প্রচ্ছদ

মানুষে মানুষে ভেদাভেদ – রক্তের রঙ লাল!

  |  ১৪:৫২, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
www.adarshabarta.com

Manual5 Ad Code

সাদেকুল আমিন:

অনেক অনেক দিন আগে থেকেই পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটা মহাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রথমে আদম (আ:) সন্তান ও পরে নূহ (আ:) এর সন্তানেরা তাঁদের নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনমত বসবাস শুরু করে। সময়ের পালাবদলের সাথে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের দৈহিক গঠন, আকার, আকৃতি এবং বর্ণে বৈচিত্র্যতা আসে। এছাড়াও তাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, কথা-বার্তার ধরণ, চাল-চলন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ এবং ভাষার মধ্যেও বৈচিত্র্যতায় ভরপুর।

তবে, এ বৈচিত্র্যতার মধ্যে যে জিনিসটি সব মানুষের মাঝে সমান ভাবে বিদ্যমান সেটা হচ্ছে মানুষের রক্ত এবং রক্তের রঙ। আশ্চর্যজনকভাবে হলেও সত্য যে, সব মানুষের রক্তের রঙ লাল। আর মানুষের এ বৈচিত্র্যতার মধ্যে রক্তের অনন্যতা এ যেন এক ঐক্যের বাণী।

তা হলে প্রশ্ন করা যেতে পারে, রক্ত কি এবং এতে কি আছে? রক্ত (Blood) হল জীবন রক্ষাকারী তরল যা মানুষের সারা শরীরে সঞ্চালিত হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে গড়ে প্রায় 5 লিটার রক্ত থাকে। শরীরে রক্তনালীগুলির তিনটি প্রধান প্রকার: ধমনী (Arteries), শিরা (Veins) এবং কৈশিক (Capillaries)। আর এই রক্তনালীগুলো সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত করে। ধমনীগুলি হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ​​পরিবহন করে। শিরা রক্তকে হার্টের দিকে ফিরিয়ে দেয়। মানুষের সমস্ত ধমনী এবং শিরাগুলির মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৬০,০০০ মাইল বা ১০০,০০০ কিলোমিটার। আর এটি পৃথিবীর পরিধির প্রায় আড়াই গুণ।

আর এ রক্ত চারটি উপাদান দিয়ে গঠিত: প্লাজমা (Plasma), লোহিত রক্তকণিকা (Red blood cells), শ্বেত রক্তকণিকা (White blood cells) এবং প্লেটলেট (Platelets)।

তবে এখানে রক্তের এই চারটি উপাদান সমন্ধে একটু জেনে রাখা ভালো।

Manual2 Ad Code

প্লাজমা হল রক্তের ফ্যাকাশে-হলুদ তরল অংশ যা মানুষের সমস্ত রক্তকণিকাকে ধারণ করে। এটি মোট রক্তের অর্ধেকের কিছু বেশি।  এই প্লাজমা আবার ৯০% পানি (Water), প্রোটিন (Proteins) এবং লবণ (Salt) অণু দিয়ে গঠিত।

Manual2 Ad Code

প্লাজমা মানুষের শরীর জুড়ে পানি, পুষ্টি, খনিজ, ওষুধ এবং হরমোন সরাতে সাহায্য করে। এটি কিডনিতে বর্জ্য পণ্যও বহন করে। তারপর কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে।

লোহিত রক্তকণিকা যা অস্থিমজ্জায় (Bone marrow) তৈরি হয় এবং রক্তে পাওয়া যায়। শরীরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মিলিয়ন (২৫ ০০০ ০০০ ০০০ ০০০ বা ২৫×১০^১২) লোহিত রক্তকণিকা রয়েছে যা প্রতি সেকেন্ডে দুই মিলিয়ন তৈরি হয়। এ লোহিত রক্তকণিকার রঙ উজ্জ্বল লাল হওয়ার কারণেই রক্তের রঙ লাল হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, একটি লোহিত রক্তকণিকা পুরো শরীরে ঘুরতে প্রায় ২০ সেকেন্ড সময় নেয়। এতে হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) নামে একটি প্রোটিন থাকে, যা ফুসফুস (Lungs) থেকে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করে। এবং শরীরের টিস্যু থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে। এই রক্তকণিকা রক্তের প্রায় অর্ধেক এবং এটির জীবনকাল প্রায় ৪ মাস বা ১২০ দিন।

শ্বেত রক্তকণিকা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ইমিউন প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে। এটি মোট রক্তের একটি খুব ছোট অংশ যা ১% এর কম।

Manual2 Ad Code

প্লেটলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্লেটলেটগুলো কোষের ছোট অংশ যা রক্তের একটি খুব ছোট অংশ যা ১% এর কম। প্লেটলেটের জীবনকাল প্রায় ৯ থেকে ১২ দিন।

যেমন ধরুন এক ফোঁটা রক্ত – আর এই এক ফোঁটা রক্তের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন লোহিত রক্তকণিকা, ১৩ মিলিয়ন প্লেটলেট এবং ৩৭৫,০০০ শ্বেত রক্তকণিকা।

মানুষের রক্তে সাধারণত A, B, AB এবং O নামক চারটি প্রধান রক্তের গ্রুপ রয়েছে। এগুলো দেখতে আলাদা নয় কিন্তু এতে কিছুটা ভিন্ন রাসায়নিক রয়েছে।

মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এটি শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। রক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ বহন করে যা শরীর থেকে ফুসফুস, কিডনি এবং পরিপাকতন্ত্রে নিয়ে যায়। রক্ত সংক্রমণের সাথে লড়াই করে এবং শরীরের চারপাশে হরমোন বহন করে।

Manual6 Ad Code

পরিশেষে, এটি দৃশ্যমান যে, আপাতদৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে বাহ্যিক ভেদাভেদ থাকলেও সব মানুষের রক্তের সাধারণ উপাদান এবং রক্তের রঙ সমান – লাল। আর আমরা মানুষের রক্তের এই অনন্যতা থেকে যেটা উপলব্ধি করছি সেটা হচ্ছে যে এতে এক ঐশ্বরিক স্পর্শতা ও একতা বিদ্যমান আছে।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code