প্রচ্ছদ

ট্রাম্পকে নিয়ে যে দশটি মারাত্মক দাবি করলেন বোল্টন

  |  ১১:০৩, জুন ২১, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, আমেরিকা থেকে :

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এক মেয়াদে অনেক কিছু বলেছেন বা করেছেন যা ছেপে বেরলে ইতোমধ্যেই পাঠকদের মুখরোচক খোরাক জোগাতে পারবে।

কিন্তু মি. ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন তার সাম্প্রতিক বইয়ে প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে যেসব দাবি করেছেন, তা অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মি. বোল্টন তার সাবেক শীর্ষ পদের সুবাদে মি. ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ থাকার কারণে এবং তিনি যেসব দাবি করেছেন তার বিষয়বস্তুর নিরিখে।

মি. বোল্টনের বই-এর শিরোনাম – দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড (যে ঘরে এসব ঘটেছিল)। বইটিতে তিনি প্রেসিডেন্টকে তুলে ধরেছেন একজন অজ্ঞ ব্যক্তি হিসাবে, যার সাধারণ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে এবং যিনি বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই নেন নির্বাচনে আবার জিতে আসতে হবে এই তাড়না থেকে।

মি. ট্রাম্পের সমালোচকরা অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন ইমপিচমেন্ট শুনানির সময় মি. বোল্টন কেন এসব নিয়ে মুখ খোলেনি, বিশেষ করে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই সেসময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তার সাবেক এই শীর্ষ উপদেষ্টাকে “অদক্ষ” এবং একজন “বোরিং বোকা বুড়ো” বলে মন্তব্য করেছিলেন।

হোয়াইট হাউস তার এই বইয়ের প্রকাশ বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে, কিন্তু আমেরিকার সংবাদমাধ্যম এই বইয়ের অগ্রিম কপি হাতে পেয়ে গেছে এবং অনেক কাগজ এই বইয়ের অংশবিশেষ ছাপতেও শুরু করেছে। সেখান থেকেই তুলে ধরা হল মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মি. বোল্টনের আনা সবচেয়ে নজর-কাড়া কয়েকটি অভিযোগ।

১. নির্বাচনে আবার জয়লাভের জন্য চীনের সাহায্য চেয়েছিলেন ট্রাম্প

Manual3 Ad Code

এই বইয়ে মি. বোল্টন গত বছর জাপানে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে এক বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট “হঠাৎ কায়দা করে আলোচনা ঘুরিয়ে ফেললেন আসন্ন [নভেম্বর ২০২০] আমেরিকান নির্বাচনের দিকে, চীনের বিরাট অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং শি-কে অনুরোধ করলেন তার জেতা তিনি যেন নিশ্চিত করেন,” লিখেছেন মি. বোল্টন।

“কৃষকরা কত গুরুত্বপূর্ণ সেটার ওপর তিনি জোর দেন এবং নির্বাচনে সুবিধা পাবার জন্য চীনে সয়াবিন ও গমের বিক্রি বাড়িয়ে দেন।”

Manual6 Ad Code

আমেরিকায় মিডওয়েস্টের রাজ্যগুলোতে কৃষি অন্যতম প্রধান একটা অর্থনীতি। এই রাজ্যগুলোই ২০১৬- র নির্বাচনে মি. ট্রাম্পকে জিততে সাহায্য করেছিল।

২. …এবং তিনি বলেছিলেন চীনের বন্দী শিবির তৈরি ‘সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল’

চীনে উইঘোর মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় দশ লাখ মানুষকে শিনজিয়াং এলাকায় বন্দী শিবির তৈরি করে সেখানে আটক রেখে তাদের প্রতি চীনা সরকার যে আচরণ করে, তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল।

চীনা কর্তৃপক্ষের গণহারে মানুষকে আটক রাখার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেন তখন চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।।

কিন্তু মি. বোল্টন তার বইয়ে লিখেছেন, মি. শি যখন ওই শিবির গঠনের পেছনে তার যুক্তি তুলে ধরেন, তখন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেন তিনি চীনের পদক্ষেপ সমর্থন করেন। মি. বোল্টন লিখেছেন, “আমাদের যে দোভাষী, তিনি বলেন, মি. ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, মি. শি-র উচিত শিবিরগুলো তৈরির কাজে এগিয়ে যাওয়া। মি. ট্রাম্প মনে করেন এটা একেবারে সঠিক কাজ।”

৩. ট্রাম্প ‘একনায়কদের ব্যক্তিগতভাবে আনুকূল্য’ দিতে আগ্রহ দেখান

চীনা নেতাই একমাত্র একনায়ক নন, যার প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থন দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

মি. বোল্টন লিখছেন, মি. ট্রাম্প যেসব স্বৈরশাসকদের পছন্দ করেন তাদের ব্যাপারে ফৌজদারি তদন্তে নাক গলাতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যাতে ঐসব তদন্তে শাসকরা তার ব্যক্তিগত আনুকূল্য পান।

এই বইয়ে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লংঘনের অভিযোগে ২০১৮ সালে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমেরিকায় যখন তদন্ত চালানো হয়, তখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ানকে তিনি সাহায্য করার প্রস্তাব দেন।

বলা হচ্ছে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেন তিনি নিজে “সব কিছু দেখবেন” এবং ওই তদন্ত কাজে যারা কৌঁসুলি ছিলেন তারা “ওবামার লোকজন”।

৪. অভিশংসন প্রয়াস নিয়ে ডেমোক্রাটদের আরও এগুনো উচিত ছিল

ডেমোক্রাটরা মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছিল যে, তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য ইউক্রেনের সরকারের ওপর চাপ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন তারা এটা না করলে আমেরিকা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে- ডেমোক্রাটদের সেই অভিযোগ এই বইয়ে সমর্থন করেছেন মি. বোল্টন। ওই অভিযোগের সূত্র ধরেই মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

তবে তার বইয়ে মি.বোল্টন ডেমোক্রাটদের সমালোচনা করেছেন এই বলে যে শুধু ইউক্রেনের বিষয়টি সামনে এনে তারা “ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার অপব্যবহার” করেছে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, তারা যদি তদন্তের পরিসর আরও ব্যাপক করত, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে “বিভিন্ন মাত্রার অপরাধ ও অন্যায়”এর জন্য আইনত ক্ষমতা থেকে অপসারণের পেছনে তারা আরো অনেক বেশি আমেরিকানের সমর্থন পেতেন।

তবে মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন যেসব অভিযোগ মি. বোল্টন করেছেন, সেগুলো অভিশংসনের আওতাভুক্ত অপরাধ কিনা তিনি তা বলেননি।

গত বছরের শেষ দিকে যখন হাউস অফ রেপ্রেসেনটেটিভে এই অভিশংসনের শুনানি চলছিল, তখন মি. বোল্টন সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন। পরে সেনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা তাকে শুনানি দিতে বাধা দেয়।

৫. ট্রাম্প প্রস্তাব দেন তিনি দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে চান

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও শি জিনপিং-এর আলাপ নিয়ে আরও কিছু কথা। মি. বোল্টন বলছেন মি. ট্রাম্প চীনা নেতাকে বলেছিলেন যে, মি. ট্রাম্প যাতে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে আমেরিকানরা খুবই আগ্রহী।

“বিষয়টা সামনে এসেছিল, যখন মি. শি বলেন তিনি ট্রাম্পের সাথে আরও ছয় বছর একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তখন মি. ট্রাম্প জবাব দেন, জনগণ বলছে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যে বিধি সংবিধানে আছে তা তার জন্য বাতিল করে দিতে,” একথা মি. বোল্টন লিখেছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি নিবন্ধে।

“মি. শি বলেছিলেন আমেরিকায় খুব বেশি নির্বাচন হয়, কারণ তিনি মি. ট্রাম্পের জায়গায় আর কাউকে দেখতে চান না। মি. ট্রাম্প মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।”

৬. ট্রাম্প জানতেন না যে যুক্তরাজ্য পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র…

আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পর ১৯৫২ সালে ব্রিটেন ছিল তৃতীয় দেশ যারা আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রধর স্বল্প কয়েকটি দেশের যে গোষ্ঠী রয়েছে, ব্রিটেন যে তার অংশ মি. ট্রাম্প সেটা জানতেন না। এটা তার কাছে নতুন খবর।

Manual2 Ad Code

বইয়ের একটি অংশে ২০১৮ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের সাথে এক বৈঠকের কথা বলা হয়েছে, যেখানে একজন কর্মকর্তা ব্রিটেনকে পরমাণু শক্তিধর দেশ বলে উল্লেখ করেন।

বলা হচ্ছে মি. ট্রাম্প উত্তর দেন: “ওহ- আপনার দেশে পরমাণু অস্ত্র আছে বুঝি?”

মি. বোল্টন লিখছেন, “তিনি মজা করে একথা বলেননি।”

৭. …আরও জানতেন না ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অংশ কিনা

মি. বোল্টন বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জ্ঞানের ক্ষেত্রে আরও দুর্বলতা রয়েছে।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এক বৈঠকের আগে, মি. ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে যে, ফিনল্যান্ড “রাশিয়ার একধরনের উপরাষ্ট্র” কিনা।

মি. বোল্টন লিখছেন, বৈঠকে গোয়েন্দা বিষয়ক ব্রিফিং “খুব সহায়ক” ছিল না, কারণ বৈঠকের বেশির ভাগ সময় ধরে, যারা তথ্য দেবেন তাদের থেকে বেশি কথা বলছিলেন মি. ট্রাম্প নিজে এবং বেশিরভাগ কথাই ছিল বৈঠকের বিষয়বস্তুর বাইরে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে।

৮. তিনি নেটো থেকে আসলে বেরিয়েই আসছিলেন

Manual3 Ad Code

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেটো সামরিক জোটের সমালোচক ছিলেন বরাবর। তিনি অন্য সদস্য দেশগুলোকে তাদের তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছিলেন।

এরপরেও আমেরিকা নেটোর সদস্য ছিল, কিন্তু মি. বোল্টন লিখছেন যে ২০১৮য় নেটোর এক শীর্ষ বৈঠকে মি. ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেন যে আমেরিকা নেটো থেকে বেরিয়ে যাবে।

“আমরা বেরিয়ে যাব এবং যারা অর্থ দেয় না তাদের পক্ষে আমরা থাকব না,” প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন বলে লিখেছেন মি. বোল্টন।

৯. ভেনেজুয়েলা আক্রমণ ‘দারুণ’ ব্যাপার হবে

ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশ নীতি নিয়ে অন্যতম বড় একটা মাথাব্যথার বিষয় ছিল ভেনেজুয়েলা। আর আমেরিকা দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কট্টর বিরোধী।

এই দেশটি প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলা আক্রমণ করলে “দারুণ” হবে, আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি “আসলে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই অংশ”।

মি. বোল্টন লিখছেন যে, ২০১৯এর মে মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোন করে “দারুণ একটা সোভিয়েত স্টাইল প্রচারণার চাল চালেন।” তিনি ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইডোকে ২০১৬ সালে ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের সাথে তুলনা করেন। তাতেই “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মূলত ধরে নেন” আক্রমণটা যুক্তিযুক্ত।

মি. পুতিনের আসল উদ্দেশ্য ছিল তার মিত্র প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষ সমর্থন করা- মি. বোল্টন লিখেছেন। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বামপন্থী মি. মাদুরোকে স্বৈরশাসক বলে চিহ্ণিত করেন এবং দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু মি. মাদুরো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন।

এবিসি নিউজ চ্যানেলে এই রোববার মি. বোল্টনের একটি পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হবার কথা রয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি মি.ট্রাম্প সম্পর্কে বলেছেন: “‘আমার ধারণা মি. পুতিন মনে করেন মি. ট্রাম্পকে বেহালার মত যে কোন সুরে বাজানো সম্ভব।”

১০. এমনকি মিত্ররা তাকে নিয়ে মস্করা করেন

মি. বোল্টনের বইয়ে বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে যেখানে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে মস্করা করার উল্লেখ রয়েছে।

তিনি একটা অকার্যকর হোয়াইট হাউসের বর্ণনা দিয়েছেন। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী বৈঠকগুলো আসলে “খাওয়াদাওয়ার পার্টি” হয়ে দাঁড়ায়।

যখন তিনি হোয়াইট হাউসে আসেন, সেসমকার স্টাফ প্রধান জন কেলি তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন, “এটা কাজ করার জন্য খুবই নিকৃষ্ট জায়গা, তুমি নিজেই টের পাবে।”

এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও, যিনি মি. ট্রাম্পের অনুগত বলেই ধরে নেয়া হয়, তিনিও প্রেসিডেন্টকে “ফুল অফ শিট” বা “মাথা ভর্তি গোবর” বলে একটি নোটে উল্লেখ করেছিলেন বলে এই বইয়ে দাবি করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code