প্রচ্ছদ

লকডাউনে কক্সবাজারের পর্যটনে ক্ষতি আড়াই হাজার কোটি টাকা

  |  ১৯:৪৭, মে ৩১, ২০২১
www.adarshabarta.com

Manual2 Ad Code

আদর্শবার্তা ডেস্ক :

পর্যটন শিল্পে চরম সংকট এনে দিয়েছে করোনা। করোনার সংক্রমণ রোধ ও সর্বাত্মক লকডাউনে জনশূণ্য জনপদে পরিণত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নগরী কক্সবাজার। লকডাউনের প্রভাবে গত প্রায় দু’মাসে কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পর্যটন জোন ও শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল–রেস্তোরাঁ, কয়েকশ’ শুঁটকি ও শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি পণ্য বেচাবিক্রির দোকানপাটসহ পর্যটনের সকল অনুষঙ্গ মিলিয়ে এই ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা।

Manual8 Ad Code

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বা স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতের কঠোরতায় পর্যটন ব্যবসা খুলে দেয়া না হলে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনা পর্যটন নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস এন্ড রিসোর্টের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটক নেই, ২৫০ রুমের হোটেলটি পুরোই খালি পড়ে আছে। কিন্তু হোটেল খোলা রাখতে হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ খরচ, ব্যাংক ঋণ কিস্তিসহ নানা খাতে দৈনিক লোকসান যাচ্ছে প্রায় চার লাখ টাকা করে।

Manual8 Ad Code

আরেক তারকা হোটেল দি কক্স টু ডে’র ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, চলতি লকডাউন শুরুর হতেই খালি পড়ে আছে হোটেল। কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ খরচসহ নানা খাতে দৈনিক লোকসান যাচ্ছে তিন লাখ টাকা করে।

Manual1 Ad Code

শুধু এদুটি নয়, অন্য তারকা হোটেল এবং অন্যান্য গেস্ট হাউজ, মোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাটসহ পর্যটন সেবী প্রায় সাড়ে ৪শ’ আবাসন প্রতিষ্ঠানই পর্যটকহীন খাঁ খাঁ করছে।

হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, শহরের হলিডে মোড় হতে কলাতলীর দরিয়ানগর সৈকত এলাকা পর্যন্ত তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ রয়েছে চার শতাধিক। পহেলা এপ্রিল হতে কোনো হোটেলে অতিথি নেই। লকডাউনের ঘোষণা জানতে পেরে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস কর্তৃপক্ষ ১ এপ্রিলের আগেই ৯৩ শতাংশ কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। বর্তমানে পাঁচ থেকে ৭ শতাংশ কর্মচারী হোটেল–মোটেলে অবস্থান করে সম্পদ পাহারা দিচ্ছেন।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত ৫২ দিনে সৈকত নগরীর প্রায় সাড়ে ৪০০ আবাসন প্রতিষ্ঠানে দিনে ক্ষতি প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর আড়াই শতাধিক খাবার হোটেলে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকা করে। হোটেল রিলেটেড আনুষঙ্গিক অন্যান্য সেক্টরে ক্ষতি প্রায় ৭ কোটি টাকা। কক্সবাজারে তারকা মানের হোটেল ৪৫টি, মাঝারি মানের হোটেল ২৩০টি। পৃথক সাতটি হোটেল মোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মোর্চা এই ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের আওতাধীন হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৭০৯। ১ এপ্রিল থেকে সব কটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ।

কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সম্পাদক মুকিম খান বলেন, এখানে হোটেল–মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে ৫২টি। কোনো হোটেল খোলা নেই দাবি করে সমিতির সাধারণ বলেন, ‘আমরা করোনার সংক্রমণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তারপরও কর্মচারীদের মানবিক দিক বিবেচনায় নিতে হবে, হোটেল–মোটেল বন্ধ থাকায় ৫২টি হোটেল ও রিসোর্টের অন্তত পাঁচ হাজার কর্মচারী বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। অধিকাংশ কর্মচারীর বেতন–ভাতাও পরিশোধ হয়নি। তাই সীমিত আকারে হলেও সৈকত খুলে দেয়া উচিত।

ট্যুরস ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে প্রতি বছর দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অর্ধকোটি পর্যটক আসেন। তাদের যাতায়াতে প্রতিদিন দূরপাল্লার অনেক বাস ও ১০-১২টি ফ্লাইট যাতায়াত করে। পর্যটক সেবায় থাকা হোটেল-মোটেল, কটেজ ও রেস্টুরেন্ট ও বিমান চলাচল সবই বন্ধ রয়েছে গত প্রায় দু’মাস। এতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসা ভেস্তে গেছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, গত বছরের মতো এ বছরেও গত দুটি মাস কক্সবাজারে সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পর্যটনের অর্থনীতি নিম্নমুখী। আমাদের হিসাবে প্রতিদিন ৪৫ হতে ৫০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে আরো কিছুদিন চলতে থাকলে আরও ধস নামবে। ইতোমধ্যে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া গেলে ক্ষতি কিছুটা এড়ানো সম্ভব।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। এর প্রতি সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত জানিয়ে রেখেছি। সরকারি সিদ্ধান্তে পর্যটনসেবীদের জন্য কোন বরাদ্দ এলে তা যথাযথভাবে বিতরণ করা হবে। তবে, এখনো পর্যন্ত প্রণোদনা পাওয়া যায়নি।

সূত্র : ইত্তেফাক

Manual2 Ad Code

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code