প্রচ্ছদ

হাওরের ৯০% ধান কাটা শেষ : কৃষিমন্ত্রী

  |  ১১:৩০, মে ০৫, ২০২০
www.adarshabarta.com

আদর্শ বার্তা ডেস্ক :

মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও হাওরের ৯০ ভাগ ও সারা দেশের ২৫ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। এ সপ্তাহের মধ্যে হাওরের অবশিষ্ট ১০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান কর্তন অগ্রগতি এবং করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনলাইন ব্রিফিংয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ সংযুক্ত ছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী জানান, হাওরভুক্ত সাত জেলায় (কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শুধু হাওরের এ বছর বোরো আবাদের পরিমাণ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত মোট কর্তন হয়েছে ৪ লাখ ৯৬৪ হেক্টর, যা হাওরভুক্ত মোট আবাদের শতকরা ৯০.০২ ভাগ।

তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলে (হাওর ও নন হাওর মিলে) মোট বোরো আবাদের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট কর্তনের পরিমাণ ৬ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ হেক্টর, যা হাওরের জেলাসমূহের মোট আবাদের শতকরা ৬৫.৩৪ ভাগ। অন্যদিকে, সারা দেশে আবাদের পরিমাণ ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর এর মধ্যে কর্তন হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১১ হেক্টর, যা মোট আবাদের শতকরা ২৫ ভাগ।

বর্তমানে হাওরভুক্ত জেলাসমূহে ধান কর্তনের জন্য প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ জন কৃষি শ্রমিক নিয়োজিত আছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সফলভাবে নিরাপদে হাওর অঞ্চলের বোরা ধান দ্রুত কর্তনের জন্য উত্তরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় চারটি কৃষি অঞ্চল হতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এবং সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ৩৮ হাজার জন কৃষি শ্রমিককে হাওরে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন সম্ভব হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। এ সময় সবাইকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

ধান কাটার যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে জরুরি সহায়তা বাবদ প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে ৮০৩টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৫১৯টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০৮টি রিপারসহ সর্বমোট ১৩২২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯০৮টি রিপার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩৭০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৫৫টি রিপার ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে।

শুধু সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা নয়, কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ লাখ মেট্টিক টন ধান, ১.৫ লাখ টন আতপ চাল, ১০ লাখ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্টিক টন গমসহ ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্টিক টন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরও জানান, খাদ্য ক্রয় কার্যক্রমকে সূচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের ধান বিক্রয়ে যাতে সুবিধা হয় এ জন্য ইউনিয়নে পর্যায়ে ২ হাজার ২৩২টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

বর্তমানের কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা ও বিভিন্ন সময়ের প্রদানকৃত নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার নিমিত্ত যাতে কোনো জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মাঠ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং পারিবারিক সবজি বাগান নামে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি আউশ মৌসুমে আউশ আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে মোট উৎপাদন হবে ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ মেট্টিক টন চাল। ইতোমধ্যে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ফসলের (আঊশ, পাট, তিল ও গ্রীষ্মকালীন সবজি) জন্য ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ জন কৃষকের মাঝে মাঝে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনা অর্থের সহায়তায় ৪১০.৮৬ মেট্টিক টন আউশ ধানের বীজ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

এ সময় কৃষকদের বাঁচাতে ৪% সুদে শস্য ও ফসলখাতসহ কৃষিখাতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান কৃষিমন্ত্রী।