প্রচ্ছদ

ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে যে পরিবর্তন আসছে

  |  ০৮:০৯, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual8 Ad Code

আদর্শবার্তা ডেস্ক:

বহু জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনা-বিশ্লেষণের পর অবশেষে জট কেটেছে ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তির। বড়দিন উৎসবের মধ্যেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অংশ হিসেবে এতদিন যেসব বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা পেত যুক্তরাজ্য, ব্রেক্সিট পরবর্তী চুক্তিতে তার কতটা বজায় থাকল, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

Manual6 Ad Code

চুক্তিতে কোন কোন বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, কে কতটা ছাড় দিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। যুক্তরাজ্যের প্রধান বাণিজ্যিক সমঝোতাকারী লর্ড ফ্রস্ট জানিয়েছেন, চুক্তির ১ হাজার ৫০০ পৃষ্ঠার নথি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তির বেশ কয়েকটি মূল বিষয় প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। দেখে নেওয়া যাক কী রয়েছে এই চুক্তিতে-

শুল্কমুক্ত বাণিজ্য
যুক্তরাজ্য এবং ইইউ’র মধ্যে বাণিজ্যে নতুন করে কোনও শুল্ক বা কোটা আরোপ হচ্ছে না, সেটা নিশ্চিত করেছে দুই পক্ষই। তারপরও ব্রিটিশ রপ্তানিকারকরা বেশ কিছু নতুন নীতির সম্মুখীন হবেন, যার ফলে ইউরোপে ব্যবসা করা তাদের জন্য আগের চেয়ে কিছুটা কঠিনই হবে।

Manual7 Ad Code

পণ্যের উৎস নীতি
নতুন নিয়ম অনুসারে, ইইউ’তে রপ্তানির আগে যুক্তরাজ্যকে তাদের পণ্যের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। কোনও পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ যদি ইইউ বা যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক বসানো হতে পারে।

পরীক্ষা ও ছাড়পত্র
দুইপক্ষের মধ্যে সাধারণ স্বীকৃতির চুক্তি না থাকায় ব্রিটিশ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এখন আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে পণ্য বিক্রির ছাড়পত্র দিতে পারবে না। এটা তাদের বাণিজ্যের জন্য একটি বড় বাধা হতে চলেছে।

আর্থিক সেবা
ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়। এতে তথাকথিত সমতা প্রতিষ্ঠার কোনও সিদ্ধান্ত নেই। চুক্তিতে শুধু আর্থিক পরিষেবার মানদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে, যার অর্থ- সেখানে বাজারে প্রবেশাধিকার সম্পর্কিত কোনও প্রতিশ্রুতি নেই।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড
চুক্তিতে উভয় পক্ষই তাদের পরিবেশগত প্রতিশ্রুতি, সামাজিক, শ্রম ও শুল্কের বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছে। যুক্তরাজ্য বলেছে, চুক্তিতে এমন কোনও গোপনীয় বিষয় নেই যার কারণে ভবিষ্যতে নিয়মকানুন কঠোর করতে হতে পারে।

তবে দুই পক্ষই নিয়মের খুব বেশি পরিবর্তন করলে সালিশের ভিত্তিতে একে অপরের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারবে। তাছাড়া, কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে ব্রিটিশ সরকারের ভর্তুকি দেওয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যের আদালতে নালিশ জানাতে পারবে।

যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, দুই পক্ষকেই ভর্তুকির ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকতে হবে। সরকারি ভতুর্কি তদারকিতে তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন।

ভবিষ্যৎ বিরোধ নিষ্পত্তি
চুক্তির অধীনে ন্যায়সঙ্গত হলে যেকোনও পক্ষই অন্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারবে। যদি কোনও পক্ষ মনে করে, এধরনের শুল্ক আরোপ করে তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, তবে ইস্যুটি তারা সালিশ প্যানেলে উপস্থাপন করতে পারবে। তবে সেই সালিশ প্যানেল হতে হবে পুরোপুরি স্বাধীন এবং সেটি ইউরোপীয় বিচারিক আদালত হতে পারবে না।

চুক্তির কোনও বিশেষ অংশে ঝামেলা দেখা দিলে সেটি পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে। আর চুক্তিতে কাজ না হলে সেটি পুরোপুরি বাতিলেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মৎস্যশিকার নীতি
এটি ইইউ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি। চুক্তি অনুসারে, যুক্তরাজ্যের নৌযানগুলো আগামী পাঁচ বছর ব্রিটিশ জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিকার করা মাছের ২৫ শতাংশ নেবে। এর মূল্য হতে পারে ১৪৬ মিলিয়ন পাউন্ড। আলোচনার শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের দাবি ছিল ৮০ শতাংশ নেওয়ার। অর্থাৎ, চুক্তির জন্য তারা এই ক্ষেত্রটিতে বড় ছাড় দিয়েছে।

Manual3 Ad Code

বিমান ও ট্রাক চলাচল
ব্রিটিশদের উড়োযান সম্পর্কিত নকশা ও পণ্যের স্বয়ংক্রিয় অনুমোদন একপ্রকারে বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। চুক্তির নথি অনুসারে, যুক্তরাজ্যের ছাড়পত্র ব্যবস্থাপনার ওপর ইইউ’র আত্মবিশ্বাস ফিরে না আস পর্যন্ত এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই।

তবে, ট্রাক বা লরি চলাচলের ক্ষেত্রে দুই পক্ষই কার্যকর ভিসা ও সীমান্ত ব্যবস্থা অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তথ্যপ্রবাহ
ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে একটি সাময়িক সমাধানের কথা বলা হয়েছে। ইইউ যতদিন পর্যন্ত তথ্য পর্যাপ্ততার সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, ততদিন দুই পক্ষের মধ্যে তথ্যপ্রবাহ অবিচ্ছিন্ন থাকবে।

তবে এই ব্যবস্থার মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ছয়মাস। ইইউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তথ্যপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, যা ২০২১ সালের শুরুতেও হতে পারে।

জ্বালানি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি বাজারে আর প্রবেশাধিকার থাকছে না যুক্তরাজ্যের। এটা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে যুক্তরাজ্য ও ইইউ’র মধ্যে থাকা বিশাল বৈদ্যুতিক লাইনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে নতুন ব্যবস্থা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Manual6 Ad Code

যুক্তরাজ্য বিদ্যুৎ আমদানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাদের ৮ শতাংশ বিদ্যুতই আসে অন্য দেশ থেকে। সেক্ষেত্রে সংযোগকারী বৈদ্যুতিক লাইনের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্রিটিশদের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখারও গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, দুই পক্ষের কেউ যদি ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ভঙ্গ করে, তাহলে বাণিজ্য চুক্তিটি বাতিল হতে পারে।

পেশাগত সেবা
ব্রেক্সিটের পর ব্রিটিশদের জন্য পেশাগত দক্ষতার স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতির সুবিধাটি আর রাখছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফলে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক, নার্স, ডেন্টিস্ট, ফার্মাসিস্ট, পশু চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা স্থপতিরা ইইউভুক্ত যে দেশেই কাজ করতে চান, সেখানকার স্বীকৃতি দরকার হবে।

তবে দক্ষতার স্বীকৃতির জন্য চুক্তিতে একটি ফ্রেমওয়ার্কের কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

ব্যবসায়িক ভ্রমণ
ব্যবসায়িক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইইউ-জাপানের মধ্যে যেধরনের চুক্তি রয়েছে, যুক্তরাজ্যও অনেকটা সেধরনের সুবিধা পাবে। সেই অনুসারে, যেকোনও ১৮০ দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীরা ইউরোপীয় দেশগুলোতে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবেন।

আইন প্রয়োগ
সন্ত্রাস বা যেকোনও গুরুতর অপরাধ তদন্তে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ-যুক্তরাজ্য। এক্ষেত্রে ডিএনএ, আঙুলের ছাপ বা বিমানযাত্রীদের তথ্য আদান-প্রদান করা হতে পারে।

চুক্তি অনুসারে, ইইউ এবং ব্রিটিশ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একে অপরকে সহযোগিতা করবে। তবে ইউরোপোল ও ইউরোজাস্টের সদস্য থাকবে না যুক্তরাজ্য।

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code