প্রচ্ছদ

“কয়লা ধুলে ময়লা যায় না”

  |  ১৫:৫২, জুলাই ১৮, ২০২৫
www.adarshabarta.com

 আহমেদ ইকবাল চৌধুরী:

আমরা মুসলমান হিসেবে অনেকেই আদম (আঃ) এর বেহেশত থেকে বের হবার ঘটনা জানি। শয়তান আদম (আঃ)-কে বেহেশত থেকে বের করার জন্য অনন্তকাল জীবিত থাকার এবং অবিনশ্বর রাজত্বের লোভ দেখিয়েছিল। সে আদম (আঃ)-কে এমন একটি গাছের ফল খেতে প্ররোচিত করেছিল যা থেকে তারা অমর হতে পারত। শয়তানের এই প্রলোভনে পড়ে আদম (আঃ) আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন, যার ফলে তাদেরকে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আমদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের আচরণে মনে হচ্ছে তাদের সাথে কোন এক বড় শয়তান প্রতিনিয়ত কাজ করছে। এবং সে শয়তান ৮০% সফল হয়েছে বলা যায়। নেতাদের এ আচরণে শয়তান অট্রহাসি দিচ্ছে, কারন মানুষ কে বলাতে পারতেছে আগেই ভালো ছিলাম। আমরা সবাই বলি, অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে, কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় বাংলাদেশী জাতির অভিধানে অতীত বলে কিছু নেই-সেখানে শিক্ষা নেয়ার প্রশ্নই অবান্তর।

একটি পরিবারের বা সমাজের অভিভাবক হয় একজন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের বড়কর্তা বা যার সামাজিক অবস্থান ভালো, তিনিই অভিভাবক হন। এখানে সবাইকে অভিভাবক হিসেবে গন‍্য করা হয় না, একটি রাষ্ট্রে ও তাই। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে মনে হয় খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সকল কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। পুরানো দলগুলো অভিভাবক সুলভ আচরণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব‍্যর্থ, আর নতুনরা পুরানেদের কে যথাযথ সম্মান বা মুল‍্যায়ন না করে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে প্রতিনিয়ত আরেকটি বিপ্লবের হুংকার দিয়ে আসছেন।

আমরা সবাই জানি আজকের রাজনীতিবিদরা বিগত ১৫ বছর কেউই নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেনি। বনে জংগলে, ধান ক্ষেতে কিংবা জেল হাজতে। এতো কিছুর পরও তাঁরা পুরানো ফ‍্যাসিবাদকে ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি শুরু করেছে। সিলেটি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে “সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। কেউ ক্ষমতায় যাবার অহমিকা, দাম্ভিকতা আবার কেউ ক্ষমতায় যেতে না দেবার কুটকৌশল নিয়ে ব‍্যস্ত। গত এগারো মাসে কোন রাজনৈতিক দল আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বা বিরোধীদল হলে রাষ্ট্রের উন্নয়নে, জনগণের কল্যাণে আগামী পাঁচ বছরে (Short term reforms) কি পদক্ষেপ নিবে, জনগণের কাছে সে ব‍্যাপারে কোন রুপরেখা দেননি। শুধু কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই জনগণ দেখেনি।

গত কয়েকদিন ধরেই পুরানো ধাঁচে রাজপথ দখল বা show down এর রাজনীতি, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান, ব‍্যক্তিগত আক্রমণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার যে অপচেষ্টা করা হয়েছে, জনগণ সেটা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো আবারও প্রমাণ করলো “কয়লা ধুলে ময়লা যায় না”।

চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, খুন , ধর্ষন এগুলো সমাজ থেকে নির্মুল করতেই হবে। কিন্ত, এটা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার বা কোন রাজনৈতিক দল একা সেটা নির্মূল করতে পারবে না। তবে সেক্ষেত্রে সরকার বা রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার প্রয়োজন। যদি কোন দল নিজ দলের সন্ত্রাসীদের বা চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রন করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে অপরাপর রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা নিয়ে সমাজের সকল অনাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, আর সেই সামাজিক প্রতিরোধ কে বর্তমান সুশীলরা “মব” বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা প্রতিরোধ করবেন তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের সমাজে পচন ধরেছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে চাঁদাবাজি বন্ধ হতে বাধ্য।

লেখকঃ ব্যাংকার, লন্ডন প্রবাসী