প্রচ্ছদ

পর্যটকদের আরেক গন্তব্য হাকালুকির নাগুয়া বিল

  |  ০২:২৯, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
www.adarshabarta.com

 

ইউনুস চৌধুরী:
এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির সীমাহীন বিশালতা, শূন্যকে অনুভব করার নিরবতা, হৃদয় উদাস করা পাখির কূজন, সবুজ মাঠে গরুর পাল নিয়ে নিরুদ্বেগ ঘুরে বেড়ানো, বিলের পানির উপরে বাশের মাথায় বক, কামিল বা পানকৌড়ির তপস্যা ভেঙ্গে হঠাৎ পানিতে ঝাপ এমন অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাকালুকিতে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। আছে বর্ষায় বিশাল জলরাশির মধ্যে ভেসে থাকা হিজল-করচ বন, আবার শীত মৌসুমে হিজল-করর-তমালের নিচে গা ছমছমে গুল্মলতা আরোং এর বিশাল ঝোপ-জঙ্গল। সিলেটের ৫ উপজেলার মধ্যে বিস্তৃত হাকালুকি হওরের এমন এক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। অপার সৌন্দর্যে ভরপুর হাকালুকির আরেক পর্যটন গন্তব্য হতে পারে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের এই নাগুয়া বিল।
ফেঞ্চুগঞ্জ-ভাটেরা-কুলাউড়া সড়কের ভাটেরা জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন ত্রিমুখি থেকে সিংহনাথ গ্রামের রাস্তা হয়ে গাড়ি নেমে যায় হাকালুকি হাওরে। সেখান থেকে পানির নিচ থেকে ভেসে উঠা মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি হাওরের মধ্যে দিয়ে ৫ কিলোমিটার গেলেই নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। এছাড়া ভাটেরা বড়গাও গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ায় যায় ওয়াচ টাওয়ার, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ৫ থেকে ১০ মিনিটেই যাওয়া যায় নাগুয়া বিল।
উত্তরে নাগুয়া বিল, হিঙ্গারজুড়, কালাপানি বিলসহ সীমাহীন হাওর ও দক্ষিণে কাংলি বিল, ধানের জমির পর জমি গিয়ে ঠেকেছে গ্রামে। পশ্চিমে কাংলি বিল, ছোট নদী আর দিগন্তজুড়া ধানী জমি এবং পূর্বদিকে বিল আর বোরো ধানের জমি গিয়ে ঠেকেছে দূর গ্রামে। তার মধ্যেই হিজল-কচর-তমাল গাছের নিজে বিশাল লতাগুল্মের আরোং ঝোপজঙ্গল, খোলা মাঠ নিয়ে নাগুয়া বিল পশ্চিম কান্দি। ঝোপের পাশেই বিশাল মাঠ। পেন্ডেল বা ক্যাম্প স্থাপন এবং খেলাধুলার অবারিত জায়গা। সকাল ১১টা থেকে দেখা যায় কৃষকরা ২০/৩০টা করে গরুর পাল নিয়ে হাওরের দিকে যাত্রা করেছেন। হাতে বা পিঠে ঝোলানো ব্যাগে পানির বোতল আর সামান্য খাবার অথবা কিছু কাপড়। ঝোপ আর মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শান্ত ছোট নদী। আরোং জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু ট্রেইল দিয়ে যেতে গা ছমছম করে অনেকের। স্থানীয়রা জানান, একসময় এসব জঙ্গলে বনবিড়াল, শিয়াল, বুনো শুকর বসবাস করতো। এখন শিয়াল পর্যন্ত এসব থেকে বিতাড়িত হয়েছে।, ট্রেইলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ছোট পাখির কিচিরমিচির শব্দে মানুষ বিমোহিত হয়। আবার হাওরের সামনে গিয়ে বসে হাওরের দিকে তাকালে শূণ্যতাকে অনুভূত হওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে একের পর এক গরুর পালন নিয়ে কৃষকরা বাড়ি ফিরছেন। হঠাৎ শব্দ করে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় অতিথি পাথির ঝাক। পড়ন্ত সূর্যের সাথে গরুর পাল নিয়ে কৃষকরে বাড়ি ফেরা এবং পাখির উড়াউড়ি আর নিঃসীম হাওরের নিরবতার মধ্যে দিয়ে কখন যে শেষ হবে দিন বুঝ যায় না বলে জানান অতিথিরা।
গত শনিবার নাগুয়া বিল স্পটে সিলেটস্থ ভাটেরিয়ানদের হাওরভোজন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। স্থাপন করা হয় বিশাল পেন্ডেল। ছিল পিছনের মাঠে খেলাধুলার আয়োজন। দূরে আরোং জঙ্গলের পাশেই ছিল কপি শপ। ছিল অস্থায়ী ড্রেসিং রুম, পুরুষ ও মহিলা টয়লেট। গান-কৌতুক-আবৃত্তি আর লেখাধুলার পাশাপাশি ঘন আরোং জজ্ঞলের ট্রেল ধরে ঘুরে বেড়ানো, বিলের স্থির জলের উপরে পাখির খেলা অথবা হওরের বিশালতার মধ্যে নিজেকে অনূভব করার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাকালুকির কবি খ্যাত সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি কালাম আজাদ।
ভাটেরিয়ান সিলেট এর সভাপতি মুহাম্মদ লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক সিলেট সংলাপ পত্রিকার সম্পাদক ফয়জুর রহমান, সিলেট লেখক ফোরাম সভাপতি সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল, ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন ‘সমুদ্র দেখার আগে, আমাদের নিকট হাকালুকি ছিল সমুদ্র। হাকালুকির পারে আসলে নিজের অতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। তিনি হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি হাওর রক্ষায় সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানান।হাফিজ আব্দুস সামাদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভাটেরিয়ান সিলেট সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মুহিবুর রহমান শামীম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক একেএম মতিউর রহমান আজাদ, ভাটেরিয়ান সিলেট এর সহ সভাপিত মো. শফিক মিয়া ও আহমদ কবির রিপন, ঘিলাছড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মিছবাউর রহমান, ভাটেরা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শেখ আকমল হোসেন তালুকদার, ভাটেরা সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মাওলানা ফয়জুর রহমান এবং হাফিজ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাগরনাল আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল করিম এবং আবৃত্তি করেন ঔপন্যাসিক আলেয়া রহমান।