারের মধ্যে ছিল দেশীয় স্বাধের গরুর মাংস, পোলাও, মুরগীর রোস্ট, স্পেনের অলিভ, ভেরাইটিজ সালাদ, ফ্রান্সের বিখ্যাত বাগেট, মিনারেল পানি, সুইজারল্যান্ডের চকলেট ইত্যাদি। সবাই আনন্দে এতোটাই আত্মহারা হয়েছিলেন যে, ততোক্ষণে প্রবাসীদের এই মিলন
মেলা ও বনভোজনের ফটো ক্যামেরাবন্দী, ভিডিও ফুটেজ ধারণ করার কথা যেন ভুলেই গেলেন।

‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম …।’
একবার যেতে দে না আমার ছুট্ট
সোনার গা …।’ গ্রাম ছাড়া ঐ
রাঙ্গা মাটির পথ ‘… সহ বিভিন্ন
দেশাত্তবোধক গান, রোমান্টিক
গল্প, আনন্দ, আড্ডা, হাসি ও মুহূর মুহূর
করতালির মধ্য দিয়ে সমগ্র আয়োজন
ছিলো আনন্দে ভরা।

এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় উপস্থিত অংশ গ্রহণকারীদের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য দেয়ার পালা। প্রথমে সকলকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আয়োজক মাসুম চৌধুরী। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা তারেক আহমেদ তাজ, সাংবাদিক দেলওয়ার হোসেন সেলিম (আমি), স্মরলিপি শিল্পী গোষ্টি ফ্রান্সের মুহাম্মদ আলী, কমিঊনিটি নেতা মামুন রশীদ, সুমন আল মাহবুব প্রমুখ। এ পর্বটি পরিচালনা করেন ফখরুল ইসলাম।

যাঁদের সরব উপস্থিতিতে উক্ত বন্ধুমেলা ও বনভোজন মুখরিত হয়ে ওঠে তারা হলেন: তারেক আহমেদ তাজ, দেলওয়ার হোসেন সেলিম, নজরুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম, রাহুল আমিন, মুজাহীদুল ইসলাম মুজাহিদ, সায়হাম, নুর ইসলাম, হারুন রশীদ, নুরুল আমিন, ফারুক খান, কবির উদ্দিন, হাবীব আহমদ, বাবুল হোসেন, শাহীন হোসেন ডালিম, শামীম আহমদ বেগ, হাসান মাহমুদ, সাইফুর রহমান, মুহাম্মদ আলী, জনি আহমেদ, এমাদ, পাবেল, শাহীন, রিপন, মোক্তার, রহিম উদ্দিন, খালেদ,মতি মিয়া, সুস্মিতা, লিন্ডা, সেলিম আহমদ, পারভেজ আদনান, সালিম আহমদ, রুবেল, রুমেল, মামুন প্রমুখ।

প্রাচীন ঐতিহাসিক প্যারিস শহরটি সেইন নদীর তীরে অবস্থিত। বহু জাতীক, প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশী ঐতিহ্যের অধিকারী এই নগরী বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক ও সংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাজনীতি, শিক্ষা, বিনোদন, গণ মাধ্যম, ফ্যাশন, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা সবদিক থেকে প্যারিসের গুরুত্ব ও প্রভাব এটিকে অন্যতম বিশ্ব নগরীর মর্যাদা দিয়েছে।

প্যারিস হলো ইউরোপের বৃহত্তম পরিকল্পিত, বাণিজ্যিক ও পর্যটন এলাকা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখক পর্যটকের গন্তব্যস্থল প্যারিস। প্রতি বছর এখানে কম বেশী তিন কোটি মানুষ ভ্রমনে আসেন। সেই সাথে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের
বিভিন্ন দেশের মানুষজন কর্মসংস্তান, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ, নিরাপদে বসবাস, ব্যাবসা বাণিজ্য ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্যারিসে জড়ো হয়ে থাকেন।

ইউরোপে বাংলাদেশীয় ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি দেখে পার্কের পথচারী ফরাসী ক’জন নাগরিক আমাদের সাথে যোগদান করলেন। বুজু (হ্যালো), থ্রে বিয়া কমসা (এভাবে ভালো), মেখছি বুকু (অসংখ্য ধন্যবাদ) বলে তাঁরা মুগ্ধ হন। অতিথি বৎসল, সাদা চামড়ার এই ফরাসিদের আন্তরিক সু ব্যবহার দেখে আমরাও মুগ্ধ হলাম!

ফরাসি নাগরিকরা অযতা কথা বলা পছন্দ না করলেও খুবই মিশুক ও কর্মঠ। তাদেরকে খোলা মেলা মন নিয়ে সাদামাটা জীবন যাপন করতে দেখা যায়। ফ্রান্সে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আছে। বাংলাদেশী মানুষকে তাঁরা খুবই ভালোবাসেন, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন উদার ভাবে। সত্যিই ফরাসিদের কাছ থেকে আমাদের অনেক শিখার আছে। প্যারিসে প্রবাসী বাংলাদেশীর একাংশ নবাগত এবং পুরাতন লোকজন এই জনপদে নিজস্ব অবস্তান দৃঢ় করতে নিরন্তন প্রচেষ্টায় লিপ্ত।আমরা সাফল্যের সাথে এখানকার মূলধারায় মিশে থাকতে চাই। প্রতিষ্টিত হতে চাই।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এবং নয়নাভিরাম দৃশ্যে ঘুরতে ঘুরতে বেলা আড়াইটা হতে সন্ধ্যা সাড়ে নয়টা বাজলো। পড়ন্ত বিকেল শেষে রাতের প্রারম্ভে মনে পড়ে ” আজি এলো হেমন্তের দিন / কুহেলী বিলীন, ভুষণ বিহীন /
বেলা আর নাই নাকি, সময় হয়েছে নাকি / দিন
শেষে দ্বারে বসে পথ পানে চাই।”

লেখক: দেলওয়ার হোসেন সেলিম, প্রবাসী সাংবাদিক; সংগঠক। প্যারিস, ফ্রান্স।
মোবাইল +33656763327
ইমেইল: salim_dh1@yahoo.com
স্কাইপ: dh.salim
তারিখ:16.08.2014