প্রচ্ছদ

নরসিংদীর পলাশে থমকে গেছে মৃৎশিল্পীদের জীবনমান

  |  ০৮:৫৪, এপ্রিল ০৯, ২০২১
www.adarshabarta.com

Manual7 Ad Code

বোরহান মেহেদী, নরসিংদী প্রতিনিধি :

নববর্ষকে ঘিরে এসময় নির্ঘুম ব্যস্ত সময় পার করতেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার অধিকাংশ মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু গত বছর ও চলতি বছরে করোনার প্রভাবে দর্শনার্থী স্থানে বসে বর্ষবরণ মেলা। সেই মেলায় চাহিদা থাকে নানা রকমের খেলনা এবং মাটির তৈজসপত্রের।

Manual8 Ad Code

আর মেলাকে দৃষ্টিনন্দিত করতে মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারকার্যে মাটি দিয়ে তৈরি করেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি (পাতিল), কড়াই, ব্যাংক, বাসন, থালা, বাটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়িভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন মাটির তৈজসপত্র।

Manual8 Ad Code

সরকারী নিষেধাক্কার ফলে তবে চলতি বছরসহ গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে এ ব্যবসায়। উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার কুমারটেক, পালপাড়া, টেঙ্গরপাড়া ও জিনারদী ইউনিয়নের বরাব এলাকায় মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। তারা বিভিন্ন উৎসবে মাটির তৈরির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বাংলা নববর্ষ বরণে জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলায় অধিকাংশ মাটির সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন এসব মৃৎশিল্পীরা। তাই এখানে পুরষ মৃৎশিল্পীর পাশাপাশি নারী মৃৎশিল্পীরাও সমতালে কাজ করেন। তার মধ্যে উপজেলার কুমারটেক ও পালপাড়া গ্রামে বসবাসরত প্রায় ২০টি পাল পরিবার। তাদের অধিকাংশ নারী-পুরষই শ্রমের বিনিময়ে তাদের উন্নয়নের ভিত শক্ত করেন।

বৈশাখী মেলা উপলক্ষে নারী মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারকার্যে মাটি দিয়ে তৈরি করতেন শিশুদের নানান খেলনা। বর্তমান সময়ে করোনার প্রভাবে ওইসব খেলনা তৈরির কাজ যেনো থমকে গেছে। করোনা ভাইরাস তাদের একেবারে পথে নামিয়ে দিয়েছে। এ ব্যবসার ওপর নির্ভর করেই চলতো তাদের সংসার।

সরেজমিন ঘুরে উপজেলার কুমারটেক,পালপাড়া ও বরাব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল, নারায়ন চন্দ্র পাল, বাসন্তী পাল, জয়কৃঞ্জ পাল, নিপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ওপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ফনিন্দ্র চন্দ্র পাল, দেবিন্দ্র চন্দ্র পাল ও ওমেল্য চন্দ্র পালেরা তাদের খেলনা তৈরি বন্ধ করে অপলক দৃষ্টিতে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে বসে আছেন।

এসময় দীর্ঘক্ষণ মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে আলাপ কালে তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, পারিবারিকভাবেই আমরা পৈতৃক পেশা এই মাটির কাজ ধরে রেখেছি। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকেন।

মৃৎশিল্পী বাসন্তী পাল বলেন, আমাদের কাজে ছেলে-মেয়েরা সবাই সহযোগিতা করে। এ পেশাতেই সংসারে সবার মুখে ঠিকমত দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জুটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চলতো। এখন লকডাউন শুর হওয়ার কারণে মেলাও বসবে না। তাই পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়ে গেলাম। হয়তো এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।

Manual1 Ad Code

সংসারের খরচ যোগাতে ধৈর্য্যশীল দিপালী চন্দ্র পাল মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা শুর করেন প্রায় ২০ বছর আগে। সংসারের সচ্ছলতা ঠিকই এসেছিলো কিন্ত করোনায় সব শেষ করে দিচ্ছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

আরেক মৃৎশিল্পী মনি রানী পাল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আসছে বৈশাখী মেলা সামনে রেখে এক একটি পরিবার প্রায় ২ হাজার খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করা শুর করে ছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই রঙের কাজও শেষ করা হবে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররাও যোগাযোগ শুরকরে ছিলো। লকডাউনের ফলে সব থেমে গেছে। কুমারটেক পালপাড়া গ্রামের ২০টি পরিবারের প্রায় ৪০ জন নারীরা তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য এ মৃৎশিল্পের কাজই করে আসছিলেন।

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের কদর বাড়ে বৈশাল আসলেই। শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে চিরচেনা ঐতিহ্যময় প্রাচীন এই মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ গ্রাম গুলো। পহেলা বৈশাখের আগে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও মৃৎশিল্প তার হৃতগৌরব ফিরে পায় এবং মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানান সামগ্রী তৈরিতে।

Manual2 Ad Code

কিন্ত করোনার প্রভাবে তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। আরেক মৃৎশিল্পী নিপেন্দ্র পাল হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলেন, কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তেও পারি না। বৈশাখের বিক্রি দিয়েই আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় ৬ মাস চলতে পারি। কিন্তু গত বছর ও এবার চলতি বছরে আমাদের স্বপ্ন শেষ করে দিলো করোনাভাইরাস। আমাদের এখন জীবিকা নির্বাহ করার পথটি বন্ধ হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, করোনা কালীন এই সময় পরিবার নিয়ে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, আমাদের জীবন বাঁচাতে সরকার থেকে যেনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দেয়া হউক।

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code