প্রচ্ছদ

দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একসাথে নেয়ার ব্যবস্হা করবোঃ জবি ভিসি

  |  ১৮:৫৪, জুলাই ০৮, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual8 Ad Code

মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন,
আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই অনলাইন লেখাপড়াকে অন ক্যাম্পাস পড়াশোনার বিকল্প হিসেবে মনে করি না। আধুনিক প্রযুক্তি থাকলেই যে সবাইকে অনলাইনে পড়াশোনা করতে হবে এটাও আমি বিশ্বাস করি না।এটি যদি এমনই হতো যে অন ক্যাম্পাস পড়াশোনার একেবারেই একটা পরিপূর্ণ বিকল্প হচ্ছে অনলাইন লেখাপড়া করা তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো- অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, এমআইটি​ তারা তাদের ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে,​ ​ কার্যত সব অনলাইনেই পড়াশোনা করাত।

সেজন্য বিশেষ করে- আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলের যে পড়াশোনা অথবা প্রায়োগিক বা ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক অথবা​ বিজ্ঞানের যে অন্বেষণ সেগুলো তো একেবারেই অনলাইনে করা অসম্ভব। যার কারণে পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণভাবে অনলাইননির্ভর এমনটা কোথাও দেখা যায় না। যেটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে কিছু সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, সভা, সেমিনার অথবা কিছু থিউরিটিক্যাল ক্লাস তারা অনলাইনে আপলোড করে- এটা চালু আছে। কিন্তু এখন যে একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে, বিশ্বজুড়ে যে মহা সংকট, করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট সেখানে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসতে পারছে না এবং তারা মোটামুটি বলতে গেলে শিক্ষকদের সংস্পর্শে না আসার কারণে একেবারেই শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সেই বিবেচনায়- জগন্নাথের শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখার জন্য অর্থাৎ তারা যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য আমি মনে করি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে কিছু পাঠদান শুরু করা দরকার।এজন্য আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় সর্বসম্মতভাবে অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

আমাদের যে সীমাবদ্ধতাগুলো আছে- প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, এই সীমাবদ্ধতাগুলো সরকার চেষ্টা করবে কমিয়ে আনার জন্য।যাতে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে, সেটা যেন না হয়। সবাই যেন মোটামুটি ইন্টারনেট সুবিধা পেয়ে এবং তারা যেন এটা ব্যবহার করে​ অনলাইনে পড়ালেখার যে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সেটির মাধ্যমে​ উপকৃত হয়। আশা করছি সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।ব্যাধির দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু করেছি বা ইতোমধ্যে শুরু করতে যাচ্ছে।

বলাবাহুল্য, অনলাইনে ক্লাস হলেও​ আমরা কোনো অবস্থাতেই অনলাইনে পরীক্ষা নিবো না। কেননা আমাদের যে পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষা সংক্রান্ত যে আইন সেটার সঙ্গে অনলাইন পরীক্ষা নেয়া সাংঘর্ষিক। তবে সেগুলোর বড় ধরনের পরিবর্তন না করে অথবা আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ একটা নির্দিষ্ট লেভেলে না নিয়ে আমরা পরীক্ষা নিবো না। সেজন্য আমরা চলতি সেমিস্টারের তাত্ত্বিক যে ক্লাসগুলো আছে সেগুলো অনলাইনে শেষ করব।আর পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করবো এবং আশা করা যায় এবছরের শেষের দিকে কিংবা আগামী বছরের শুরুর দিকে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে পাবো।তখন তাদেরকে চলতি সেমিস্টারে কিছু রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস এবং দুই সেমিস্টারের যে প্র্যাকটিক্যাল অর্থাৎ ব্যবহারিক ক্লাস করিয়ে দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একবারে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। তবে এটা আমি আবারও বলছি, কোন অবস্থাতেই এটাকে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবো না।

Manual3 Ad Code

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকদের সান্নিধ্যে রেখে যে লেখাপড়া সেটি এখনও​ একমাত্র পদ্ধতি বলে আমি মনে করি।আর এখন আমরা যে অনলাইন পদ্ধতিতে সামনে অগ্রসর হতে যাচ্ছি এটি কেবলই একটি আপদকালীন ব্যবস্থা। স্বাভাবিক অবস্থা যখন ফিরে আসবে তখন আমরা আমাদের সেই​ আগের সনাতন শিক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে যাবো। সেখানে হয়তো প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা বাড়বে। প্রযুক্তির ব্যবহার যেখানে যেখানে সম্ভব সেটা আমরা করবো এবং আমরা আশা করবো, এই যে পদ্ধতি যেটা আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রহণ​ করলাম এটা যেন এরকম না হয় যে, দ্রুত কোর্স শেষ করে, সেমিস্টার মেনটেইন করে, দ্রুত পাস করিয়ে, পরবর্তী সেমিস্টারে তাদের ভর্তি করানো- সেটা আসলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য নয়।

Manual7 Ad Code

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সংকট আছে, কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি নিয়মিত সেমিস্টারগুলো কন্টিনিউ না করে, তারা যদি টিউশন ফি জমা না পায় তাহলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে, চলবে না। সেজন্য সেখানে সেমিস্টার নিয়মিতকরণ, ভর্তিকরণ, পরীক্ষা নেওয়া, টাকা জমা হওয়া- এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ; বিধায় তারা তাদের মতো করে বিবেচনা করবে।

Manual1 Ad Code

কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু এই সমস্যা নেই, আর আমি মনে করি খুব দ্রুত শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার শেষ করে, রেজাল্ট দিয়ে, তাদের পাস করিয়ে বের করে দিয়ে খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবে না।কারণ ইতোমধ্যে আগে যারা পাস করে বেরিয়েছে তাদেরই অনেকের চাকরি হয়নি।আর যাদের চাকরি ছিল এরকম অনেকেরই চাকরি এখন হুমকির সম্মুখে। তাই দ্রুত বের হলেই দ্রুতই চাকরি পেয়ে যাবে এরকম আমি মনে করি না।

আর যে কাজগুলো সাধারণত করা উচিত- সৃজনশীল কাজ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কাজ এবং জ্ঞান অনুশীলনের যে​ কাজ প্রভৃতিতে শিক্ষার্থীরা বেশি মনোযোগী হতে পারে। কেবল টেক্সট নয়, এর বাইরেও যে পড়াশোনা করার একটা বিশাল জগৎ রয়েছে তা তারা এখন খুঁজে বের করতে পারে, সেটা আমি মনে করি। করোনাকালে এটাও তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে।

Manual8 Ad Code

অর্থাৎ কেবল অনলাইন ক্লাসের মধ্যে অবদ্ধ না থেকে অথবা কেবল পাঠ্যবই নয়, তার বাইরেও আমাদের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, পৃথিবীর ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি এগুলো সমন্ধেও যদি শিক্ষার্থীরা জানার চেষ্টা করে আমি মনে করি সেটি তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code