প্রচ্ছদ

আল্লাহু আকবারের শক্তি

  |  ১৬:৩৯, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
www.adarshabarta.com

Manual5 Ad Code

উবায়দুর রহমান খান নদভী

পৃথিবীতে যত কিছু আছে, যত শক্তি আছে, যত মোহমায়া বন্ধন আছে সবকিছু মানুষকে আবৃত করে রাখে। মানুষ এসব থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে ঐশী শক্তির মাধ্যমে। মাটির মানুষ মাটির উপকরণে মিশে যায়। ভৌত ও জড় জগতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায়, তখন তাকে মুক্ত করে তার আত্মা, তার রূহ, তার স্পিরিট। এই মুক্তির পথ হলো ঈমান। এই মুক্তির শক্তি হলো আল্লাহু আকবার স্লোগান। জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্তির ধ্বনি হচ্ছে আল্লাহ সবচেয়ে বড়। মহামহিম উচ্চ ও সুমহান।

দুনিয়ার ব্যস্ততা, মোহমায়া ও নেশার ঘোর থেকে বেরিয়ে এসে কল্যাণের দিকে, ইবাদতের দিকে যেন মানুষ যেতে পারে, তাই জন্য আল্লাহর নবী পরামর্শ ও স্বপ্নের মাধ্যমে লাভ করেছেন এই আজান। এখানে শুরু ও শেষে রয়েছে আল্লাহু আকবার এবং মাঝে ও সবশেষে ঈমান। মধ্যখানে নামাজ, চিরমুক্তি ও সাফল্যের আহ্বান। অর্থাৎ যে কাজেই তুমি ব্যস্ত ও মগ্ন রয়েছ বান্দা, আল্লাহ তার চেয়েও মহান।

Manual3 Ad Code

এই আজানকে আল্লাহর রাসূল (সা.) নাম দিয়েছেন, দাওয়াতে তাম্মাহ। পূর্ণাঙ্গ আহ্বান। মুসলিম জাতির আল্লাহ প্রেমের দৈনন্দিন জাগরণী গান। তবে এই আজানও নিজের ক্ষমতা ও প্রভাবে বিশাল রূপান্তর ঘটায় পরিবেশ এবং প্রত্যয়ের ব্যবধানে। প্রাচ্যের মহাকবি আল্লামা ইকবালের ভাষায়, আলফাজ ও মাআনি মে তাফাউত নেহি লেকিন। মোল্লাহ কি আজান আওর মুজাহিদ কি আজান আওর। মানে শব্দ ও অর্থের মধ্যে যদিও কোনো পার্থক্য নেই তথাপি মুয়াজ্জিনের আজান আর মুজাহিদের আজান এক নয়।

যে আল্লাহু আকবারের ধ্বনি জগৎবাসী শুনেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কলেজছাত্রী মুসকান খানের কণ্ঠে। তা কিন্তু দৈনন্দিন আল্লাহু আকবার স্লোগানের মতো ছিল না। এরমধ্যে ছিল এক নির্যাতিত কন্যার অসহায়ত্ব কাটিয়ে ওঠার ঈমানী অবলম্বন। বিধ্বস্ত মনের পুনর্গঠন। ঘুরে দাঁড়ানোর ঐশী জাগরণ। আল্লাহু আকবার ঈমানদার জনগোষ্ঠীর ভালোবাসার গদ্য বা কবিতা।

পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাসী হৃদয়ে আবেগ ও ভালোবাসার জোয়ার এনেছে একটি না‘রা। না‘রা অর্থ স্লোগান। আরবিতে হুতাফ। তবে আল্লাহর বড়ত্ব শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের বজ্রনির্ঘোষ উচ্চারণকে বলা হয় তাকবীর। মানে ঊচ্চকণ্ঠে আল্লাহু আকবার বলা।

Manual6 Ad Code

এটি একটি বড় ইবাদত। প্রাত্যহিক আমল ও জিকির। বছরে একবার জিলহজ মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পরপরই তাকবীরে তাশরীক অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ পড়া ওয়াজিব।

বিশেষ করে জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকেই ঈদুল আজহার রাত পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম জনসমক্ষে তাকবীর দিতেন। হাটে মাঠে ঘাটে আল্লাহু আকবারের স্লোগান তুলতেন। বিশেষ করে হজরত উমর (রাযি.) ঈদপূর্ব দিনগুলোতে জনতার মাঝে বেশি বেশি না‘রায়ে তাকবীর লাগাতেন। নবী করীম (সা.) স্বয়ং ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীর দিতেন। ঈদের খুতবায় প্রায় প্রতিটি বাক্যের পরপর বা অধিক হারে তাকবীর পড়তেন। যেসব তাঁরই চিরায়ত সুন্নাত।

Manual2 Ad Code

একটি স্লোগান কী করে ২০০ কোটি অন্তরে তাওহীদী চেতনা তথা ঈমানি দ্রোহ ও প্রেমের তপ্ত শিখা জ্বালতে পারে ঈমানদৃপ্ত এক বালিকার সিংহগর্জনে তা পৃথিবীর মানুষ দেখার সুযোগ পেল। মুমিনের হৃদয়ে স্পন্দন দোলা আর আল্লাহ প্রেমিক নরনারীর চোখে বিশ্বাস ভালোবাসা আর ঐশী প্রেমের অশ্রু এনে দেয় এই না‘রায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার। বিশ্ব মুসলিমের অন্তরজগতে বিশ্বাসের দীপশিখা হয়ে আছে এই আল্লাহু আকবার।

Manual1 Ad Code

উম্মাহর অন্তঃকরণ স্পর্শ ও উজ্জীবিত করার মতো পরম অধ্যাত্ম পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে এ অপার্থিব স্লোগানটিতে। আজীবন বলতে থাকা চাই লাখো-কোটি অসংখ্য অগণিত বার ‘আল্লাহু আকবার’!

সূত্র: ইনকিলাব

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code