প্রচ্ছদ

নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাজনৈতিক উত্থান যুক্তরাষ্ট্রে

  |  ১৮:২১, নভেম্বর ০৭, ২০২০
www.adarshabarta.com

Manual5 Ad Code

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি, (আমেরিকা) প্রতিনিধি :
বিশ্বব্যাপী সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ব্যাটলগ্রাউন্ডখ্যাত পেনসিলভানিয়ায় পপুলার ভোটে জিতে গেছেন জো বাইডেন। এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২০টি। জয়ের ফলে এখানকার সব ভোট পেয়েছেন জো বাইডেন। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি কাঙ্ক্ষিত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেলেন। এখন পর্যন্ত জো বাইডেনের মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৭৩।

Manual1 Ad Code

অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটর সংখ্যা ২১৪। যদিও এখনো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নেভাদায় ভোট গণনা চলছে। এই তিনটি অঙ্গরাজ্য বাদ দিয়েই ট্রাম্পকে হারালেন বাইডেন।

জো বাইডেন এখন পর্যন্ত পপুলার ভোট পেয়েছেন সাত কোটি ৩০ লাখের বেশি। আমেরিকায় আর কোনো প্রেসিডেন্ট এত মানুষের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হননি। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন প্রায় সাত কোটি ভোট। সেটাও আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট।

দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অনেকদিন থেকেই হোয়াইট হাউসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন বাইডেন। এবার সেই স্বপ্নপূরণ হলো ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের। তাঁর সেইসঙ্গে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কমলা হ্যারিস। বাইডেন আগামী জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

জো বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের স্ক্রানটনে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন বেড়ে ওঠেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারের মধ্যেই। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান।

ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন বাইডেন। পরে তিনি আইনে ডিগ্রি নেন সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে।

১৯৬৬ সালে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন— জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। তাঁর মেয়ে নাওমিও দুর্ঘটনায় মারা যান।

নিলিয়াকে বাইডেন বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর স্বপ্ন সিনেটর হওয়ার। সিনেটর হওয়ার পরের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। নিলিয়াকে হারানোর এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

Manual4 Ad Code

১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর।

১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।

ডেলাওয়ার থেকে মোট ছয়বার সিনেটর নির্বাচিত হন জো বাইডেন। সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেন তিনি।

২০১৫ সালে আবারও প্রিয়জন হারান বাইডেন। মস্তিষ্কের ক্যানসারে বড় ছেলে বো বাইডেনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জো। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার আগেই সরে যান।

Manual6 Ad Code

ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের পর ঘুরে দাঁড়ান জো বাইডেন।

বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টিকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর ওপর।

এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন বাইডেন। বাইডেনের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ওই যুদ্ধে আমেরিকান মারা যায় অল্প সংখ্যক।

এরপর থেকে বাইডেনকে পররাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলচিত্ত বলে তুলে ধরা শুরু হয়।

ওই ভোট নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ার পরবর্তী কয়েক বছর বাইডেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কট্টর অবস্থান দেখাতে শুরু করেন, যেমন বলকান গৃহযুদ্ধে আমেরিকান অবস্থান, ইরাকে বোমা হামলা এবং আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব কায়েমের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশ করেন।

প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন বাইডেন তাতে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন।

Manual5 Ad Code

ইরাক যুদ্ধের পর বাইডেন বামপন্থার দিকে ঝোঁকেন। তিনি ইরাকে আমেরিকান সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দেন।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার পক্ষেও মত তুলে ধরেন।

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code