প্রচ্ছদ

‘আল্লাহর কাছে চিঠি দিয়েছি তিঁনি বাবাকে ফিরিয়ে দেবেন’ সাড়ে চার বছরের শিশু পুত্র ইনাম

  |  ১৬:১৩, জুন ১৮, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual4 Ad Code

হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিঊজ :

Manual1 Ad Code

শিশু পুত্র ইনামের যখন সাড়ে তিন বছর বয়স তখন সবে মাত্র আপু, বাবা, মা তাদের কে ডাকতে পারে, ঠিক সেই সময়ে ২০১৯ সালের ১৯ ই জুন মিরপুর ১নং মাজার রোডের কাঠব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন বাতেন (৬০) নিখোঁজ হয়ে গেলেন। ছোট্ট একটি পরিবারে বাতেনের ছিল স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতি, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ইনশা ইসলাম, সাড়ে তিন বছরের শিশু পুএ ইনাম। বাতেনের একার আয়েই চলত গোটা পরিবার। ঢাকার লালকুটি, মাজার রোডে ভাড়া বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। বাতেন ১৯৬০ সালের ৬ ই মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিত উপজেলার কুকড়া রায় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত ইলিয়াস মিয়া এবং মাতা মৃত ওয়াহেদা বেগম। ১৯৯৪ সালের ২৬ এ আগস্ট একই গ্রামের নাসরিন জাহান স্মৃতি কে বিয়ে করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তারপর থেকেই নিজের ছোট ব্যবসা ও পরিবার নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল বাতেন মিয়ার।

Manual6 Ad Code

ঢাকায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। সবার সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তারপরও কেন এই ৬০ বছর বয়সী বাতেন মিয়া নিখোঁজ হয়ে গেলেন?

এ বিষয়ে তার স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামীর সাথে ঢাকায় কারো সাথে কোনো শত্রুতা ছিল না, তবে ৩০-৩৫ বছর আগে এলাকার একটি হত্যাকাণ্ডে আমার স্বামীর নাম জড়িয়ে দেয়া হয়। সে মামলায় আদালত থেকে তিনি বেকসুর খালাস পেলেও পারিবারিক শত্রুতা থেকেই যায়। গত ৫ বছর আগে তিনি একবার এলাকায় বেড়াতে গেলে, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর হামলা করা হয়। সে যাত্রায় তিনি কোনো প্রকারে বেঁচে গেলেও, এবার কোথা থেকে কি হল কিছু বুঝতে পারলাম না।

Manual4 Ad Code

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর শাহ আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৮৩০) করি। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌবাহিনী প্রধান ও র‍্যাব মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করি। আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। আমি বর্তমানে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রাইভেট টিউশনি করিয়ে কোনো ভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। করোনাকালীন এই মহাসংকটে আয়ের উৎস ও বন্ধ হয়ে গেসে।সংসারের ব্যয়ভার বহন করাও খুব কঠিন হয়ে গেছে। আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না, তাই কোনো রাজনৈতিক দল ও আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার কয়েক মাস পর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমার দুই সন্তান সহ আমি দাঁড়িয়েছিলাম। অনেককে বললেও কেউ আসেনি। তবে এর মধ্যে ও শুধুমাত্র বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা ও মায়ের ডাকের প্রতিনিধি আফরোজা ইসলাম আঁখি আপা এসেছিলেন। আমরা গরীব অসহায় সেইজন্য আমাদের নিউজ বড় কোনো চ্যানেল, পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এবারের বাবা দিবসে আমার সাড়ে চার বছরের শিশু পুত্র ইনাম আল্লাহর কাছে চিঠি দিয়েছে। এখন আল্লাহই আমাদের একমাত্র ভরসা, তিনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেবেন বলে বিশ্বাসে করি। এদিকে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ইনশা ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই আমি ক্লাসে প্রথম হই, এই সংবাদে বাবা সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। সেই প্রিয় বাবা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। আমি বুঝতে শিখেই দেখেছি,৭ জানুয়ারি আসলেই বাবা আমার জন্য নতুন জামা ও কেক নিয়ে আসতেন। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর আর কেউ কেক নিয়ে আসে না,ঈদ আসলেও নতুন জামা পড়তে পারি না। মা আমাদের জন্য খুব কষ্ট করেন। দেশবাসী আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান।

Manual7 Ad Code

ইসমাঈল হোসেন বাতেনের নিখোঁজ এর এক বছর পূর্ণ ও সন্ধানের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, মহাসচিব এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সেকুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আল-আমীন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই অসহায় পরিবারকে তাদের প্রিয়জনকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার, এই বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code