প্রচ্ছদ

কোন পথে ভারত-চীন সামরিক উত্তেজনা?

  |  ০৬:২৬, জুন ১৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

মোঃ নাসির, বিশেষ প্রতিনিধি :

ভারত-চীন সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই দেশের সামরিক উত্তেজনা সহিংস সংঘাতে রুপ নিয়েছে। চীনা সেনাদের হাতে নিজেদের অন্তত ২০ জন সেনা নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভারত। সংঘাতে চীনেরও ৪৩ সেনা হতাহত হয়েছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো দাবি করলেও এ নিয়ে কিছু জানায়নি চীন।

Manual6 Ad Code

কাশ্মীর অঞ্চলের লাদাখে ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গলওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত মে মাস থেকে শুরু উত্তেজনা নিরসনে দুই পক্ষের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সোমবার রাতে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘সোমবার ভারতীয় সেনারা দুবার সীমান্তরেখা অতিক্রম করে উসকানিমূলকভাবে চীনের সেনাদের আক্রমণ করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।’ তবে ভারতের দাবি, ‘চীনা সেনারা ভারতীয় সীমানার অনেক ভেতরে ঢুকে পড়েছিল।’
সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনাকে সামরিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগজনক বলছেন এই কারণে যে, দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের সীমানা সংযোগ থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে চার দশকে কোনো পক্ষে প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে অরুণাচলে শেষ বার মৃত্যু হয়েছিল ৪ ভারতীয় সেনার।

Manual2 Ad Code

দুই এশীয় পরাশক্তি কয়েক দশক ধরে বৃহত্তর জনমানবশূন্য অঞ্চল নিয়ে লড়াই করে আসছে। বিতর্কিত এসব সীমান্ত নিয়ে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ হয়েছিল। অবশ্য ভারতের তাতে শোচনীয় পরাজয় ঘটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী এই দেশ দুটির মধ্যে সামরিক উত্তেজনার ঘটনা বেড়েছে।

কয়েক বছর ধরেই দুই দেশের সীমানা বিভাজনকারী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) ভারতের সড়ক ও সেতু বানানো নিয়ে চীনের ধারাবাহিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে এ উত্তেজনার শুরু। ভারত বলছে, নিজেদের সীমানার ভেতর স্থানীয় মানুষের জন্যই এসব অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে।

চীন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে কিংবা সংস্কার করা হচ্ছে এমন সড়কের সংখ্যা ষাট এর বেশি। মূলত লাদাখ থেকে ভারতে বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি পর্যন্ত আড়াইশো কিলোমিটারের সড়ক নিয়েই চীন আপত্তি জানিয়ে আসছে। গত বছরের অক্টোবরে এই সড়কটির উদ্বোধণ করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
স্থানীয়দের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে বলে নয়াদিল্লি দাবি করলেও চীনের গণমাধ্যমগুলো সীমান্তে উসকানির জন্য ভারতকে দায়ী করে আসছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের এসব অবকাঠামো নির্মাণে চীন তাই বারবার বাধা দিয়ে আসছে। কৌশলতভাবে লাদাখের গলওয়ান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষ উত্তেজনার শুরু গত মে মাসের শুরুতে। তিব্বত ও লাদাখ সীমান্তে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তির মধ্য দিয়ে। মে মাসের শুরুতে লাদাখের গলওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেক ছাড়াও নেপাল সীমান্তবর্তী সিকিমের নাকু লায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়।

Manual1 Ad Code

গত ৫ মে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, চীনা সেনারা তিনটি আলাদা পয়েন্টে সীমানা পেরিয়ে তাঁবু এবং প্রহরী চৌকি তৈরি করেছিল এবং মৌখিক সতর্কবাণী দেওয়া সত্ত্বেও তারা ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অগ্রাহ্য করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডা ও ধ্বস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

Manual8 Ad Code

৯ মে সিকিম সীমান্তে সেনাদের ধ্বস্তাধস্তি ও পাথর নিক্ষেপের ফলে সৃষ্ঠ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ও চীনা সেনা আহত হয়। ভারত জানায়, লাদাখ অঞ্চলে সীমানা পেরিয়ে কয়েক কিলোমিটারে মধ্যে একাধিক ছাউনি গড়েছে চীনা সেনারা। এরপর ভারতও ওই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে।

এরপর স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কূটনৈতিকভাবে বিবাদ নিরসন প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার পর জুন মাসের শুরুতে দুই পক্ষের কমান্ডারদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়; যা আগে কখনোই হয়নি। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ভারত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানালেও সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণায় বলেছিল, উভয় পক্ষ ‘পরিস্থিতি সমাধানে এবং সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করতে সামরিক এবং কূটনৈতিক আলোচনার কাজ চালিয়ে যাবে।’ চীনও জানায়, ‘কূটনৈতিক ও সামরিক উপায়ে সীমান্ত উত্তেজনা সমাধানের বিষয়ে ভারতের সাথে ‘ইতিবাচক ঐকমত্যে পৌঁছেছে’ তারা।

শীর্ষ স্তরে সামরিক বৈঠক ও কূটনৈতিক প্রয়াসে যে প্রকৃতপক্ষে কোনও অগ্রগতি হয়নি সোমবারের রক্তক্ষয়ী সংঘাত সেটাই প্রমাণ করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।

লাদাখ নিয়েই ১৯৬২ সালে দেশ দুটির যুদ্ধ হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত হলেও যুদ্ধটি ছিল বেশ রক্তক্ষয়ী। তারপর থেকে দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি হলেও ১৯৭৫ সালের পর তো কোনো গুলিই চলেনি। কিছু উত্তেজনা শুরু হলেও তা দ্রুত মেটানো হতো। তবে এবারের অবস্থা যে ভিন্ন তা বেশ স্পষ্ট।

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code