প্রচ্ছদ

নিউইয়র্কে করোনা জয়ী জাঃ সায়েরা এবং ফজলুল হক দম্পতির কথা

  |  ০৬:৪৭, মে ১৪, ২০২০
www.adarshabarta.com

হাকিকুল ইসলাম খোকন / মোঃ নাসির / হেলাল মাহমুদ, বাপসনিউজ, যুক্তরাষ্ট্র :

নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনের সুপরিচিত এক চিকিৎসক জাঃ সায়েরা হক এবং ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক দম্পতি করোনা জয় করেছেন। উভয়েই করোনা পজিটিভ ছিলেন। এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক এপ্রিলের ১৪ তারিখে নিকটস্থ কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। তবে দুদিন পর ১৭ এপ্রিল প্রেসক্রিপশনসহ তিনি বাসায় ফিরেন। তার স্ত্রী ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. সায়েরা হক হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ সেবনসহ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সহযোগী হয়ে একইবাসায় স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী বসবাস করায় বর্তমানে উভয়েই করোনা মুক্ত। ডা. সায়েরা হক তার রোগীদের টেলিফোনে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন এবং ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক মেট্রপলিটন ট্য্রাঞ্জিট অথরিটি (এমটিএ)’র চাকরিতে যোগদান করছেন এ সপ্তাহেই। উল্লেখ্য, সারাবিশ্বে একক সিটি হিসেবে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছেন। বাংলাদেশী ৩ ডাক্তারও ইন্তেকাল করেছেন এ সময়ে। সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে ৯৬ সদস্যের পরিবারের অধিকর্তা হিসেবে স্বামী-স্ত্রী একত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও ভেঙ্গে পড়েননি।কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে এসে সিটিজেনশিপ গ্রহণের পরই নিকটাত্মীয় সকলকেই পর্যায়ক্রমে নিউইয়র্কে এনেছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, শশুর-শাশুড়ি, খালা-খালু, চাচা-চাচি এবং তাদের সন্তানের কেউই বাদ নেই। এই পরিবাওে অন্তত: ৭ জন রয়েছেন যাদের বয়স ৭০ বছরের অধিক। তবে কেউই জটিল কোন রোগে আক্রান্ত নন-বললেন ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক। ফলে যে ধরনের শংকা সর্বত্র বিরাজ করছে, সেটি আমাকে গ্রাস করতে পারেনি-বলেন ইঞ্জিনিয়ার হক। যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক জানালেন তার করোনা বিজয়ে ঘটনা। বললেন, কোন সিমটম ছিল না। তদুপরি স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানেরা আইসোলেশনে বসবাস শুরু করেছিলাম মার্চের শেষ দিন থেকে। এমনি অবস্থায় জানলাম যে আমার ভায়রা-ভাই করোনায় আক্রান্ত। তিনি চাকরি করেন নিউইয়র্ক পুলিশ ডিাার্টমেন্টে।

এটি নিশ্চিত হবার পর আমি এবং আমার স্ত্রী ডা. সায়েরা হক ৩ এপ্রিল গেলাম করোনা টেস্ট করতে। ৫ এপ্রিল জানানো হলো যে, আমরা উভয়েই পজিটিভ। এরপর এক ধরনের দুশ্চিন্তা গ্রাস করলেও মনোবল হারাইনি। প্রতিদিনই বেশ কয়েক গ্লাস গরম পানি, লেবু পানি, আদা-লং আর মধু দিয়ে চান পান করি। সাথে রয়েছে ওষুধ। ফলমূলসহ পুষ্টিকর খাদ্য নিতে থাকি অধিক পরিমাণে। এমনি অবস্থায়ও শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বলবোধ করায় ১৪ এপ্রিল স্ত্রীর সাথে গেলাম কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে। সেখানে জরুরী বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন আমার স্ত্রী। তাই সকলেরই পরিচিত হওয়ায় বাড়তি সুযোগ পেলেও সাথে বেডে যেতে দিচ্ছিলেন না স্ত্রীকে। তিনি চিকিৎসক হলেও যেহেতু করোনা পজিটিভ তাই সকলেই সতর্কতা অবলম্বনে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার হক উল্লেখ করেন, এক পর্যায়ে স্ত্রীর জেদের কাছে অন্যেরা সমর্পণ করেন এবং আমার দেখভালের দায়িত্ব তাকে নিতে সম্মতি দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল অনেকটা ভালো মনে হওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরি। বাসায় আসার পর করোনা নামক ভয়ংকর জার্ম থেকে মুক্ত হয়েছি বলে অনুমতি হচ্ছে। একইসাথে সায়েরা হকও সুস্থবোধ করায় পুরোদমে টেলি-মেডিসিন দিচ্ছেন তার রোগীদের।ইঞ্জিনিয়ার হক উল্লেখ করেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, একইবাসায় (অনেক রুম থাকায়) এতগুলো বসবাস করলেও আমরা কারো বিরাগভাজন হইনি। আলাদা থেকেছি, খাবার তারা সরবরাহ করেছেন। সকলেই চেষ্টা করেছেন হাসি-খুশীতে ভরপুর থাকতে। আমরা যে কঠিন একটি রোগে আক্রান্ত, যে রোগে প্রতিদিনই অনেক পরিচিত মানুষের মৃত্যুর সংবাদ সকলে পাচ্ছেন, তবুও কেউই হাল ছাড়েননি।
ইঞ্জিনিয়ার হক বলেন, মনোবল হারালেই বিপদ এবং পারতপক্ষে হাসপাতালে না যাওয়াই শ্রেয়। কারণ, এটি বাসায় অবস্থান করেও চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। আমরা সেটি করেছি এবং প্রমাণও পেলাম হাতেনাতে।
করোনা বিজয়ী ডা. সায়েরা হক বলেন, ‘আমি ভালো হয়েছি বলে খুব খুশী হতে পারছি না। কারণ, ইতিমধ্যেই আমার অনেক রোগী মারা গেছেন। আরো অনেকে হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এত পরিচিতজনের মৃত্যু সংবাদ আমাকে বিষন্নতায় আক্রান্ত করছে।’ চিকিৎসাধীন সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি, মনোবল হারাবেন না। তাহলেই করোনা আষ্কারা পাবে। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বাসার বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন। অন্য মানুষের থেকে ৬ ফুট দুরে অবস্থান করুন। করোনা অবশ্যই পরাস্থ হবে আপনার কাছেও।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে ১০ মে পর্যন্ত এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৯১ ঁন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৪ হাজার ২৫৬ জন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, এরমধ্যে মারা গেছে কমপক্ষে ১৯ হাজার ৪২৯ জন। এরমধ্যে ১৯০জনের বেশী হচ্ছেন বাংলাদেশী। সর্বশেষ ৯ মে শনিবারও ৪ প্রবাসী মারা গেছেন এই সিটিতে।