প্রচ্ছদ

জননেতা বজলুর রশীদ এর ২২তম মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

  |  ১১:৩৩, মার্চ ২৬, ২০২২
www.adarshabarta.com
তাজ উদ্দিন আহমদ:
আজ ২৬ শে মার্চ ২০২২ বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কৃষি ও সমবায় সম্পাদক জননেতা জনাব মোঃ বজলুর রশীদ এর ২২ তম মৃত্যু বার্ষিকী। জনাব বজলুর রশীদ ১৯৫০ সালে সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলাধীন ভোগশাইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল সাইদুর রহমান( মরহুম) এবং ‘মাতার নাম ছিল মোছাঃ জাহানারা বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ২০০০ সালের আজকের এইদিনে তিনি বিশ্বনাথে তাঁর নিজ বাড়িতে মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন —– )।
জনাব বজলুর রশীদ তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ভোগশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বিশ্বনাথ রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি ও সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। পরবর্তীতে সিলেট মদন মোহন কলেজে বি এ (পাস) কোর্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় এক জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ায় এখানেই পড়ালেখার ইতি টানেন। রাজনীতি সচেতন জনাব বজলুর রশীদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়া কালীন সময়ে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং বিশ্বনাথ থানা ছাত্রলীগ এর প্রতিষ্ঠা কালিন সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি থানা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক সহ একাধিক বার থানা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্ম দক্ষতার কারণে আশির দশকে প্রথমে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে সিলেট জেলা আওয়ামীলীগে অভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক হিসেবে পদায়িত হয়ে আমৃত্যু এ পদে বহাল ছিলেন।
জনাব বজলুর রশীদ থানা আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদ সহ থানা ও জেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল থাকা অবস্থায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সততার সাথে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ‘৬৯ সালের গণঅভ্যুৎত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ সহ ‘৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সর্বোপরি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের সময় আওয়ামীলীগের চরম দুর্দিনেও তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ সময় তিনি কারাবরণ সহ বিভিন্ন রকম হয়রানি ও নির্যাতনের স্বীকার হন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেল- জুলুম, দমন, পীড়ন ও নির্যাতন উপেক্ষা করে প্রচন্ড সাহস ও দক্ষতার সাথে অন্যান্য নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় ভঙ্গুর দলকে পুনর্ঘঠন করেছেন। তৎকালীন সময়ে সামরিক/বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে অনেক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অকাল প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই সৈনিক সব ধরনের লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে তৎকালীন সামরিক সরকারের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দলকে সংঘটিত করতে ভূমিকা রেখেছেন ।
ছাত্র জীবনে পড়ালেখা, রাজনীতি ও খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা পেশার সাথেও জড়িত ছিলেন। তৎকালীন সাপ্তাহিক যুগভেরী ও বাংলার বাণী’র বিশ্বনাথ প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সমাজ সেবায় ও তাঁর অবদান ছিল উল্লেখ করার মত। তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সাথেও জড়িত ছিলেন। দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য, আজ টানা তৃতীয় বারের মত আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, সারা দেশের ন্যায় স্থানীয় আওয়ামীলীগও নেতা কর্মী সমর্থকদের পদ চারনায় ধন্য, কিন্ত আজ সেই দলের কতজন প্রয়াত এই ত্যাগী নেতাকে স্মরণ করছেন, তাঁর অবদান সম্পর্কে জানেন বা জানার চেষ্টা করছেন। চিরকুমার জনাব বজলুর রশীদ ছিলেন এমন একজন কর্মীবান্ধব নেতা, যিনি কোন দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনও বিভাজন তৈরি করেন নাই। দলের নিবেদিত প্রাণ সকল নেতা-কর্মী-সমর্থক, সবাইকে তিনি সমান ভাবে দেখতেন, কখনও দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করতেন না। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদে সাহায্য করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন।সবসময় দলের কর্মী-সমর্থক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেন। আমরা যখন রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখনও দেখেছি, বজলু ভাই বিশ্বনাথ পুরান বাজারের দিলু বাবুর মিষ্টির দোকানে বসে থাকতেন, রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময়, তাঁর কাছে ডেকে নিতেন, হাত ধরে কথা বলে ভাব জমাতেন, চা-মিষ্টি খাওয়াতেন এবং সময় সুযোগ বুঝে ছাত্রলীগ এর সদস্য হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিতেন, দলের কর্মী-সমর্থক বানাতেন। তিনি যাকে টার্গেট করতেন,তাকে দলের কর্মী বানিয়ে ছাড়তেন। অমায়িক ব্যবহার ও মার্জিত আচার-আচরণ এর জন্য তিনি সবাইকে সহজে আপন করে নিতে পারতেন। এই ছিলেন আমাদের সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রয়াত বজলু ভাই। এখন আর আগের মত আদর্শিক রাজনীতির বালাই নেই, প্রয়োজনে যার যখন খুশি দলে যোগদান করে আবার প্রয়োজন ফোরালে নিজ গন্তব্যে চলেও যায়। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে, আগের মত এখন আর সদস্য ফর্ম পূরণ করে দলের কর্মী বানানোর খুব একটা দরকার হয় না। নম্র,ভদ্র, সৎ, নির্লোভ,সদালাপী, অসাম্প্রদায়িক মহৎ গুণাবলী সম্পন্ন কর্মী বান্ধব সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত নেতা জনাব বজলুর রশীদ ছিলেন বিশ্বনাথ এর মাটি ও মানুষের একান্ত আপনজন আমাদের আত্মার আত্মীয়।
মানুষ মরণশীল। কিন্তু মানুষের মৃত্যুর পরও তাঁর ভালকর্মের ফলে জীবিত প্রজন্ম তাকে স্মরণ করে যুগ যুগ ধরে। মরহুম বজলুর রশীদ ও তাদের মধ্যে একজন যিনি স্বল্প আয়ু অর্থাৎ মাত্র ৫০ বছর জীবিত থেকেও এক অসাধারণ কর্মপ্রতিভা ও সৃজনশীলতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের সামনে রেখে গিয়েছেন। আজকে রাজনীতির এই দুর্বৃত্তায়ন কালে জনাব বজলুর রশীদের মত একজন রাজনীতিবিদের বড় প্রয়োজন ছিল। তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই, তাই বজলু ভাইর অ-বর্তমানে তাঁর বিরাট কর্মময় জীবনের বিস্তারিত দিক তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন, দিক নির্দেশনাহীন বিভ্রান্ত এ তরুণ প্রজন্মের কাছে, সত্যিকারের রাজনৈতিক কর্মী বা নেতা তৈরির জন্য। একজন নির্লোভ,আদর্শবান রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
আমি সৎ, অমায়িক ও মহৎ গুণাবলী সম্পন্ন মরহুম জনাব বজলুর রশীদের বিদেহী আত্মার অনন্ত পরকালীন জীবনের চিরশান্তি কামনা করি , মহান আল্লাহ তাকে যেন বেহেস্তের সর্বোচ্চ তম স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন , কায়মন বাক্যে এ প্রার্থনা করি। আমিন। ইয়া রাব্বুল আ’লামিন।
তাজ উদ্দিন আহমদ, ব্যবস্থাপক, প্রাইম ব্যাংক, আম্বরখানা শাখা, সিলেট।