প্রচ্ছদ

সামাজিক ভালোমন্দ কাজে ভালোমন্দ মানুষ

  |  ১৬:৪৭, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

সাদেকুল আমিন :

আমাদের সমাজে কিছু ব্যক্তিদেরকে ভালো মানুষ এবং কিছু ব্যক্তিদেরকে খারাপ বা মন্দ মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবে, এটা পরিষ্কার যে, সামগ্রিকভাবে যাদের মধ্যে বেশী ভালো গুণ বিদ্যমান থাকে সাধারণত তাদেরকেই ভালো মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে যাদের মধ্যে বেশী খারাপ কাজের পরিমাণ বিদ্যমান থাকে তাদেরকেই মন্দ মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Manual2 Ad Code

তবে, প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। প্রকৃতপক্ষে ১০০% বা সম্পুর্ণ ভালো মানুষ কেউ হতে পারে না। কেউ কোনো দিন সবার কাছ থেকে প্রশংসা পেতে পারে না। কিছু (কমপক্ষে ১০%) মানুষ নিন্দা করবেই। আবার নিজেকে বেশি ভালো মানুষ মনে করাও এক প্রকার খারাপ গুণ।

Manual5 Ad Code

যদি কোন খারাপ কাজ সম্পন্নকারী ব্যক্তি নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং একটু একটু করে নিজের ভুলের পরিবর্তন করে ভাল গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে, তাহলে কী আমরা তাকে ভালো ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করতে পারি না?

Manual1 Ad Code

আপরদিকে, ভালো ব্যক্তিটি যদি কোনো কারণে একবার খারাপ কাজ করে তাহলে তাকে আমরা এক নিমেষের মধ্যেই খারাপ ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত করি। পাশাপাশি, আমারা তার অন্য সব ভালো কাজগুলি ভুলে যাই।

তাহলে, দেখা গেল কোনো ব্যক্তি খারাপ বা ভালো হয় না। তার গুণ বা কাজ গুলি খারাপ বা ভালো হয়।

অর্থাৎ বলা যায়, কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে, কোনো ব্যক্তি, কোনো একটি বিশেষ কাজ করলে, ঐ সময়ে ঐ ব্যক্তিটি ঐ গুণটির অধিকারী হবেন।

Manual8 Ad Code

আর, যদি আপনি “ভালো-খারাপ” দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হন, তাহলে আপনি অন্তর্নিহিত মন্দকে খুঁজে পাবেন না। কিন্ত আপনি যদি “অন্তর্নিহিত ভালো-মন্দ” দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হন তাহলে আপনি ভালো মানুষ যারা কখনও কখনও খারাপ কাজ করে, সেইসাথে মন্দ মানুষ যারা কখনও কখনও ভাল কাজ করে তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত থাকবেন।

তবে, এখানে “ভালো-খারাপ” দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ এবং “অন্তর্নিহিত ভালো-মন্দ” দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। আর এ দুই দৃষ্টিভঙ্গির মানুষদেরকে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই।

কারণ, কিছু কিছু মানুষ ভালো ও মন্দের একক ঐশ্বরিক (Divine) হুকুম সম্পর্কে ভুল বা ত্রুটিযুক্ত ধারণা পোষণ করেন। আর তাদের মধ্যে এ ভুল ধারণা বিদ্যমান থাকার কারণেই তারা ভালো-মন্দের একটি শিশুসুলভ বিচ্ছেদ করে পরস্পর পরস্পর বিরোধী দুটি পরম শক্তিতে পরিণত করার প্রয়াসে লিপ্ত হন।

সাধারণত, এ ধারণা থেকেই ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। পরে আস্তে আস্তে এটা এক কঠিন পরিস্থিতিতে পরিণত হয়। আর এ ধরনের পরিস্থিতির সমাধানের জন্য বেশীরভাগ সময় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক্তিদের প্রয়োজন অনুভূত হয়। এ সম্পর্কিত ব্যাপারে যে সমাধান হয় তা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক এবং এর বিষাক্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। আর যদি এ ধরনের পরিস্থিতির মূল কারণ উদঘাটন করে এর অপসারণ না করা হয় তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি বার বার ভিন্ন রূপে হানা দিবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, কমিউনিটিতে যারা সমষ্টিগত সামাজিক ভালো কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা জেনে বা না জেনে প্রায়ই এ ধরনের স্পষ্ট অবান্তর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।

উপরে উল্লেখিত বিষয় নিয়ে এখানে একটি  উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। যেমন, খারাপ মানুষ হিসেবে খ্যাত যারা কখনও কখনও ভালো কাজ করেছেন তাদের সম্পর্কে একটি উদাহরণ হল মুসলমানদের ইতিহাসে উমাইয়া খেলাফতের জেনারেল আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ যিনি নির্দয় ও নিষ্ঠুর গভর্নর হিসাবে খ্যাত ছিলেন। তবে, তিনি কিন্তু বেশ কিছু ভালো কাজও করেছেন। যেমন, তৎকালীন উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের নির্দেশে তিনিই প্রথম খনির উত্তোলন করেন। এই নিষ্ঠুর গভর্নরই তখনকার সময় স্বর্ণ ও সিলভার মুদ্রার ব্যাপক প্রচলন করেন। তিনি আরও অন্যান্য জিনিসের মধ্যে কোরআনের লিখিত অনুলিপিতে স্বরবর্ণ এবং স্বতন্ত্র চিহ্ন ব্যবহার শুরু করেন।

পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্টভাবে মানুষকে ভালো কাজ করার নির্দেশ করা হয়েছে। একে অন্যকে ভালো কাজে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে পরিস্কারভাবে সুরা মায়েদার ২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করবে। অন্যায় ও শত্রুতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে।’

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তিরা অন্যদেরকে ভালো কাজের উপদেশ দেন এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন, অথচ নিজেরা এ থেকে বিরত হন না। তাদের সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আল কুরআনের সুরা বাকারার ৪৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে – ‘তোমরা অন্যকে সৎ কাজ করতে বলো আর নিজেরা তা পালন করতে ভুলে যাও! অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর। তোমরা কি বিচার-বুদ্ধিকে কোনো কাজেই লাগাও না?’

পরিশেষে, আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদেরকে ভালো কাজ করার ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করেন এবং সহজ সরল পথে পরিচালিত করেন – সে পথে, যে পথে চলে গেছেন তোমার প্রিয়জনেরা। আমীন।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code