প্রচ্ছদ

আদর্শ বার্তা’র সাব এডিটর কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল আর নেই

  |  ১৮:৪১, জুন ০৬, ২০২৪
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

আমরা গভীরভাবে শোকাহত
আদর্শবার্তা রিপোর্ট :

সিলেট লেখক ফোরামের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম সভাপতি, আদর্শবার্তার সাব এডিটর, সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন ২০২৪ ইংরেজি) সকাল আনুমানিক সোয়া ৮ টার দিকে সিলেট এম, এ জি ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি বেশ কয়েক মাস থেকে লিভার জনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৪৭ বছর। তিনি পিতা মাতা, ৩ জন ভাই, ৩ জন বোন, সহধর্মিণী এবং ২ জন পুত্র ও ১ জন কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নাজমুল ইসলাম মকবুলের মৃত্যুতে প্রবাসে স্বদেশে সর্বত্রই শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কবি গীতিকার,মিডিয়া কর্মী ও সংগঠক নাজমুল ইসলাম মকবুল বিশ্বনাথের অলংকারী গ্রামে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরতুজ আলী। মা বাবার প্রথম সন্তান তিনি। লেখালেখির পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতি, সামাজিক ও সেবামুলক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এরমধ্যে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরকে সম্মাননা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, রত্মগর্ভা মা-বাবা সম্মাননা, শিক্ষাবিদদের সম্মাননা ইত্যাদি।
নাজমুল ইসলাম মকবুল শুধু একজন কবি নয় একজন শেকড়সন্ধানী লেখক গীতিকার ছড়াকার পূঁথিকার ও কলামিষ্ট। সিলেটি ভাষায়ও লিখেছেন অবিরাম। তাঁর লেখায় আছে রস এবং কষ। একসময় তিনি ঘরে ঘরে রাত বিরাতে আয়োজন করতেন মশাল, কুপি বাতি কিংবা লন্টন জ্বালিয়ে রসে ভরা মনোমুগ্ধকর পূঁথি পাঠের আসর। কালের পরিক্রমায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীত ঐতিহ্যকে ধারন ও লালন করতে কবি নাজমুল পূঁথি লিখছেন এবং তাঁর লেখা পূঁথি লন্ডনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস এ তাঁরই কন্ঠে প্রচারিত হয়েছে কয়েক বছর পূর্বে। সাংবাদিকতায়ও তিনি অর্জন করেছেন ঈর্ষনীয় খ্যাতি। প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইনসহ সকল ধারার মিডিয়ায় কাজ করেছেন সমানতালে দক্ষতার সাথে।
বিশ্বনাথে নির্মাণাধীন ওয়ান পাউন্ড হসপিটাল এর বিশ্বনাথ উপজেলা চিফ কো-অর্ডিনেটর, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কার্যকরী সদস্য হিসেবে পালন করেছেন দায়িত্ব।
সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল এর জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে কবির তিন তিনটি একক গ্রন্থ। লেখকের নিজের লেখা ও সুর করা একক সঙ্গীতের অ্যালবামও বের হয়েছে এ পর্যন্ত বারোটি।
অবশ্য দক্ষ হাতে সম্পাদনা করেছেন অনেকগুলি স্মারক ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকা। সঙ্গীত লিখেছেন হাজারেরও অধিক। এসবের প্রকাশনা উৎসব হয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও লন্ডন, সৌদি, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ও পূঁথিগ্রন্থ এবং অ্যালবাম।
আমাদের পূঁথি সাহিত্যের জগতেও বিচরণ করেছেন লেখক। লেখেছেন সমসাময়িক ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর মজাদার পূঁথি। তাঁর সিলেটি ভাষায় লেখা গান পূঁথি ও কলাম আমাদের সিলেটিদের মনের খুরাক জুগায়। সিলেটি ভাষায় লিখে সিলেটি হিসেবে সিলেটিদের কাছে গৌরবের আসনে আসীন হয়েছেন কবি নাজমুল। লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে লন্ডনের জনপ্রিয় কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতা ও সুনামের সাথে।
কবি নাজমুল শুধু লেখালেখিতেই নয়। সমাজসেবায়ও রেখেছেন অসামান্য অবদান। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাঁর নিপূণ হাতের ছোঁয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ভরাট, শ্রেণীকক্ষ ও গেইট নির্মাণ, মাইক, ইউনিফর্ম ও টিপিন বক্স প্রদান, কমপিউটার ও সেলাই মেশিন প্রদান থেকে শুরু করে প্রদান করেছেন শিক্ষা সামগ্রীও।
কবি নাজমুল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। লেখালেখির পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতি, সামাজিক ও সেবামুলক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকলে জনপ্রতিনিধি না হয়েও স্বীয় যোগ্যতাবলে সমাজের সেবা করা যায়, সমাজের সর্বক্ষেত্রে রাখা যায় অবদান, যার জ্বলন্ত প্রমাণ কবি নাজমুল। অসহায়দের চিকিৎসা সহায়তা, বিবাহ সহায়তা, গৃহ নির্মাণ, হুইল চেয়ার বিতরণ, কমপিউটার ও সেলাই মেশিন বিতরণ, টিউভওয়েল স্থাপন, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও ফ্রি ঔষধপত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন, ফুডপ্যাক বিতরণ, বন্যা ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তাসহ আরও অনেক ভালো কাজ করেছেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে যে কাজ করেছেন তা আরও প্রশংসনীয়। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করেছেন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
সাংবাদিকতায়ও তিনি অর্জন করেছেন ঈর্ষনীয় খ্যাতি। প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইনসহ সকল ধারার মিডিয়ায় কাজ করেছেন সমানতালে দক্ষতার সাথে।
অলংকারীর এ কৃতিসন্তান লেখালেখির পাশাপাশি সমাজসেবায়ও রেখেছেন অসামান্য অবদান। এলাকার উন্নয়নে তাঁর এসব কার্যক্রম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
আজ বাদ আছর অলংকারী-পৌদনা পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তার জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী, সদালাপী, পরহেজগার, প্রিয় নাজমুল ইসলাম মকবুলের মৃত্যুতে আমরা আদর্শবার্তা পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আদর্শবার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেলওয়ার হোসেন সেলিম তাঁর সহকর্মী বন্ধু লেখক, কবি, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী নাজমুল ইসলাম মকবুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আল্লাহ পাক নাজমুল ইসলাম মকবুল সাহেবের ভুলত্রুটি মাফ করে যেন জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করেন। আমিন।

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code