প্রচ্ছদ

“অসহিন্সু ভারতের একচোঁখা দৃষ্টি ও আমাদের করণীয়”

  |  ১৭:৫৩, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

আহমেদ ইকবাল চৌধুরী:

Manual4 Ad Code

উগ্র আধিপত্যবাদী, হিন্দুত্ববাদী ভারত বাংলাদেশ কে যেন আর সহ্য করতে পারছে না। একটি দেশে সরকার আসবে এবং সরকার যাবে, এটা নিতান্তই একটি দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়।ভারত  মনে করে শেখ হাসিনা, তার দল এবং তার পরিবারই বাংলাদেশ॥ কিন্ত জুলাই- আগষ্ট বিপ্লবের পর ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত বুঝতে পেরে ভারত এখন পাগল প্রায় এবং কিংকর্তব্য বিমুঢ্। তারা বুঝতে পারেনি বাংলাদেশে এমন একটা প্রজন্ম তৈরী হয়েছে যারা দেশের জন্য বুকের তাঁজা রক্ত দিয়ে একটি নতুন সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ তৈরী করবে, যারা আধিপত্যবাদ, দাদগিরীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে দেশ গঠনে জীবন বাজি রেখে কাজ করবে, যা ভারতকে হিংসার দাবানলে পোড়াচ্ছে। তাই ভারত তাদের দোসরদের দিয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায়িক দাংগা লাগিয়ে আমাদের এ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশটাকে অশান্ত করতে চায়। কিন্ত ভারতের এ ফাঁদে পা না দিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ খৃষ্টান এক কাতারে দাঁড়িয়েছে, ভারতের সহিংস আচরন, আধিপত্যবাদী চরিত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট আজীবনের জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্যকে অঠুট করেছে।ভারত তাদের বাংলাদেশী এজেন্টদের ও ভারতীয় মিডিয়াকে দিয়ে হিন্দু মুসলিম দাংগার কথিত স্ক্রিপ্ট বানিয়ে পতিত শ্বৈরাচারকে পুনর্বাসিত করতে মরিয়া।

ভারতের বেশ কিছু উগ্র হিন্দুত্তবাদী নেতা এমন কি মমতা ব্যানার্জী সহ অনেকেই গত কয়েকদিন বাংলাদেশের প্রতি যে উগ্র আচরন করছেন, তা রীতিমত একটি যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন। আর তাদের মিডিয়াগুলো ন্যাংটা হয়ে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করতে দিন রাত কাজ করছে, যা সম্পুর্ন অসত্য ও বানোয়াট। উগ্রবাদী বিজেপির এক পাতি নেতা বাংলাদেশে পিয়াজ, আলু রপ্তানী ও ডাক্তারী ভিসা বন্ধ করার দাবী জানানোর পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিল। এতে করে রাষ্ট্রীয় ভাবে ভারতের আধিপত্যবাদ ও উগ্রবাদ এবং ভারত যে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারে না, তা বুঝতে পি এইচ ডি করার দরকার নেই। ভারত জানে না বাংলাদেশের মানুষ ১৫০ টাকায় পিয়াজ, ১৮০ আলু খেয়ে অভ্যস্ত। ভারতে যদি পিয়াজ আলুর দাম বাংলাদেশের মত ১৫০ বা ১৮০ রুপি হতো, আমরা ভারতের মানুষকে অভুক্ত থেকে শরীরের চামড়া হাড্ডির সাথে লেগে যেতে দেখতাম।বাংলাদেশের মানুষের পন্য আমদানী করার আর্থিক সক্ষমতা আছে বিধায় ভারত থেকে পিয়াজ , আলু , মসলা আমদানী করে, আর ভারতীয়রা আমাদের টাকায় ফুটানী মারে। পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ আমদানীর উপর নির্ভরশীল।উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে United States, Japan, United Kingdom, Russia বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমদানী নির্ভর।মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমাদের বিকল্প বাজার খুঁজ করা সময়ের সাহসী পদক্ষেপ। এতে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হবে, সিন্ডিকেট কমবে, বাজারে Demand and Supply এর ভারসাম্য থাকবে। ভারত সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাথে তার বানিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হবে।

Manual4 Ad Code

যমুনা টেলিভিশনে “রাজনীতি” নামক talk show তে অভয় নাগ নামক ভারতের এক কথিত সাংবাদিক অতিথি হিসাবে ছিলেন। ভদ্র লোকের কথা বার্তা এমন যে, শেখ হাসিনার পতনে আওয়ামিলীগের নেতা কর্মীরা যতটা না কষ্ট পেয়েছেন, তার চেয়ে বেশী কষ্ট তিনি পেয়েছেন। কথার ফাঁকে বলেই ফেললেন জুলাই আগষ্টে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে প্রথমে তার সমর্থন থাকলেও পরে যখন দেখলেন তা সম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের আন্দোলন, তখন থেকে তিনি আর আন্দোলন কে সমর্থন করতে পারলেন না। একেবারে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে তার কথা হুবহু মিলে গেলো। তিনি বললেন, ২১ ফেব্রুয়ারীতে তিনি বাংলাদেশে আসতেন, তার ভাষায় এখন নাকি ভাষা আন্দোলন সহ সব কিছু ইউনুস সরকার পরিবর্তন করতেছে এবং মৌলবাদিদের দ্ধারা দেশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন – সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে, হিন্দুদের মন্দির, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।কি আজিব তথ্য !! সবশেষে বলেই দিল, বাংলাদেশ কে আমরা আমাদের নিজের দেশ হিসাবে ভাবি- তার এতবড় স্পর্ধা দেখে বিস্মিত হলাম। এ কথা শুনার পর যে কোন বাংলাদেশীর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ত ও দেশ প্রেমের আগুন মনের মধ্যে স্ফুলিংগের মত জ্বলে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।উপস্থাপিকা আনজুমান নিকোল তাকে এবং ভারতীয় গনমাধ্যম কে বাংলাদেশে এসে  সঠিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানালেও তার কোন সদোত্তর মিলেনি।

Manual3 Ad Code

ভারত তার আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আচরন থেকে সরে আসবে বলে ভাবার কোন কারন নাই। ভারত একটি বিশাল দেশ, ভারতের সাথে সংগাত এডিয়ে আমাদের দেশকে কিভাবে স্বনির্ভর ও ভারত নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা যায় তার জন্য আমি অধমের কিছু ভাবনাঃ

Manual2 Ad Code

  1. ছোট খাটো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে স্বাধীনতা ও সর্বভৌমত্তের প্রশ্নে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। তরুন প্রজন্মকে দেশ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও মুসলিম সবাইকে দেশ রক্ষায় এক কাতারে দাঁড়িয়ে যে কোন সাম্রাজ্যবাদ বা আধিপত্যবাদ কে রুখে দিতে হবে।আইনের শাসন প্রতিষ্টা করতে হবে। সংখ্যা গুরু বা সংখ্যালঘু বিবেচ্য নয়। মানুষ হিসাবে সকলের সমমর্যাদা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
  2. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানীর ক্ষেত্র নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, যাতে কোন একটি দেশের প্রতি একপেশে নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নতুন ক্রেতা বিক্রেতার অভাব নেই। নতুন বাজার বের করলেই অনেকেরই দাদাগিরি এমনিতেই কমে যাবে।পিয়াজ, আলু, ডাল, ডিম ও মরিচ রপ্তানিকারক দেশগুলোর সাথে সমতার ভিত্তিতে পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে, যাতে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি না হয়।
  3. দেশের পতিত অনাবাদি ভুমিতে পিয়াজ , আলু, মরিছ ও ডাল উৎপাদনের মাধ্যমে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পাইলট প্রকল্প হিসাবে সরকারী অর্থায়নে ২ বছরের জন্য চালু করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। উপজেলা কৃষি বিভাগের কাজ কখনো চোখে পড়েনি, শুধু বিলাস বহুল অফিসে তোয়ালে মোড়ানো চেয়ারে বসিয়ে জনগনের টাকা খরচ করার কোন মানে হয় না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে কর্পোরেট মনমানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। এ প্রজেক্ট কে Social investment হিসাবে ধরে নেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি সকলের মধ্য নিখুঁত দেশ প্রেম উজ্জীবিত করতে হবে।
  4. স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া আইন করে বন্ধ করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে প্রত্যেক বিভাগে পাবলিক – প্রাইভেট পার্টনারশীপে একটি করে হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পায়। আমরা কি কোলকাতার চেয়ে ভালো হাসপাতাল করতে পারি না? অবশ্যই পারব, আমাদের বিশ্বসেরা ডাক্তার আছেন, নার্স আছেন, এবং Investors আছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নামী দামী ডাক্তার আছেন। দুর্নীতি বন্ধ করে লুটেরাতন্ত্রের মানসিকতা পরিবর্তন হলে আমাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কোলকাতায় যেতে হবে না। তাই মন্ত্রী এমপিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া বন্ধ করতে পারলে স্বাস্থ্য সেবা খাতের উন্নতি হতে বাধ্য।প্রয়োজনে বিদেশী ডাক্তার এনে দেশে চেক আপ করানো সম্ভব, যেমনটি তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছিল। একটি স্থায়ী নিরপেক্ষ স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করতে হবে। কারো যদি এদেশে এমন কোন কঠিন রোগ হয়, স্বাস্থ্য সেবা বা রোগ প্রতিরোধ করার উন্নত সুবিধা না থাকে, সে ক্ষেত্রে তিনি স্বাস্থ্য কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশে যেতে পারবেন। বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কে অভ্যাহতি দিয়ে একজন চৌকস, অভিজ্ঞ উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া দরকার যিনি সাহসিকতার সাথে এ কাজগুলি করতে পারেন। নন রেসিডেন্স বাংলাদেশী উদ্দোক্তাদের আগ্রহী করে তুলতে পারলে ১০/১৫ টি উন্নতমানের হাসপাতাল করা অসম্ভব কিছু নয়। তবে তাদেরকে investment এর সুষ্ট পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে।দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
  5. আমাদের জনগোষ্টিকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের উঁচ্চ বেতনে দেশের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবিতে নিয়োগ করতে পারলে একদিকে যেমন আমাদের সার্বভৌম ভুখন্ড সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে। পাশের দেশের দাদাগিরী কমে যাবে।বিজিবি সংখ্যা কয়েক লাখ বাড়িয়ে সীমান্তরক্ষার পাশাপাশি জাতির যে কোন দুর্যোগে কাজে লাগানো সম্ভব।
  6. ভারতের সাথে সকল অসম, অনায্য চুক্তি বাতিল করে, পারস্পারিক সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে নতুন করে চুক্তি করতে হবে।

নিজের দেশ ও জাতি ভালো থাকুক, এ প্রত্যাশায়।

লেখকঃ ব্যাংকার, লন্ডন প্রবাসী

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code