প্রচ্ছদ

জো বাইডেনের জীবনবৃত্তান্ত

  |  ১০:৩০, নভেম্বর ০৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :

Manual7 Ad Code

জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, যিনি সর্বজনস্বীকৃত জো বাইডেন হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হয়ে লড়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাইডেন।

১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জো বাইডেনের জন্ম। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। মা আইরিশ বংশোদ্ভূত। উত্তর-পূর্ব পেনসিলভানিয়ার স্ক্র্যানটনে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবা বাইডেন সিনিয়র ছিলেন ফারনেস ক্লিনার। তবে জীবনের বড় একটি সময় তার কেটে গেছে গাড়ির সেলসম্যান হিসেবেও। ছোটবেলা থেকে প্রবল দারিদ্র্যের মাঝে বড় হয়েছেন মার্কিন এই রাজনীতিক।

Manual6 Ad Code

নিজের মানসিকতা দৃঢ় করতে বাবা-মায়ের অবদান এবং দারিদ্র্যকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। যে দারিদ্র্য আর কঠিন জীবনযাত্রা তাকে একজন পোক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে; তা অনেক সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করেছেন বাইডেন।

স্ক্র্যান্টনে সেন্ট পালস এলিমেন্টরি স্কুলে পড়াশোনা করেন বাইডেন। ১৩ বছর বয়সে পরিবারসহ ডেলাওয়ারে আসেন তিনি। ছোটবেলা থেকে বাচনশক্তিতে সমস্যা ছিল বাইডেনের। এ জন্য স্কুলে সহপাঠীরা প্রায়ই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত।

সেন্ট হেলেনা স্কুল, বার্চমেরে একাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষকদের নজর কাড়েন রোগাটে, ছিপছিপে কিশোর বাইডেন। ছোট্টবেলায় কথা বলতে গিয়ে আটকে যাওয়া শিশু বাইডেন আজ মার্কিন রাজনীতির অন্যতম আইকন।

ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনার পাট চোকেন বাইডেন। ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার প্রতি ছিল অন্য রকম এক টান। জন এফ কেনেডির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম ভক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৬১ সালের দিকে ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। রাজনীতির মাঠে নামার পর নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয় শেষ পর্যন্ত পরিণয়ে রূপ নেয় ১৯৬৬ সালে। তাদের ঘরে রয়েছে জোসেফ, হান্টার, নাওমি নামের তিন সন্তান। ১৯৭২ সালে বড়দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। তার মেয়ে নাওমিও দুর্ঘটনায় মারা যান। নিলিয়াকে হারানোর এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

জো বাইডেন ১৯৬৮ সালে একটি ল’ ফার্মে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭০ সালে নিউ ক্যাসল কাউন্টি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন। এরপর নিজস্ব ল’ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭২ সালের নভেম্বরে রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মনোনীত হন তিনি। এরপর মার্কিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেন নিজের নাম। মার্কিন ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন ২৯ বছরের বাইডেন।

১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত হন জো বাইডেন। ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে প্রথমবার সিনেটে যান তিনি। এরপর ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ ও ২০০৮ সালে সিনেটর হিসেবে টানা নির্বাচিত হন জো বাইডেন।

Manual5 Ad Code

সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া প্রথম স্ত্রী নিলিয়াকে নিজের স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন বাইডেন। বলেছিলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন ৩০ বছর বয়স হওয়ার আগে একবার সিনেটর নির্বাচিত হতে চান। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে বলে স্ত্রীকে জানান।

Manual7 Ad Code

স্ত্রীকে বলা স্বপ্নের বাস্তবায়নে রাজনীতির ময়দানে এবার জোরেশোরে আসার জানান দিলেন বাইডেন। ১৯৮৭ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তবে অসুস্থতার কারণে পরের বছর এই লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হন তিনি। ২০০৭ সালের কথা। আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। ওই সময় বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে ব্যর্থ হন।

হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে পারেননি তিনি। পরে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে টেলিফোন পান তিনি। বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ওবামা। ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত একই পদে ছিলেন তিনি।

তবে ২০১৫ সালে আবারও প্রিয়জন হারান। মস্তিষ্কের ক্যানসারে বড় ছেলে বো বাইডেনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জো।

বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টিকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তার ওপর।

এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন বাইডেন।

বাইডেনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর থেকে বাইডেনকে পররাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষানীতির ক্ষেত্রে ‘দুর্বলচিত্ত’ বলে তুলে ধরা শুরু হয়।

ওই ভোট নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পরবর্তী কয়েক বছর বাইডেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কট্টর অবস্থান দেখাতে শুরু করেন। যেমন বলকান গৃহযুদ্ধে আমেরিকান অবস্থান, ইরাকে বোমা হামলা ও আফগানিস্তানে দখলদারি কায়েমের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে – এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন বাইডেন তাতে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন।

ইরাক যুদ্ধের পর তিনি বামপন্থার দিকে ঝোঁকেন। তিনি ইরাকে মার্কিন সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দেন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বন্ধ করার পক্ষেও মত তুলে ধরেন।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code