প্রচ্ছদ

আনোয়ার জাহিদের ৮৫ তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ

  |  ১১:৩১, জুন ১৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual2 Ad Code

:: মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা ::

Manual2 Ad Code

আমি ক্ষমাপ্রার্থী,লজ্জিত আমাদের সকলের প্রিয় নেতার গত ১২ই জুন ২০২০ জাতীয় নেতা, এনডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী, প্রখ্যাত সাংবাদিক জননেতা আনোয়ার জাহিদের ৮৫ তম জন্মবার্ষিকী ছিল। করোনা প্রাদুর্ভাব এর কারণে এবারই প্রথম কোনো আয়োজন ছিল না।এমনকি কেউ এই জাতীয় নেতাকে স্মরণ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ও দেয়নি।আমরা আমাদের অতীতকে যদি এভাবেই ভুলে যেতে থাকি,তাহলে নতুন প্রজন্ম আমাদের কাছ থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করবে?শিকড়কে অস্বীকার বা ভুলে গিয়ে কিছু সৃষ্টি করলে যেকোনো সময় তা ভেঙে বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

Manual5 Ad Code

প্রখ্যাত সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী আনোয়ার জাহিদ ঝিনাইদহ শহরের দাড়িয়া গোবিন্দপুর গ্রামে ১৯৩৫ সালে ১২ জুন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেন ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়, দৌলতপুর বিএল কলেজ, রাজশাহী সরকারী কলেজে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ভর্তি হন। কিন্তু জেলে বন্দি থাকার কারণে এম. এ পরীক্ষা দিতে পারেননি। একজন বামপন্থী হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। ছাত্রজীবনে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছাত্রলীগের ঝিনাইদহ মহকুমা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহ হতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ’৫৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ’৫৫ সালে সাহিত্য মজলিসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৫৬ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজের নির্বাচিত হন ভিপি। ’৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ’৬১ সালে গ্রেফতার হন। ’৬২ সালে থেকে বের হয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

তিনি ছাত্র রাজনীতির সময়ই সাংবাদিকতা শুরু করেন। ’৬৫ সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। একই সালে ন্যাপের অল পাকিস্তান সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ’৬৮ সালে ন্যাপ দু’ভাগ হয়। ভাসানী যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ’৬৯ সালে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।’ ৭৭ সালে পুনরায় ন্যাপ নতুনভাবে পুনর্গঠন করা হলে তিনি ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ’৭৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের নেতৃত্বে ৫ দলের সমন্বয়ে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট গঠিত হয়। তিনি ঐ ফ্রন্টে যোগ দেন। একই সালে আনোয়ার জাহিদ ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনমলে যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। ’৮৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কিছুদিন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ’৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ’৮৯ সালে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি গঠন করেন। ’৯১ সালে বিএনডিপি গঠন করেন এবং দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই সালে ১০টি দলের সমন্বয়ে এনডিএ গঠিত হয়। তিনি এ-ফ্রন্টের সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। শুধু রাজনীতি নয়, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এই সাবেক নেতা সাংবাদিকতা পেশায় দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন।

১৯ বছর বয়সে তিনি যখন ছাত্রনেতা, তখন দৈনিক ইত্তেহাদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ’৫৮ সালে অর্ধ সাপ্তাহিক ধূমকেতুর সহকারী সম্পাদক, ’৫৯ সালে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক, ’৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক, ’৬৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার সম্পাদক, ’৬৬ সালে ইংরেজী সাপ্তাহিক হলিউডে’র উপ-সম্পাদক, ’৭০ সালে সাপ্তাহিক গণবাংলার নির্বাহী সম্পাদক, ’৭২ সালে ইংরেজী পত্রিকা ডেইল দ্যা পিপলস-এর নিউজ এডিটর এবং ’৭৭ সালে বাংলাদেশ টাইমস-এর নিউজ এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ কাজ করেন দৈনিক ইনকিলাব-এ।

Manual1 Ad Code

সাংবাদিক জীবনে আনোয়ার জাহিদ শুধু সাংবাদিকতা করেননি সাংবাদিকদের নেতৃত্বেও দিয়েছেন। ’৬২, ’৬৩, ৬৪ সালে তিনি ডিইউজের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ’৬৫, ’৬৬ সালে তিনি ডিইউজের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৮, ’৮৩ সালে একই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন।এবার যখন তার ৮৫ তম জন্মবার্ষিকী আমাদের সামনে এসেছে তখন বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে করোনার প্রাদুর্ভাবে গভীর সংকটে অতিবাহিত করছে মানুষ।তিনি সবসময় অন্ধকারের মধ্যে আলোর পথ দেখাতেন।যেকোনো সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গঠনে সবসময় আন্তরিক থাকতেন।বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের তার প্রতি ছিল আস্থা,শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন দেশের শীর্ষ আলেম রাও।
আমরা খুবই অকৃতজ্ঞ একটি জাতি। আমাদের আমাদের পূর্বসুরীদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারি না।তিনি যে দল প্রতিষ্ঠা করেছেন,সেই দল এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।সেই বিভক্ত শীর্ষ দলের শীর্ষ নেতারাও তাকে স্মরণ করেনি জন্মবার্ষিকীতে,যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী যথাসময়ে তার স্মরণে লিখতে পারিনি।তবে তাকে যদি অনুসরণ করা যায় এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে এই করোনাকালীন দূর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আগামী ১৩ ই আগস্ট ২০২০ এই প্রখ্যাত জননেতার দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী।২০০৮ সালের ১৩ ই আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

Manual3 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code