প্রচ্ছদ

বিভিন্ন দেশে হাফ ভাড়া

  |  ১৩:৫৯, নভেম্বর ২৪, ২০২১
www.adarshabarta.com

ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন :
আমাদের দেশটাতে সবচেয়ে দরকার সু-শাসন। ৫০ বছর বয়সের একটি দেশে বহুদিক সংস্কারের প্রয়োজন। কেন জানি হয়নি।বহুলোক হতাশ! আমি কিন্তু আশাবাদী। রাষ্ট্রটাকে গরীব বলে বলে পেছানোর চেষ্টা করা হলেও আমি এর সাথে একমত নই-মানসিক ভাবে আমরা গরীব হয়ে আছি। অর্থ-বিবেচনায় আমরা অনেক রাষ্ট্র থেকে এগিয়ে।
স্পষ্ট মনে আছে বাড়বকুন্ডে পরাগ সিনেমা হলে আমরা ক্লাস মিস করে সিনেমা দেখতে যেতাম। মিরসরাই হতে গাড়িতে উঠলে নেয়া হত হাফভাড়া। এটি শুধু হাফ তা তো নয়-তখন নিজের কাছে একধরনের সন্মান সন্মান মনে হত। আমি ছাত্র এটিই আমার বোধহয় সন্মান। আজ সেই হাফ ভাড়ার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে-একদিকে শ্রমিক, আরেকদিকে কিছু ছাত্রনামধারী, প্রশাসন সবাই মিলে অধিকার আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও আমরা লক্ষ্য করছি।
নানা দেশে হাফ ভাড়ার গল্প শুনুন-
নিউজিল্যান্ডে বাস কিংবা গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না। একজন শিক্ষার্থী ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্রিতে যাতায়াত করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বৈধ কার্ড থাকা দরকার হয়। ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলের সুযোগ থাকলেও বাসে চড়েই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ছাত্রছাত্রীরা। এছাড়াও ব্রিটেন, রাশিয়া, ইরান ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের বহু দেশে কোথাও হাফ আবার কোথাও অর্ধেকের অর্ধেক ভাড়া দিলেই চলে। নিউজিল্যান্ডের সরকারি ওয়েবসাইট তথ্য মতে, দেশটিতে ওয়েলিংটন অ্যান্ড ক্রাইস্ট চার্চ সিটি মিশন ও দ্য পাবলিক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ ৪০টি সংগঠন শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহী ও গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহিত করে।
ব্রিটেনে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গণপরিবহণ ব্যবহার করতে পারেন সম্পূর্ণ ফ্রিতে। ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের শিক্ষার্থী গণপরিবহণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ছাড় পেয়ে থাকেন। ইসরাইলে একজন শিক্ষার্থীকে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণের হাফ ভাড়া দিতে হয়। আর নিজের প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও যাতায়াত করলে পরিবহণ ভাড়ায় ৩৩ শতাংশ ছাড় পেয়ে থাকেন।
ইরানে শিক্ষার্থীদের গণপরিবহণে হাফ ভাড়া দিতে হয়। অবশ্য কোনো শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী হলে গণপরিবহণে সম্পূর্ণ ফ্রিতে যাতায়াত করতে পারেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা উড়োজাহাজের ক্ষেত্রেও পান বিশেষ ছাড়। মালয়েশিয়ায় দেশি-বিদেশি সব শিক্ষার্থী ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত হাফ ভাড়ায় গণপরিবহণ ব্যবহার করতে পারেন। এ সুবিধা নেওয়ার জন্য দেশটির সব শিক্ষার্থীকেই মাইরেপিড ডিজিটাল কার্ড ব্যবহার করতে হয়। কার্ডটি প্রত্যেক ছয় মাস পরপর নবায়ন করতে হয়। মাইরেপিড.কম।
চীনে কার্ডধারী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ ফ্রিতে গণপরিবহণ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া অন্য যে কোনো জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ৫০ শতাংশ ছাড়ে গণপরিবহণে ভ্রমণ করতে পারেন। দেশটিতে কর্ম দিবসের তুলনায় ছুটির দিনে পরিবহণ ভাড়া অনেকটা বেশি। সৌদিতে শিক্ষার্থীরা ট্রেন ও বাসে যাতায়াত করতে পারেন হাফ ভাড়া দিয়ে। তাতওয়ার এডুকেশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিসেস কোম্পানি তাদের ৩০ হাজারের বেশি স্কুলবাসে প্রতিদিন ১০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা-নেওয়া করে। এর জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বছরে ২শ সৌদি রিয়েল দিতে হয় কোম্পানিকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের মেট্রো কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড দিয়ে শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ফ্রিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে পারেন।
রাশিয়ার শহরগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য মাসিক মেট্রো পাশ কার্ডের মূল্য ২ হাজার ৫৭০ রুবল। এই মাসিক মেট্রো পাশ শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৪০৫ রুবল। উপশহরগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট কার্ড দেখিয়ে ৫০ শতাংশ ফ্রিতে টিকিট কিনতে পারেন।
যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত বিশ্বের শহরে। গণপরিবহনে চড়ার জন্য ভাড়ায় রয়েছে বিশেষ ছাড়। খুব বেশি উন্নত নয়—এশিয়ার এমন দেশগুলোতে গণপরিবহনে অল্প ভাড়ায় সম্মান ও অধিকার নিয়ে যাতায়াত করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হাফ ভাড়ার রেওয়াজ বাংলাদেশেও আগে ছিল, তবে এর প্রয়োগ এখন বলতে গেলে নেই। হাফ ভাড়ার কথা বললে নিগ্রহের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
সরকারি বিআরটিসি বাসে শহর এলাকায় হাফ ভাড়া কখনো কখনো নিলেও বেসরকারি বাসে বড় করে লেখা থাকে ‘হাফ ভাড়া নেই।’ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের ৯ দাবির একটি হচ্ছে বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার সুযোগ। রাজধানীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলের প্রধান বাহন বাস। তবে অনুমোদন ছাড়া ‘সিটিং সার্ভিস’, ‘গেট লক’সহ বিভিন্ন সেবার কথা বলে একদিকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, নেই হাফ ভাড়া দেওয়ারও সুযোগ। কয়েক বছর ধরেই ভাড়া-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। অনেক আগেই উধাও হয়ে গেছে ছাত্রদের জন্য চালু থাকা ‘অর্ধেক ভাড়া’ বা ‘হাফ ভাড়া’ রাখার নিয়ম। শিক্ষার্থীরা বলছে, বেশির ভাগ বাসে পরিচয়পত্র দেখালেও অর্ধেক ভাড়া না নিয়ে পুরো ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।
আমি মনেকরি এর একটি নীতিমালা জরুরী। একজন শিক্ষার্থীর জন্য সন্মান-সে উৎসাহীত হবে। মনে করবে আমার পড়ালেখার কারণেই এটি হচ্ছে। নিজের গতি বাড়াবে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরী হবে। আশাকরি বিষয়টি সহসা সুরাহা করে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি সবাই সন্মান দেখাবেন। বিষয়টির এখানেই সমাধান জরুরী।